সাহাবুদ্দিন চুপ্পু রাষ্ট্রপতি : পাবনায় আনন্দের বন্যা
- প্রকাশিত সময় ০১:৩৭:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / 418
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে জাতির পিতার স্নেহধন্য, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনয়ন দিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তাকে রাষ্ট্রপতি ঘোষনা সময়ের ব্যাপার মাত্র। রবিবার সকালে নিবার্চন কমিশনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মনোনয়ন জমা দেওয়ার খবরে পাবনায় বইছে আনন্দের বন্যা। সামাজিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ও সুশীল সমাজের মধ্যে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
শাহাবুদ্দিন চপ্পুকে রাষ্ট্রপ্রতি মনোনয়ন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ডেপুটি স্পীকার শামসুল হক টুকু,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলামা ফারুক প্রিন্স এমপি, মকবুল হোসেন এমপি, আহমেদ ফিরোজ কবীর এমপি, বীরমুক্তিযোদ্ধা নূরুজ্জামান বিশ্বাস এমপি, নাদিরা ইয়াসমিন জলি এমপি, জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, পাবনা পৌরসভা মেয়র শরীফ উদ্দিন প্রধান, পাবনা প্রেস ক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ, সংবাদ পত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল মতীন খান সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, চেম্বার্স অব কমার্স, জেলা আইনজীবি সমিতি, সম্মিত সাংস্কৃতিক জোট, অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরী, সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংগঠন ও ব্যাক্তি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই অভিনন্দন বার্তা দিয়েছেন।
সংসদে আওয়ামী লীগর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুই হচ্ছেন নতুন রাষ্ট্রপতি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রার্থী না দেওয়ার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছে।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মহামান্য রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বাড়তে থাকে নেতাকর্মীদের ভীড়। শুরু হয় মিষ্টি মুখ করানো ও আনন্দ উল্লাস ও তাৎক্ষণিক আনন্দ মিছিল। জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকমীর্রা তাৎক্ষণিক পথচারী ও রিকশাচালকদের মধ্যে মিষ্টি মুখ করান।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল-এর নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল বের করেন। শহরের রাধানগর মজুমদার একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি সোহেল হাসান শাহীনের নেতৃত্ব স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহনে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক সমূহ প্রদক্ষিণ করে।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
মোহা. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শরফুদ্দিন আনছারী ব্যবসায়ী ও মাতা খায়রুন্নেসা গৃহিনী ছিলেন। ৪ ভাই ও ৬ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি পাবনা শহরের পূর্বতন গান্ধি বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করে রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করার পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন।
পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং অধ্যক্ষ আব্দুল গণির অনুপ্রেরণায় পাবনা শহিদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর আব্দুর রব বগা মিয়ার মাধ্যমে বগা মিয়ার বাড়ীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সাথে ছাত্রজীবনে পরিচয় হয়েছিল শাহাবুদ্দিন চপপুর।
ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের তিন বার (১৯৭১,৭২,৭৩ সাল) সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৬৭ সালে ছাত্র আন্দোলন, ভুট্রা আন্দোলন, গণআন্দোলন ছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী। ভারতের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা জেলা সুজানগর উপজেলা ও সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে সামরিক আইন বলে গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। তিন বছর কারাভোগ করেন তিনি। তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য।
শুরুতে তিনি পাবনা শহীদ বুলবুল কলেজে অধ্যাপনা করেন। পাবনা আমিন উদ্দিন আইন কলেজ থেকে ল পাশ করে পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপপু আইন পেশায় যোগ দেন এবং ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এই পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পরে ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন সাহাবুদ্দিন চুপপু। সাহাবুদ্দিন চুপ্ধসঢ়;পু ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব নির্বাচিত হন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। পেশাগত জীবনের প্রথম দিকে দৈনিক বাংলার বানী পত্রিকাতে সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি পাবনা প্রেসক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির জীবন সদস্য।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়। যাতে হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন করেন, যার প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের অন্যতম কান্ডারি হিসেবে পরিচিত সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ঢাকাস্থ পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতিও।
দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংকের কথিত পদ্মাসেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু অভিযোগটি মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণে সমর্থ হন। তার প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদন কানাডা কোর্ট কর্তৃক সমর্থিত হয়।
১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর পাবনা শহরের দিলালপুর নিবাসী আলী আকতারের জ্যেষ্ঠ কন্যা ড. রেবেকা সুলতানার সঙ্গে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ড. রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্মসচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান। তিনি বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্চ প্রোগ্রাম বিভাগের অধ্যাপক এবং ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। চুপ্পু-রেবেকা দম্পতির একমাত্র সন্তান মোহা: আরশাদ আদনান (রনি) দেশে ও বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে প্রাইম ব্যাংকের উচ্চপদে কর্মরত রয়েছেন।
রবিবার সকালে রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের খবর পাবনায় জানাজানি হলে শহরবাসীর মুখে মুখে বিষয়টি প্রচার হতে থাকে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম বলেন, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আমাদের অহংকার ও গর্বের। তিনি একজন নিরহংকার ও সজ্জন মানুষ। এমন একজন ব্যক্তিত্বকে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দেওয়ায় আমরা খুব আনন্দিত। একজন যোগ্য মানুষকে তাঁর যোগ্য সম্মাণ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এমন একজন সৎ সর্বজন গ্রহনযোগ্য ব্যাক্তিকে দেশের রাষ্ট্রপতি মনোনীত করায় পাবনাবাসী আবেগ আপ্লুত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। এমন সংবাদে শুধু আমরাই নয় সমস্ত পাবনাবাসী আনন্দিত। পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আসম আবদুর রহিম বলেন, এমন সংবাদে আমরা আনন্দিত, সত্যেই দীর্ঘদিন পর পাবনাবাসী রাষ্ট্রপতি পলে। চুপপুকে মনোনয়ন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের বাল্যবন্ধু ও বীরমুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি বলেন, তার এই প্রাপ্তি আমার জীবনের সেরা আনন্দ। এর চাইতে খুশি কোনো দিন হইনি। ওর এই অর্জনে বন্ধু হিসেবে ও পাবনাবাসী হিসেবে আমি গর্বিত।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক হাবিবুর রহমান স্বপন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন চুপ্পু বৃহত্তর পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্নাঢ্য জীবনের অধিকারী এমন ব্যাক্তিকে রাষ্ট্রপতির মতো দায়িত্বশীল পদে দেওয়ায় আমরা আন্দতি।
পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন, খবরটি জানার পর আমরা অনেকটাই অবেগ আপ্লুত। পাবনা প্রেস ক্লাবের সদস্য রাষ্ট্রপ্রতি হচ্ছে এই প্রাপ্তি পুরো জেলাবাসীর প্রাপ্তি। আমরা আনন্দিত ও গর্বিত।
লিখা: রফিকুল ইসলাম সুইট, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)