ঢাকা ০৪:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

সিরাজগঞ্জে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মানবিক ভুমিকা পালন করছে

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০২:৩৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই ২০২০
  • / 167

চলমান করোনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ নিরলস ভাবে কাজ করছে। মহামারি রোধে জীবনের ঝুকি থাকা সত্বেও নিজেদের দায়িত্ব থেকে কোন প্রকার পিছু হটেনি পুলিশ। তাইতো দেশ ও মানুষের কাজে আত্মনিয়োগ করা পুলিশ আজ সাধারণ মানুষের নিকট সম্মানের পাত্র।

কর্তব্যর কাছে সম্পর্ক বলে কিছু নেই, সে যত আপন জনই হোক। বাড়ির কর্তা যেমন তার পুরো পরিবারকে নিরাপদ রাখতে সর্বচ্চ চেষ্টা করেন, তেমনি দেশ এবং দেশের মানুষকে ভালো রাখতে আমরা পুলিশ অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে কাজ করছি। এতে ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতেই পারে। এভাবেই একান্ত আলাপচারিতায় কথা গুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বিপিএম।

তারমতে, বিশ্বব্যাপী করোনা মোকাবেলায় প্রতিটি দেশের প্রধাণরা যেমন চেষ্টার কোন ত্রুটি করছেনা, তেমনি প্রতিটি দেশের পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে কোন প্রকার কার্পণ্য করেনি। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম না। বৈশ্বিক করোনা মোকাবেলায় যাকে যেখানে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে প্রতিটি পুলিশ সদস্য হাসিমুখে সেখানেই সে দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছে এবং করে যাচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বিপিএম জানান, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর আমি সিরাজগঞ্জে যোগদান করি। জানুয়ারি মাসে চীনের উহানসহ সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরে। মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনা রোগি চিহ্নিত হলে সরকার সারাদেশে অঘোষিত ভাবে লকডাউন করতে বাধ্য হয়।

কিন্তু পোষাক শিল্প মালিকদের সিদ্ধান্তহীনতার কারনে একাধিকবার পোষাক কর্মিরা ঢাকায় যাতায়াত করার কারনে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় করোনার সংক্রামণ ছড়িয়ে পরে। তারপরও সিরাজগঞ্জকে দীর্ঘ সময় নিরাপদ এবং করোনামুক্ত জেলা হিসেবে রাখতে পারলেও ঈদ মার্কেটে কিছু দিনের জন্য খোলা রাখায় বর্তমানে তা আর নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয়নি। তবে তারপরও দেশের অন্যান্য জেলার চাইতে সিরাজগঞ্জ এখনও অনেকটা ভালো অবস্থানে আছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তারমতে, করোনা যখন মহামারি আকারে রূপ নেয়, ঠিক সেই সময় আমরা মানুষকে স্বাস্থ্য বিধি রক্ষায় ঘনঘন হাত ধোয়া, মাস্কপড়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা সহ সকল বাড়ি ও সরকাবি-বেসরকারি ভবনে প্রবেশে পরিস্কার পরিচ্ছনতা নিশ্চিত করতে জেলার প্রতিটি থানাতে মাইকিংসহ লিফলেট বিতরণ করেছি। একই সাথে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে করোনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেছি।

শুধু তাইনয়, সরকারি নির্দেশে মানুষকে লকডাউনে ঘরে থাকতে অনুরোধ করেছি অনেক সময় বাধ্য করতে বাধ্য হয়েছি। যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষাসহ দোকানপাঠ খোলা ও বন্ধ করতে সরকারি বিধি অনুসরণ করাতে চেষ্টা করেছি। আবার সরকার যখন সীমিত আকারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো সচল করতে বললো আমরা নিয়ন্ত্রন করতে সহযোগিতা করেছি।

শুধুু তাই নয় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে উত্তর ও দক্ষিনের জেলাগুলোতে মানুষের অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে বিবিন্ন স্থানে চেকপোষ্ট বসিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করেছি। একই সাথে দেশের বাহিরে এবং ঢাকা, নারায়গঞ্জসহ অন্যান্য জেলা থেকে আসা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ব্যক্তিকে আমরা হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে বাধ্য করেছি। ৫ হাজার স্টীকার ছাপিয়ে ঐসকল বাড়িগুলোকে নিয়ম মানাসহ অবাধ চলাচল রোধ করেছি। প্রতিবেশীদের ভাল রাখতে লাল পতাকায় চিহ্নিত করে দিয়েছি ঐসকল বাড়ি।

তিনি সম্প্রতি জেলার এনায়েতপুর থানা এলাকায় যমুনা নদীতে নৌকা ডুবির ঘটনায় ৫ দিন পুলিশকে দিনরাত কাজ করতে হয়েছে। সেখানে শত শত মানুষের জনসমাগম হয়। যেকারণে ঐ থানার ১৫ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়। ইনশাহাাল্লাহ তারা এখন অনেকটা ভালো আমি নিয়মিত তাদের এবং তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিচ্ছি।

তিনি আরো জানান, মার্চ মাসের ৮ তারিখ থেকে এপর্যন্ত জেলায় মোট ৫৯ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর ইন্তেকাল করেছেন। তবে আশার কথা হলো সবাই এখন ভালো ও সুস্থ্য আছে।

জনগণের সাথে নিবিড় ভাবে কাজ করতে এবং পুলিশের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রত্যেককে পিপিই, হ্যান্ড গ্লোভস, ৬টি করে মাস্ক এবং ভিটামিন সি প্যাকেট, জিঙ্ক ট্যাবলয়েডসহ পর্যাপ্ত ফল আমরা সরবরাহ করেছি। এসকল সামগ্রীগুলো সরকার, বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও নিজেদের অর্থায়নে আমরা ব্যবস্থা করেছি যাতে করে পুলিশ জনগণের পাশে ২৪ ঘন্টা নিয়োজিত থেকে কাজ করতে পারে।

৫৯ জন করোনায় আক্রান্ত পুলিশের সুস্থ্যতা কামনা করে বলেন, জেলায় আমার কোন পুলিশ সদস্য একারনে মনোবল হারায়নি বরং করোনায় বিজয়ী হওয়া যায় এমনটি ভেবে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

করোনায় ত্রাণ বিতরণ বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি আমরা দু:স্থ নয়, অভাবগ্রস্থ নয় কিন্তু করোনায় দুর্দশাগ্রস্থ ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সেই সকল ২ হাজার পরিবারকে গোপনে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই ব্যক্তিগুলো সমাজে সম্মানীত কিন্তু করোনায় তারা দুর্দশাগ্রস্থ হলেও তারা কারো কাছে চাইতে পারেনি, সরকারি ত্রাণের তালিকায় নাম লেখাতে পারেনি। আমরা সেই সকল মানুষকে গোপনে তাদের ত্রাণসহায়তা করেছি। যেটা আমরা কখনও প্রচারে করিনি।

পুলিশের নতুন আইজি’র উদাহরণ দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ভিডিও কনফানেন্সের মাধ্যমে তাদের বলা হয়েছে যে, বর্তমান করোনাকালে পুলিশের ভুমিকা মানুষের মন জয় করেছে। পুলিশের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে মানুষকে সেবা প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। আগে মানুষ সেবার জন্য থানায় আসতো কিন্তু পুলিশ এখন সেবা দানের জন্য মানুষের নিকট যাবে। এজন্য তিনি প্রতিটি জেলায় ইতোমধ্যে বিট পুলিশিং নামে একটি নতুন কার্যক্রম চালু হবে বলেও আশা করেন। যেখানে প্রতিটি পৌর এলাকার ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নে একজন করে পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করে মাসুষের সেবা করবে।

তিনি পুলিশের সুশীল ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়ে বলেন একজন সম্মানীত নাগরিক পুলিশের নিকট যে ব্যবহার প্রত্যাশা করেন ঠিক সেই ব্যবহার পুলিশ প্রদান করবে এমনটা বাস্তবায়নের জন্য তিনি সিরাজগঞ্জে কাজ করছেন, যাতে দ্রুতই মানুষ এর সুফল পাবে।

করোনায় মৃত ব্যক্তির জানাযা ও দাফন বিষয়ে তিনি বলেন, জেলায় ৫ জন মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিলো। সেখানে আমরা পুলিশ নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে জানাযা এবং দাফন করেছি। সেই সাথে আমরা স্থানীয়দের বোঝাতে পেরেছি সামাজিক দুরত্ব মেনে এবং নিয়ম অনুযায়ি তাদের দাফন সম্পন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। বিষয়টি এখন প্রতিটি এলাকার মানুষ বুঝতে পারছে এবং তারা পুলিশকে সহযোগিতা করছে।

করোনাকালে বাহিরে ঘোরাঘুরি বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করছি, কিন্তু মানুষ পুলিশ দেখলে দৌড় দিচ্ছেন এবং পুলিশ চলে গেলে বাড়ির বাহিরে বের হচ্ছে, এইযে পুলিশকে ফাঁকী দিচ্ছেন এটা পুলিশকে না নিজেই নিজকে ফাঁকী দিচ্ছেন, পরিবারের সদস্যকে ঠকাচ্ছেন। এতে করে নিজের পরিবার, সন্তানকে ঝুকিতে ফেলছেন। তাই বলি আপনি নিজে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখবেন? নাকি আপনি ও আপনার নিজ পরিবারকে কবরমুখি করবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতে হবে।

তিনি এসময় একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাহিরে বের না হওয়ার জন্য সিরাজগঞ্জ বাসির প্রতি অনুরোধ করেন। তিনি মনে করেন, এই ম্যাসেসজটি যদি প্রতিটি মানুষ অনুধাবন করে তাহলে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারবো এবং এক সময় আমরা এ থেকে পরিত্রাণ পাবো।

আমিনুল ইসলাম
লেখক, সাংবাদিক।

সিরাজগঞ্জে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মানবিক ভুমিকা পালন করছে

প্রকাশিত সময় ০২:৩৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই ২০২০

চলমান করোনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ নিরলস ভাবে কাজ করছে। মহামারি রোধে জীবনের ঝুকি থাকা সত্বেও নিজেদের দায়িত্ব থেকে কোন প্রকার পিছু হটেনি পুলিশ। তাইতো দেশ ও মানুষের কাজে আত্মনিয়োগ করা পুলিশ আজ সাধারণ মানুষের নিকট সম্মানের পাত্র।

কর্তব্যর কাছে সম্পর্ক বলে কিছু নেই, সে যত আপন জনই হোক। বাড়ির কর্তা যেমন তার পুরো পরিবারকে নিরাপদ রাখতে সর্বচ্চ চেষ্টা করেন, তেমনি দেশ এবং দেশের মানুষকে ভালো রাখতে আমরা পুলিশ অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে কাজ করছি। এতে ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতেই পারে। এভাবেই একান্ত আলাপচারিতায় কথা গুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বিপিএম।

তারমতে, বিশ্বব্যাপী করোনা মোকাবেলায় প্রতিটি দেশের প্রধাণরা যেমন চেষ্টার কোন ত্রুটি করছেনা, তেমনি প্রতিটি দেশের পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে কোন প্রকার কার্পণ্য করেনি। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম না। বৈশ্বিক করোনা মোকাবেলায় যাকে যেখানে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে প্রতিটি পুলিশ সদস্য হাসিমুখে সেখানেই সে দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছে এবং করে যাচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বিপিএম জানান, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর আমি সিরাজগঞ্জে যোগদান করি। জানুয়ারি মাসে চীনের উহানসহ সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরে। মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনা রোগি চিহ্নিত হলে সরকার সারাদেশে অঘোষিত ভাবে লকডাউন করতে বাধ্য হয়।

কিন্তু পোষাক শিল্প মালিকদের সিদ্ধান্তহীনতার কারনে একাধিকবার পোষাক কর্মিরা ঢাকায় যাতায়াত করার কারনে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় করোনার সংক্রামণ ছড়িয়ে পরে। তারপরও সিরাজগঞ্জকে দীর্ঘ সময় নিরাপদ এবং করোনামুক্ত জেলা হিসেবে রাখতে পারলেও ঈদ মার্কেটে কিছু দিনের জন্য খোলা রাখায় বর্তমানে তা আর নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয়নি। তবে তারপরও দেশের অন্যান্য জেলার চাইতে সিরাজগঞ্জ এখনও অনেকটা ভালো অবস্থানে আছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তারমতে, করোনা যখন মহামারি আকারে রূপ নেয়, ঠিক সেই সময় আমরা মানুষকে স্বাস্থ্য বিধি রক্ষায় ঘনঘন হাত ধোয়া, মাস্কপড়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা সহ সকল বাড়ি ও সরকাবি-বেসরকারি ভবনে প্রবেশে পরিস্কার পরিচ্ছনতা নিশ্চিত করতে জেলার প্রতিটি থানাতে মাইকিংসহ লিফলেট বিতরণ করেছি। একই সাথে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে করোনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেছি।

শুধু তাইনয়, সরকারি নির্দেশে মানুষকে লকডাউনে ঘরে থাকতে অনুরোধ করেছি অনেক সময় বাধ্য করতে বাধ্য হয়েছি। যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষাসহ দোকানপাঠ খোলা ও বন্ধ করতে সরকারি বিধি অনুসরণ করাতে চেষ্টা করেছি। আবার সরকার যখন সীমিত আকারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো সচল করতে বললো আমরা নিয়ন্ত্রন করতে সহযোগিতা করেছি।

শুধুু তাই নয় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে উত্তর ও দক্ষিনের জেলাগুলোতে মানুষের অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে বিবিন্ন স্থানে চেকপোষ্ট বসিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করেছি। একই সাথে দেশের বাহিরে এবং ঢাকা, নারায়গঞ্জসহ অন্যান্য জেলা থেকে আসা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ব্যক্তিকে আমরা হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে বাধ্য করেছি। ৫ হাজার স্টীকার ছাপিয়ে ঐসকল বাড়িগুলোকে নিয়ম মানাসহ অবাধ চলাচল রোধ করেছি। প্রতিবেশীদের ভাল রাখতে লাল পতাকায় চিহ্নিত করে দিয়েছি ঐসকল বাড়ি।

তিনি সম্প্রতি জেলার এনায়েতপুর থানা এলাকায় যমুনা নদীতে নৌকা ডুবির ঘটনায় ৫ দিন পুলিশকে দিনরাত কাজ করতে হয়েছে। সেখানে শত শত মানুষের জনসমাগম হয়। যেকারণে ঐ থানার ১৫ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়। ইনশাহাাল্লাহ তারা এখন অনেকটা ভালো আমি নিয়মিত তাদের এবং তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিচ্ছি।

তিনি আরো জানান, মার্চ মাসের ৮ তারিখ থেকে এপর্যন্ত জেলায় মোট ৫৯ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর ইন্তেকাল করেছেন। তবে আশার কথা হলো সবাই এখন ভালো ও সুস্থ্য আছে।

জনগণের সাথে নিবিড় ভাবে কাজ করতে এবং পুলিশের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রত্যেককে পিপিই, হ্যান্ড গ্লোভস, ৬টি করে মাস্ক এবং ভিটামিন সি প্যাকেট, জিঙ্ক ট্যাবলয়েডসহ পর্যাপ্ত ফল আমরা সরবরাহ করেছি। এসকল সামগ্রীগুলো সরকার, বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও নিজেদের অর্থায়নে আমরা ব্যবস্থা করেছি যাতে করে পুলিশ জনগণের পাশে ২৪ ঘন্টা নিয়োজিত থেকে কাজ করতে পারে।

৫৯ জন করোনায় আক্রান্ত পুলিশের সুস্থ্যতা কামনা করে বলেন, জেলায় আমার কোন পুলিশ সদস্য একারনে মনোবল হারায়নি বরং করোনায় বিজয়ী হওয়া যায় এমনটি ভেবে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

করোনায় ত্রাণ বিতরণ বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি আমরা দু:স্থ নয়, অভাবগ্রস্থ নয় কিন্তু করোনায় দুর্দশাগ্রস্থ ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সেই সকল ২ হাজার পরিবারকে গোপনে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই ব্যক্তিগুলো সমাজে সম্মানীত কিন্তু করোনায় তারা দুর্দশাগ্রস্থ হলেও তারা কারো কাছে চাইতে পারেনি, সরকারি ত্রাণের তালিকায় নাম লেখাতে পারেনি। আমরা সেই সকল মানুষকে গোপনে তাদের ত্রাণসহায়তা করেছি। যেটা আমরা কখনও প্রচারে করিনি।

পুলিশের নতুন আইজি’র উদাহরণ দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ভিডিও কনফানেন্সের মাধ্যমে তাদের বলা হয়েছে যে, বর্তমান করোনাকালে পুলিশের ভুমিকা মানুষের মন জয় করেছে। পুলিশের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে মানুষকে সেবা প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। আগে মানুষ সেবার জন্য থানায় আসতো কিন্তু পুলিশ এখন সেবা দানের জন্য মানুষের নিকট যাবে। এজন্য তিনি প্রতিটি জেলায় ইতোমধ্যে বিট পুলিশিং নামে একটি নতুন কার্যক্রম চালু হবে বলেও আশা করেন। যেখানে প্রতিটি পৌর এলাকার ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নে একজন করে পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করে মাসুষের সেবা করবে।

তিনি পুলিশের সুশীল ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়ে বলেন একজন সম্মানীত নাগরিক পুলিশের নিকট যে ব্যবহার প্রত্যাশা করেন ঠিক সেই ব্যবহার পুলিশ প্রদান করবে এমনটা বাস্তবায়নের জন্য তিনি সিরাজগঞ্জে কাজ করছেন, যাতে দ্রুতই মানুষ এর সুফল পাবে।

করোনায় মৃত ব্যক্তির জানাযা ও দাফন বিষয়ে তিনি বলেন, জেলায় ৫ জন মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিলো। সেখানে আমরা পুলিশ নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে জানাযা এবং দাফন করেছি। সেই সাথে আমরা স্থানীয়দের বোঝাতে পেরেছি সামাজিক দুরত্ব মেনে এবং নিয়ম অনুযায়ি তাদের দাফন সম্পন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। বিষয়টি এখন প্রতিটি এলাকার মানুষ বুঝতে পারছে এবং তারা পুলিশকে সহযোগিতা করছে।

করোনাকালে বাহিরে ঘোরাঘুরি বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করছি, কিন্তু মানুষ পুলিশ দেখলে দৌড় দিচ্ছেন এবং পুলিশ চলে গেলে বাড়ির বাহিরে বের হচ্ছে, এইযে পুলিশকে ফাঁকী দিচ্ছেন এটা পুলিশকে না নিজেই নিজকে ফাঁকী দিচ্ছেন, পরিবারের সদস্যকে ঠকাচ্ছেন। এতে করে নিজের পরিবার, সন্তানকে ঝুকিতে ফেলছেন। তাই বলি আপনি নিজে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখবেন? নাকি আপনি ও আপনার নিজ পরিবারকে কবরমুখি করবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতে হবে।

তিনি এসময় একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাহিরে বের না হওয়ার জন্য সিরাজগঞ্জ বাসির প্রতি অনুরোধ করেন। তিনি মনে করেন, এই ম্যাসেসজটি যদি প্রতিটি মানুষ অনুধাবন করে তাহলে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারবো এবং এক সময় আমরা এ থেকে পরিত্রাণ পাবো।

আমিনুল ইসলাম
লেখক, সাংবাদিক।