পদ্মানদীর বালু মহালে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর নৌ-পুলিশের ওসি স্ট্যান্ড রিলিজ

- প্রকাশিত সময় ০৪:১৬:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
- / 4
পদ্মানদীর লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুর মৌজার বালু মহালে সেনাবাহিনী ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে সরকারিভাবে বৈধতা গ্রহনকারী ইজারাদারের লোকজনকে অস্ত্র, মাদকসহ আটক ও বালু বিক্রয়ের নগদ টাকা জব্দ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুটি মামলা হয়েছে।
অভিযানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা উদ্ধার হওয়া বালু মহালের হিসেবের খাতায় পাওয়া চাঁদা গ্রহনকারী হিসেবে নাটোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়, নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়, লালপুর পুলিশ সার্কেল ও লালপুর থানা পুলিশসহ লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে।
এসকল ঘটনার প্রেক্ষিতে নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি এবং ফাঁড়ির আইসি মো. ফিরোজ উদ্দিনকে ঘটনার রাতেই স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।
পদ্মানদীর দিয়ার বাহাদুরপুর বালু মহাল, লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ ফাঁড়ি ও মামলা সূত্রে জানা যায়, পদ্মানদীর লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুর বালু মহালে সরকারে ডাকে ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা দর দিয়ে বালু উত্তোলনের অনুমোদন পান নাটোর বাগাতিপাড়ার মো. শহিদুল ইসলাম মোল্লা। অপরদিকে ঈশ্বরদীর সাঁড়া এলাকায় বালু উত্তোলন করছিলেন উপজেলা যুবদলের আহবায়ক সুলতান আলি বিশ্বাস টনি। এনিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে মাঝেমধ্যেই হামলা, ভাংচুর ও মামলার ঘটনায় উত্তেজনা চলে আসছিল।
গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নাটোর থেকে সেনা ও পুলিশ এবং পাবনা থেকে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা দিয়ার বাহাদুরপুর চরে দিনভর অভিযান চালায়। অভিযানে বৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী মেসার্স মোল্লা টেডার্সের মালিক শহিদুল ইসলাম মোল্লার দুইজন লোককে আটক করে।
আটককৃতরা হলেন ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের আড়মবাড়িয়ার মনজুরুল ইসলামের ছেলে মো. আশরাফুল ইসলাম বাপ্পী (২৬), কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার দক্ষিণ ভবানীপুর গ্রামের মৃত আজিজুলের ছেলে মেহফুজুর রহমান সোহাগ (৩৮)। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা লালপুরের কাইগীমারীর চর এলাকার ভাষানের ছেলে মো. ইদ্রিস (৩০) বাড়িতে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে। তারা দিয়ার বাহাদুরপুর বালু মহালের শ্রমিক।
এবিষয়ে লালপুরের দিয়ার বাহাদুর বালু মহালের বৈধ ইজাদার মেসার্স মোল্লা টেডার্সের মালিক শহিদুল ইসলাম মোল্লা বলেন, আমি সরকারি ডাকে যোগদান করে সবোর্চ্চ দরদাতা হিসেবে সরকারী কোষাগারে ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছি। সেখানে সেনা ও পুলিশ বাহিনী অভিযান চালিয়ে আমার দুইজন লোককে আটক করেছে। বালু বিক্রয়ের ১২ লাখ টাকা জব্দ করেছে। এটা খুবই অন্যায় ও নিন্দনীয়। বৈধ বালু মহালে সেনাবাহিনীর অভিযান একটি পরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্র বলেও মন্তব্য করেছেন ইজারদার শহিদুল।
সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হওয়া নথিপত্র দেওয়া হয়েছে গণমাধ্যমের নিকট। সেইসব নথিপত্র ঘেটে দেখা যায়, বৈধভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা দিয়ে বালু উত্তোলন করতেও ইজারদারকে প্রতিটি নৌকার জন্য ৩০০ টাকা হারে দৈনিক দিতে হয় গড়ে ৩০ হাজার টাকা। মাসিক প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। পাবনা জেলা প্রশাসককে দিতে হয় এক লাখ টাকা, প্রতিদিন পুলিশের বড়াইগ্রাম সার্কেল পেয়েছেন ২৫ হাজার টাকা ও দুই থানা বাবদ এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া বিভিন্ন মহলে আর্থিক সহযোগিতা করার তথ্য রয়েছে।
লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. সজল ইসলাম বলেন, পদ্মানদীর লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুর বালু মহালে অভিযানের ঘটনায় অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এই দুই মামলায় তিনজন নামীয় ও অজ্ঞাত ৮/১০ জনকে আসামী করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত দুইজনকে ওই দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে লালপুর থানার মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
নৌ-পুলিশ সুপার রাজশাহী বিএম নুরুজ্জামান বলেন, পদ্মানদীর লালপুুর দিয়ার বাহাদুরপুর চরের ঘটনায় গণমাধ্যমে নাটোর জেলা প্রশাসক, নাটোর পুলিশ সুপার, থানা পুলিশ ও লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আইসি বিরুদ্ধে অর্থগ্রহনের যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। এই সঙ্গে ফাঁড়ির আইসি মো. ফিরোজ উদ্দিনকে ঘটনার রাতেই প্রত্যাহার করে ঢাকা নৌ পুলিশ হেডকোয়াটারে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নাটোর পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ আমজাদ হোসেন বলেন, বালু মহালের ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ ক্রাইম এন্ড অপস মো. একরামুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিটি আগামী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন। প্রতিবেদন দেখে পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
বালু মহাল থেকে জেলা প্রশাসকের টাকা নেওয়ার সত্যতা জানতে নাটোর জেলা প্রশাসকের ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল ফোন নম্বরের একাধিকবার রিং দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিফিস করেননি। এই জন্য তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে ওই বালু মহালে অভিযানের বিষয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির মধ্যে তীব্র্র সমালচনা শুরু হয়েছে।