ঢাকা ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

নির্দোষ প্রমাণিত টিটিই শফিকুল : যে হৃদয় সততা লালন করে

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৫:০২:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০২২
  • / 100

ভ্রাম্যমাণ টিকিট এগজামিনার

রেলের টিটিই শফিকুল ইসলাম

সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী
প্রকাশিত: ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, ১৯ মে ২০২২

তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত টিটিই শফিকুল : যে হৃদয় সততা লালন করে

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গড়াই নদীর পাশে ছোট্ট একটি গ্রাম সারুটিয়া। যেখানে এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এ গ্রামের সারল্য ও কলুষতাহীন প্রকৃতির মাঝেই বেড়ে উঠেছেন শফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি কর্মনিষ্ঠা ও সততার জন্য আলোচনায় আসেন রেলের এই ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)।

নিভৃত পল্লির হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়ে অভাব-অনটনকে নিত্যসঙ্গী করে বেড়ে ওঠা এই মানুষটি আপাদমস্তক সৎ। কিন্তু তাঁর এই সততা এক দিনে তৈরি হয়নি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় গ্রামে তাঁর এক শিক্ষক ছিলেন রবিঠাকুর। তিনি পড়ানোর সময় শফিকুলকে সৎ থাকার দীক্ষা দেন। হতদরিদ্র পরিবারের নিরক্ষর বাবা রজব আলী বিশ্বাস ও মা শুকুরুন নেছা তাঁকে বলতেন, ‘অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবি না, সৎ থাকবি, এতেই তুই ভালো থাকবি।’

শিক্ষক ও বাবা-মায়ের এই সৎ থাকার মন্ত্র হৃদয়ে ধারণ করেছেন তিনি। কখনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। কখনও কোনো ক্ষেত্রে অসৎ পথ অবলম্বন করেননি।

প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে তিনি সব সময় প্রথম স্থানেই থেকেছেন। সারুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেমন সব শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন, তেমনি বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সাতটি বিষয়ে লেটার নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। দারিদ্র্যের কারণে এসএসসি পাস করার পর তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে এলএলবি পাস করে চাকরি পান রেলের টিসি গ্রেড-২ পদে।

শৈলকুপার সারুটিয়া গ্রামে বেড়ে ওঠা মানুষটি চাকরির সুবাদে বসবাস করেন পাবনার ঈশ্বরদী পৌর এলাকার গোরস্তানপাড়ার একটি ভাড়া বাড়িতে। তাঁর গ্রামের বাড়িতে সম্পত্তি বলতে আছে মাত্র ১০ শতাংশ জমি। বাবা-মায়ের বসবাস ভাঙা টিনের ঘরে।
ঈশ্বরদীর ভাড়া বাড়িতে বসবাস করলেও সেখানে নেই ভালো কোনো আসবাবপত্র। ঘরে গোটা দুয়েক চেয়ার, একটা আলনা আর শোবার জন্য একটি খাট। রেলওয়েতে টিটিই পদে চাকরি করলেও সৎভাবে জীবনযাপনের কারণে এখনও তাকে মাঝেমধ্যেই বন্ধুদের কাছে টাকা ধার করতে হয়।

তাঁর কয়েকজন এলাকাবাসী, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। গত সোমবার রাতে তাঁর সঙ্গে তাঁর ভাড়া বাসায় কথা হয়।

শফিকুল বলছিলেন, ‘আমি প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করে সরকারের ঘরে জমা দিই। এ টাকা রাজস্ব আয়ের, এ টাকা দেশের, সুযোগ থাকলেও আমি এ টাকা পকেটস্থ করি না। ছোটবেলায় বাবা-মা এবং আমার শিক্ষাগুরু রবিঠাকুর যে শিক্ষা দিয়েছেন, তা এখনও লালন করি।’

তাঁর ভাষ্য, তিনি যা বেতন পান তা দিয়ে হিসাব করে বাবা-মায়ের জন্য, পরিবারের জন্য যতটুকু করা যায় তা করেন। এতেই তার সুখ।

তার বাবা রজব আলী মোবাইল ফোনে বলেন, অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে ছেলেকে পড়ালেখা করানোর সামর্থ্য তাঁর ছিল না। ছেলে প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেই জুগিয়েছে। তাঁর মতো অক্ষরজ্ঞানহীন বাবার আদেশে তাঁর ছেলে যেভাবে সৎভাবে জীবনযাপন করে এতে তিনি খুশি।

‘ও আমার খুব ভালো বন্ধু। ও কোনো অন্যায় করে না, অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনের অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে সৎভাবে জীবনযাপন করে। ওকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি।’ মোবাইল ফোনে কথাগুলো বলছিলেন শফিকুলের ছেলেবেলার বন্ধু বাশারুল আলম, যিনি ঢাকায় গাড়ি চালকের চাকরি করেন।

বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তবারক হোসেন তোতা তাঁর স্মৃতি হাতড়ান- ‘ছোটবেলায় শফিকুল আমার কাছে ইংরেজি শিখত। তার মেধা ছিল। চারিত্রিক গুণের মধ্যে ছিল সততা। ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত সে তা ধরে রেখেছে।’

শফিকুলের চাচা লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, ওর সততার জন্য তিনি গর্ব অনুভব করেন। বলেন, ‘দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে ও সবার বড়। খুব কষ্ট করে লেখাপড়া শিখে বিনা পয়সায় রেলে চাকরি পেয়েছে।’

‘গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও তিনি যে সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাতে ইউনিয়নবাসী হিসেবে গর্বে আমাদের মাথা উঁচু হয়ে গেছে।’ বলছিলেন শৈলকুপার সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুন।

গত ৫ মে রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর তিন আত্মীয় বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করায় ওই তিন যাত্রীকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করেন টিটিই শফিকুল। এজন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে গত সোমবার তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন।

সূত্র/লিংক: দৈনিক সমকাল

 আরও পড়ুনঃ

 আরও পড়ুনঃ

নির্দোষ প্রমাণিত টিটিই শফিকুল : যে হৃদয় সততা লালন করে

প্রকাশিত সময় ০৫:০২:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০২২
রেলের টিটিই শফিকুল ইসলাম

সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী
প্রকাশিত: ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, ১৯ মে ২০২২

তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত টিটিই শফিকুল : যে হৃদয় সততা লালন করে

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গড়াই নদীর পাশে ছোট্ট একটি গ্রাম সারুটিয়া। যেখানে এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এ গ্রামের সারল্য ও কলুষতাহীন প্রকৃতির মাঝেই বেড়ে উঠেছেন শফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি কর্মনিষ্ঠা ও সততার জন্য আলোচনায় আসেন রেলের এই ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)।

নিভৃত পল্লির হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়ে অভাব-অনটনকে নিত্যসঙ্গী করে বেড়ে ওঠা এই মানুষটি আপাদমস্তক সৎ। কিন্তু তাঁর এই সততা এক দিনে তৈরি হয়নি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় গ্রামে তাঁর এক শিক্ষক ছিলেন রবিঠাকুর। তিনি পড়ানোর সময় শফিকুলকে সৎ থাকার দীক্ষা দেন। হতদরিদ্র পরিবারের নিরক্ষর বাবা রজব আলী বিশ্বাস ও মা শুকুরুন নেছা তাঁকে বলতেন, ‘অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবি না, সৎ থাকবি, এতেই তুই ভালো থাকবি।’

শিক্ষক ও বাবা-মায়ের এই সৎ থাকার মন্ত্র হৃদয়ে ধারণ করেছেন তিনি। কখনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। কখনও কোনো ক্ষেত্রে অসৎ পথ অবলম্বন করেননি।

প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে তিনি সব সময় প্রথম স্থানেই থেকেছেন। সারুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেমন সব শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন, তেমনি বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সাতটি বিষয়ে লেটার নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। দারিদ্র্যের কারণে এসএসসি পাস করার পর তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে এলএলবি পাস করে চাকরি পান রেলের টিসি গ্রেড-২ পদে।

শৈলকুপার সারুটিয়া গ্রামে বেড়ে ওঠা মানুষটি চাকরির সুবাদে বসবাস করেন পাবনার ঈশ্বরদী পৌর এলাকার গোরস্তানপাড়ার একটি ভাড়া বাড়িতে। তাঁর গ্রামের বাড়িতে সম্পত্তি বলতে আছে মাত্র ১০ শতাংশ জমি। বাবা-মায়ের বসবাস ভাঙা টিনের ঘরে।
ঈশ্বরদীর ভাড়া বাড়িতে বসবাস করলেও সেখানে নেই ভালো কোনো আসবাবপত্র। ঘরে গোটা দুয়েক চেয়ার, একটা আলনা আর শোবার জন্য একটি খাট। রেলওয়েতে টিটিই পদে চাকরি করলেও সৎভাবে জীবনযাপনের কারণে এখনও তাকে মাঝেমধ্যেই বন্ধুদের কাছে টাকা ধার করতে হয়।

তাঁর কয়েকজন এলাকাবাসী, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। গত সোমবার রাতে তাঁর সঙ্গে তাঁর ভাড়া বাসায় কথা হয়।

শফিকুল বলছিলেন, ‘আমি প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করে সরকারের ঘরে জমা দিই। এ টাকা রাজস্ব আয়ের, এ টাকা দেশের, সুযোগ থাকলেও আমি এ টাকা পকেটস্থ করি না। ছোটবেলায় বাবা-মা এবং আমার শিক্ষাগুরু রবিঠাকুর যে শিক্ষা দিয়েছেন, তা এখনও লালন করি।’

তাঁর ভাষ্য, তিনি যা বেতন পান তা দিয়ে হিসাব করে বাবা-মায়ের জন্য, পরিবারের জন্য যতটুকু করা যায় তা করেন। এতেই তার সুখ।

তার বাবা রজব আলী মোবাইল ফোনে বলেন, অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে ছেলেকে পড়ালেখা করানোর সামর্থ্য তাঁর ছিল না। ছেলে প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেই জুগিয়েছে। তাঁর মতো অক্ষরজ্ঞানহীন বাবার আদেশে তাঁর ছেলে যেভাবে সৎভাবে জীবনযাপন করে এতে তিনি খুশি।

‘ও আমার খুব ভালো বন্ধু। ও কোনো অন্যায় করে না, অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনের অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে সৎভাবে জীবনযাপন করে। ওকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি।’ মোবাইল ফোনে কথাগুলো বলছিলেন শফিকুলের ছেলেবেলার বন্ধু বাশারুল আলম, যিনি ঢাকায় গাড়ি চালকের চাকরি করেন।

বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তবারক হোসেন তোতা তাঁর স্মৃতি হাতড়ান- ‘ছোটবেলায় শফিকুল আমার কাছে ইংরেজি শিখত। তার মেধা ছিল। চারিত্রিক গুণের মধ্যে ছিল সততা। ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত সে তা ধরে রেখেছে।’

শফিকুলের চাচা লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, ওর সততার জন্য তিনি গর্ব অনুভব করেন। বলেন, ‘দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে ও সবার বড়। খুব কষ্ট করে লেখাপড়া শিখে বিনা পয়সায় রেলে চাকরি পেয়েছে।’

‘গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও তিনি যে সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাতে ইউনিয়নবাসী হিসেবে গর্বে আমাদের মাথা উঁচু হয়ে গেছে।’ বলছিলেন শৈলকুপার সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুন।

গত ৫ মে রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর তিন আত্মীয় বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করায় ওই তিন যাত্রীকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করেন টিটিই শফিকুল। এজন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে গত সোমবার তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন।

সূত্র/লিংক: দৈনিক সমকাল

 আরও পড়ুনঃ

 আরও পড়ুনঃ