ঢাকা ১১:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

পাবনার সাঁথিয়ায় কৃষকের বেগুন ও লাউ দাম না থাকায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে

সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত সময় ০৬:৫৬:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪
  • / 89



পাবনার সাঁথিয়ার কৃষকরা পানির দামে বিক্রয় করছেন তাদের উৎপাদিত সবজি বেগুন ও লাউ। খরচ না উঠায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে ফসল।

পরিচর্যার মূল্য না উঠায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে হেক্টরের পর হেক্টর জমির বেগুন। প্রতিবেশিদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হচ্ছে এক সময়ের মূল্যবান সবজি বেগুন। লাউ খাওয়ানো হচ্ছে গরুর খাদ্য হিসেবে।

পাবনা জেলার সবজি উৎপাদনে অন্যতম উপজেলা সাঁথিয়া। এ উপজেলার মাঠে ঘাটে খালে বিলে একক ও সাথী ফসল হিসেবে চলতি মৌসুমে দিগন্ত জুড়ে বেগুনের ব্যাপক চাষ হয়েছে।

চলতি বছরে উপজেলায় প্রায় ৬শত ৬৭ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বেগুনের আবাদ করেছে।

রমজানের পূর্বে ও শুরুতে এক কেজি বেগুন বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রয় হতো। সেই বেগুন সপ্তাহ ব্যবধানে কৃষকের গলার কাটা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

উপজেলার হাট বাজারে বেগুন বর্তমানে প্রকার ভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা বিক্রয় হলেও তা পাইকারী বাজারে বিক্রয় হচ্ছে মাত্র ১০০ টাকা মণ।

বেগুনের উৎপাদনের উপর নির্ভর করে উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী ভাবে গঠে উঠেছে সবজি বিক্রয়ের আড়ৎ।

উপজেলার কাশিনাথপুর ইউনিয়নের টাংড়াগাড়ী বিল ও বিলপাড়েরর এলাকার উপর নির্ভর করে অস্থায়ী ৩টি আড়ৎ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও ক্ষুদ্র ব্যাপারীরা কৃষকের ক্ষেতে গিয়ে কম মূল্যে বেগুন ক্রয় করছে।

উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের খন্দকার আলাই জানান, তিনি বিষ্ণুবাড়িয়া মাঠে ২ বিঘা জমিতে গোল জাতের বেগুনের আবাদ করেন। গাছে প্রচুর পরিমান বেগুন আসলেও দামে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।

সে জানান ১৮ মার্চ ক্ষেত থেকে ২৯ বস্তা বেগুন তোলা হয়। পাইকারী ব্যাপারী জমি থেকে বাঁকীতে কোন প্রকার দাম করা ছাড়াই তা নিয়ে যায়। ঢাকা নিয়ে বিক্রয় করে ২৯ বস্তা (৪৩ মন) বেগুনের দাম ৪ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। যা কেজিতে ২.৫০ টাকা করে দাম দেন।

এরপর ২৩ মার্চ ৫৯ বস্তা (৯০মন) বেগুন কোন প্রকার টাকা ছাড়াই ঢাকা পাঠিয়েছে। বিক্রয় করে টাকা দিবে।

উপজেলার কাশিনাথপুর ছাতক বরাটের মৃত হাতেম শেখের ছেলে ফজলুর রহমান জানান, এ বছর সে নালী পাড়া মৌজায় ৯ বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছে। গত বছর এ সময়ের মধ্যে ৩/৪ লক্ষ টাকার সবজি বিক্রয় করলেও এ বছর দাম কম থাকায় বেগুন সংগ্রহের খরচের ভয়ে জমি থেকে তা তুলছে না।

তিনি বলেন জমিতে বিষ, শ্রমিকের বাবদ যে খরচ হচ্ছে তা পুষিয়ে না উঠার কারণে বেগুন সংগ্রহ করা থেকে বিরত রয়েছি। জমিতেই তা পচে নষ্ট হচ্ছে।

এদিকে রমজানের আগে যে লাউয়ের মূল্য বাজারে ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা ছিল, সেই লাউ এখন গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

বর্তমানে বাজারে লাউ সবজি হালি হিসেবে বিক্রয় হচ্ছে। একটি লাউ উপজেলার বাজার গুলোতে ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।

শনিবার স্থানীয় বনগ্রাম হাটে এক জোড়া লাউ ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রয় করতে দেখা গেছে। লাউয়ের এমন দামে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে কৃষক। লাউয়ের দাম কম থাকায় গাছেই বুড়ো হচ্ছে।

সরেজমিন বিষ্ণুপুর রেললাইন সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষকের গাছে গাছে লাউ ঝুলছে। দাম কম হওয়ায় কৃষক গাছে রেখে লাউ বুড়ো করছে।

লাউ চাষি আমজাত শেখ জানান, লাইয়ের দাম না থাকায় লাউ এখন গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছি। কষ্ট ও খরচ করে বাজারে না নিয়ে গাছেই রেখে দিয়েছি।

রবিবার সকালে কাশিনাথপুরের মাঠে অস্থায়ী আড়ৎতে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা পাইকারী ব্যাপারীর নিকট বেগুন বিক্রয় করছে। কৃষক অনিক মীর জানান, ৩ থেকে ৪ টাকা কেজি বর্তমানে বেগুণ বিক্রয় হচ্ছে। এ দামে উৎপাদন খরচ উঠবে না।

কৃষক কাজল জানান, ৫ বিঘা জমিতে আমার এ বছর ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতি হবে। বেগুন ও লাউ এর পাশাপাশি বাজারে ৮০ টাকা কেজির করলা এখন ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি বিক্রয় হচ্ছে। এছাড়াও অনন্যা সবজি পানির দামে পাবনা জেলায় বিক্রয় হচ্ছে।

এদিকে বাজার মনিটরিং করার দায়িত্বে থাকা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কোন প্রকার দেখা মিলছে না বলে জানান কৃষকরা। কৃষকদের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসিনতায় সবজির বাজার অসাধু ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্জিত কুমার গৌসামী জানান, পাইকেরী ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে এমন বাজার হতে পারে। তিনি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বাজার নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিংয়ের আহবান জানান।

পাবনার সাঁথিয়ায় কৃষকের বেগুন ও লাউ দাম না থাকায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে

প্রকাশিত সময় ০৬:৫৬:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪



পাবনার সাঁথিয়ার কৃষকরা পানির দামে বিক্রয় করছেন তাদের উৎপাদিত সবজি বেগুন ও লাউ। খরচ না উঠায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে ফসল।

পরিচর্যার মূল্য না উঠায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে হেক্টরের পর হেক্টর জমির বেগুন। প্রতিবেশিদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হচ্ছে এক সময়ের মূল্যবান সবজি বেগুন। লাউ খাওয়ানো হচ্ছে গরুর খাদ্য হিসেবে।

পাবনা জেলার সবজি উৎপাদনে অন্যতম উপজেলা সাঁথিয়া। এ উপজেলার মাঠে ঘাটে খালে বিলে একক ও সাথী ফসল হিসেবে চলতি মৌসুমে দিগন্ত জুড়ে বেগুনের ব্যাপক চাষ হয়েছে।

চলতি বছরে উপজেলায় প্রায় ৬শত ৬৭ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বেগুনের আবাদ করেছে।

রমজানের পূর্বে ও শুরুতে এক কেজি বেগুন বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রয় হতো। সেই বেগুন সপ্তাহ ব্যবধানে কৃষকের গলার কাটা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

উপজেলার হাট বাজারে বেগুন বর্তমানে প্রকার ভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা বিক্রয় হলেও তা পাইকারী বাজারে বিক্রয় হচ্ছে মাত্র ১০০ টাকা মণ।

বেগুনের উৎপাদনের উপর নির্ভর করে উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী ভাবে গঠে উঠেছে সবজি বিক্রয়ের আড়ৎ।

উপজেলার কাশিনাথপুর ইউনিয়নের টাংড়াগাড়ী বিল ও বিলপাড়েরর এলাকার উপর নির্ভর করে অস্থায়ী ৩টি আড়ৎ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও ক্ষুদ্র ব্যাপারীরা কৃষকের ক্ষেতে গিয়ে কম মূল্যে বেগুন ক্রয় করছে।

উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের খন্দকার আলাই জানান, তিনি বিষ্ণুবাড়িয়া মাঠে ২ বিঘা জমিতে গোল জাতের বেগুনের আবাদ করেন। গাছে প্রচুর পরিমান বেগুন আসলেও দামে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।

সে জানান ১৮ মার্চ ক্ষেত থেকে ২৯ বস্তা বেগুন তোলা হয়। পাইকারী ব্যাপারী জমি থেকে বাঁকীতে কোন প্রকার দাম করা ছাড়াই তা নিয়ে যায়। ঢাকা নিয়ে বিক্রয় করে ২৯ বস্তা (৪৩ মন) বেগুনের দাম ৪ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। যা কেজিতে ২.৫০ টাকা করে দাম দেন।

এরপর ২৩ মার্চ ৫৯ বস্তা (৯০মন) বেগুন কোন প্রকার টাকা ছাড়াই ঢাকা পাঠিয়েছে। বিক্রয় করে টাকা দিবে।

উপজেলার কাশিনাথপুর ছাতক বরাটের মৃত হাতেম শেখের ছেলে ফজলুর রহমান জানান, এ বছর সে নালী পাড়া মৌজায় ৯ বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছে। গত বছর এ সময়ের মধ্যে ৩/৪ লক্ষ টাকার সবজি বিক্রয় করলেও এ বছর দাম কম থাকায় বেগুন সংগ্রহের খরচের ভয়ে জমি থেকে তা তুলছে না।

তিনি বলেন জমিতে বিষ, শ্রমিকের বাবদ যে খরচ হচ্ছে তা পুষিয়ে না উঠার কারণে বেগুন সংগ্রহ করা থেকে বিরত রয়েছি। জমিতেই তা পচে নষ্ট হচ্ছে।

এদিকে রমজানের আগে যে লাউয়ের মূল্য বাজারে ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা ছিল, সেই লাউ এখন গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

বর্তমানে বাজারে লাউ সবজি হালি হিসেবে বিক্রয় হচ্ছে। একটি লাউ উপজেলার বাজার গুলোতে ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।

শনিবার স্থানীয় বনগ্রাম হাটে এক জোড়া লাউ ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রয় করতে দেখা গেছে। লাউয়ের এমন দামে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে কৃষক। লাউয়ের দাম কম থাকায় গাছেই বুড়ো হচ্ছে।

সরেজমিন বিষ্ণুপুর রেললাইন সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষকের গাছে গাছে লাউ ঝুলছে। দাম কম হওয়ায় কৃষক গাছে রেখে লাউ বুড়ো করছে।

লাউ চাষি আমজাত শেখ জানান, লাইয়ের দাম না থাকায় লাউ এখন গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছি। কষ্ট ও খরচ করে বাজারে না নিয়ে গাছেই রেখে দিয়েছি।

রবিবার সকালে কাশিনাথপুরের মাঠে অস্থায়ী আড়ৎতে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা পাইকারী ব্যাপারীর নিকট বেগুন বিক্রয় করছে। কৃষক অনিক মীর জানান, ৩ থেকে ৪ টাকা কেজি বর্তমানে বেগুণ বিক্রয় হচ্ছে। এ দামে উৎপাদন খরচ উঠবে না।

কৃষক কাজল জানান, ৫ বিঘা জমিতে আমার এ বছর ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতি হবে। বেগুন ও লাউ এর পাশাপাশি বাজারে ৮০ টাকা কেজির করলা এখন ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি বিক্রয় হচ্ছে। এছাড়াও অনন্যা সবজি পানির দামে পাবনা জেলায় বিক্রয় হচ্ছে।

এদিকে বাজার মনিটরিং করার দায়িত্বে থাকা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কোন প্রকার দেখা মিলছে না বলে জানান কৃষকরা। কৃষকদের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসিনতায় সবজির বাজার অসাধু ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্জিত কুমার গৌসামী জানান, পাইকেরী ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে এমন বাজার হতে পারে। তিনি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বাজার নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিংয়ের আহবান জানান।