ঢাকা ০৬:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

২০ টাকা মজুরির শ্রমিক থেকে মাফিয়া বনে গেলেন ‘কোম্পানি মনির’

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০২:১৪:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অগাস্ট ২০২৩
  • / 43

ট্যানারি শ্রমিক বাবার হাত ধরে ঢাকায় এসেছিলেন মনির হোসেন। কাঁচা চামড়ার ময়লা পরিষ্কার করতেন দৈনিক ২০ টাকা মজুরিতে। সেই মনির এখন ট্যানারির মাফিয়া। শূন্য থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া নোয়াখালীর মনিরকে এখন সবাই চেনে লেদার বা কোম্পানি মনির হিসেবে।

ট্যানারি ব্যবসার আড়ালে রয়েছে তার ভয়ংকর রূপ। জায়গা-জমির প্রতি তার রয়েছে মারাত্মক দুর্বলতা। প্রায় শত কোটি টাকার একটি জমি কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে এক সময়ের সহযোগী এখলাসকে খুন করে ফাঁসেন তিনি। তাকে রিমান্ডে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ পেয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।


রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার একটি জায়গা বাংলাদেশ পুলিশের জন্য অধিগ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে ৪০ শতক জায়গার মালিক এখলাস নামে এক ভূমি ব্যবসায়ী। এর অধিগ্রহণ মূল্যও প্রায় শতকোটি টাকা। মনির হোসেন নামে আরেক ভূমি ব্যবসায়ী জায়গাটি দখলে নিয়ে অধিগ্রহণের পুরো টাকা একাই ভোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। মনিরের এ অপচেষ্টা রোধে এখলাস একাধিক মামলাসহ ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগও করেন। ফলে আটকে যায় জমি অধিগ্রহণের টাকা।


জমি নিয়ে বিরোধের জেরেই এখলাসকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মনির হোসেন। ২৮ জুন ভূমি ব্যবসায়ী এখলাস রাতে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। কোরবানি ঈদের পর দিন সকালে হাজারীবাগ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কাছ থেকে বস্তাবন্দি একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এখলাসের স্বজনরা সেখানে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন। হত্যা এবং লাশ ঘুমের ঘটনায় মামলা হয় কামরাঙ্গীরচর থানায়।


গোয়েন্দা তথ্য এবং ডিজিটাল তথ্য বিশ্লেষণ করে ডিবি পুলিশ মূল পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা – একই সঙ্গে হুকুমদাতা, সরাসরি কিলিং মিশনে জড়িত দুজন এবং সমন্বয়কারীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী এবং অর্থদাতা শিল্পপতি মনির হোসেন ওরফে কোম্পানি মনিরকে গ্রেফতার করা হয় যশোরের বেনাপোল থেকে।


ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘যশোর এয়ারপোর্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে তাদের সঙ্গে মনিরের একটা মিটিং করার কথা ছিলো। ওই মুহূর্তে আমরা তাকে গ্রেফতার করি।’

ডিবিরি তদন্তে বেরিয়ে আসে জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে এখলাসকে খুন করার পরিকল্পনা করা হয় গত রোজার মাসে। নিয়োগ করা হয় একজন সমন্বয়কারী। চুক্তি হয় ২০ লাখ টাকায়। অগ্রিম দেয়া হয়েছিলো ১০ লাখ; বাকি টাকা দেয়ার কথা ছিল অপারেশন শেষে।


ডিবি প্রধান বলেন, লেদার মনিরের উত্থান ২০০১ সাল থেকে।


পুলিশ বলছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের বাইরেও এখলাসের সঙ্গে নারীঘটিত বিরোধও ছিল মনির হোসেনের । হত্যাকাণ্ডের পেছনে সেটিও ছিল অন্যতম একটি কারণ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, মনির হোসেন নিহত ব্যক্তির নামে বিভিন্ন জায়গা জমি কেনা-বেচা করিয়েছেন। এখানে কিছু জায়গা ভুক্তভোগীর নিজের, কিছু জায়গা মনিরকে কিনে দিয়েছেন। কিন্তু মনির পুরো জায়গা বাউন্ডারি দিয়ে নিজের দখলে নেন এবং সরকারি অধিগ্রহণের পুরো টাকা খাওয়ার পাঁয়তারা করছিলেন।

আশির দশকে দিনমজুর বাবার হাত ধরে ঢাকায় এসে নিজেও দৈনিক ২০ টাকা মজুরিতে ট্যানারিতে কাজ শুরু করা মনির এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এবং হাজারীবাগে রয়েছে তার বিপুল সম্পত্তি। চার-পাঁচটি ট্যানারির মালিক মনিরকে সবাই চেনে কোম্পানি মনির নামে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে তার সখ্যতার তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। ২০০২ এবং ২০১৫ সালে দুটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন মনির।


মশিউর রহমান বলেন, একদিকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় নাসির উদ্দিন পিন্টু, অন্যদিকে আন্ডারগ্রাউন্ডের মাফিয়া ডন ইমনের শক্তি এবং অস্ত্র ব্যবহার করে সে রাতারাতি বেশকিছু জায়গা দখল করে। তার আপন বড় ভাইয়ের শ্যালককে খুন করে তাদের একটা কারখানা দখল করেন। এগুলো করে করে তিনি এখন প্রায় হাজার কোটি টাকার মালিক।


ট্যানারি ও জমির ব্যবসার আড়ালে নানা অনৈতিক কাজের সঙ্গেও মনিরের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।

এই রকম আরও টপিক

২০ টাকা মজুরির শ্রমিক থেকে মাফিয়া বনে গেলেন ‘কোম্পানি মনির’

প্রকাশিত সময় ০২:১৪:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অগাস্ট ২০২৩

ট্যানারি শ্রমিক বাবার হাত ধরে ঢাকায় এসেছিলেন মনির হোসেন। কাঁচা চামড়ার ময়লা পরিষ্কার করতেন দৈনিক ২০ টাকা মজুরিতে। সেই মনির এখন ট্যানারির মাফিয়া। শূন্য থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া নোয়াখালীর মনিরকে এখন সবাই চেনে লেদার বা কোম্পানি মনির হিসেবে।

ট্যানারি ব্যবসার আড়ালে রয়েছে তার ভয়ংকর রূপ। জায়গা-জমির প্রতি তার রয়েছে মারাত্মক দুর্বলতা। প্রায় শত কোটি টাকার একটি জমি কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে এক সময়ের সহযোগী এখলাসকে খুন করে ফাঁসেন তিনি। তাকে রিমান্ডে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ পেয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।


রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার একটি জায়গা বাংলাদেশ পুলিশের জন্য অধিগ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে ৪০ শতক জায়গার মালিক এখলাস নামে এক ভূমি ব্যবসায়ী। এর অধিগ্রহণ মূল্যও প্রায় শতকোটি টাকা। মনির হোসেন নামে আরেক ভূমি ব্যবসায়ী জায়গাটি দখলে নিয়ে অধিগ্রহণের পুরো টাকা একাই ভোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। মনিরের এ অপচেষ্টা রোধে এখলাস একাধিক মামলাসহ ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগও করেন। ফলে আটকে যায় জমি অধিগ্রহণের টাকা।


জমি নিয়ে বিরোধের জেরেই এখলাসকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মনির হোসেন। ২৮ জুন ভূমি ব্যবসায়ী এখলাস রাতে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। কোরবানি ঈদের পর দিন সকালে হাজারীবাগ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কাছ থেকে বস্তাবন্দি একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এখলাসের স্বজনরা সেখানে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন। হত্যা এবং লাশ ঘুমের ঘটনায় মামলা হয় কামরাঙ্গীরচর থানায়।


গোয়েন্দা তথ্য এবং ডিজিটাল তথ্য বিশ্লেষণ করে ডিবি পুলিশ মূল পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা – একই সঙ্গে হুকুমদাতা, সরাসরি কিলিং মিশনে জড়িত দুজন এবং সমন্বয়কারীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী এবং অর্থদাতা শিল্পপতি মনির হোসেন ওরফে কোম্পানি মনিরকে গ্রেফতার করা হয় যশোরের বেনাপোল থেকে।


ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘যশোর এয়ারপোর্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে তাদের সঙ্গে মনিরের একটা মিটিং করার কথা ছিলো। ওই মুহূর্তে আমরা তাকে গ্রেফতার করি।’

ডিবিরি তদন্তে বেরিয়ে আসে জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে এখলাসকে খুন করার পরিকল্পনা করা হয় গত রোজার মাসে। নিয়োগ করা হয় একজন সমন্বয়কারী। চুক্তি হয় ২০ লাখ টাকায়। অগ্রিম দেয়া হয়েছিলো ১০ লাখ; বাকি টাকা দেয়ার কথা ছিল অপারেশন শেষে।


ডিবি প্রধান বলেন, লেদার মনিরের উত্থান ২০০১ সাল থেকে।


পুলিশ বলছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের বাইরেও এখলাসের সঙ্গে নারীঘটিত বিরোধও ছিল মনির হোসেনের । হত্যাকাণ্ডের পেছনে সেটিও ছিল অন্যতম একটি কারণ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, মনির হোসেন নিহত ব্যক্তির নামে বিভিন্ন জায়গা জমি কেনা-বেচা করিয়েছেন। এখানে কিছু জায়গা ভুক্তভোগীর নিজের, কিছু জায়গা মনিরকে কিনে দিয়েছেন। কিন্তু মনির পুরো জায়গা বাউন্ডারি দিয়ে নিজের দখলে নেন এবং সরকারি অধিগ্রহণের পুরো টাকা খাওয়ার পাঁয়তারা করছিলেন।

আশির দশকে দিনমজুর বাবার হাত ধরে ঢাকায় এসে নিজেও দৈনিক ২০ টাকা মজুরিতে ট্যানারিতে কাজ শুরু করা মনির এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এবং হাজারীবাগে রয়েছে তার বিপুল সম্পত্তি। চার-পাঁচটি ট্যানারির মালিক মনিরকে সবাই চেনে কোম্পানি মনির নামে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে তার সখ্যতার তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। ২০০২ এবং ২০১৫ সালে দুটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন মনির।


মশিউর রহমান বলেন, একদিকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় নাসির উদ্দিন পিন্টু, অন্যদিকে আন্ডারগ্রাউন্ডের মাফিয়া ডন ইমনের শক্তি এবং অস্ত্র ব্যবহার করে সে রাতারাতি বেশকিছু জায়গা দখল করে। তার আপন বড় ভাইয়ের শ্যালককে খুন করে তাদের একটা কারখানা দখল করেন। এগুলো করে করে তিনি এখন প্রায় হাজার কোটি টাকার মালিক।


ট্যানারি ও জমির ব্যবসার আড়ালে নানা অনৈতিক কাজের সঙ্গেও মনিরের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।