ঢাকা ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

পুঠিয়ায় মাছ চাষে দুই হাজার বেকারের কর্মস্থান: বছরে এক হাজার কোটি টাকা আয়

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৭:০৯:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জুলাই ২০২০
  • / 79

তারেক মাহমুদ, পুঠিয়া, রাজশাহীঃ কয়েক বছর থেকেই মাছ চাষে রিতীমতো বিপ্লব ঘটে গেছে রাজশাহীর পুঠিয় উপজেলায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাজা মাছ সরবরাহে প্রথম স্থানে এখন রাজশাহী জেলা। আর পুঠিয়া উপজেলা তার অন্যতম। পুঠিয়া ও পার্শবতী উপজেলা গুলো দিয়ে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক ট্রাকে করে লক্ষ লক্ষ টাকার তাজা মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে। এতে দেশের ফরমালিন মুক্ত মাছ পাচ্ছে বাইরের ক্রেতারা ও নতুন করে হচ্ছে বেকারদের কর্মস্থান।

রাজধানীতে উত্তরাঞ্চলে তাজা মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখানে প্রতিনিয়ত নতুন পুকুরের পাশাপাশি বাড়ছে চাষিদের সংখ্যা। তথ্যমতে এই উপজেলায় সব মিলে প্রতিবছর ৩২ হাজার মে.টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য এক হাজার কোটি টাকা। আর মৎস্যজীবিদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় তিন হাজার বেকার যুবকদের।

উপজেলা ভূমি ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, পূর্বের তালিকা অনুসারে উপজেলায় এক হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ৭ হাজার ৭টি পুকুর রয়েছে। ওই পুকুর গুলো থেকে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার মে.টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ গুলোর তথ্যমতে গত ১০ বছরে নতুন করে পুরো উপজেলায় নতুন করে প্রায় দু’হাজার হেক্টর জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। যা ভূমি ও মৎস্য অফিসের অন্তর্ভৃক্ত নয়। এর মধ্যে ভালুকগাছি ও শিলমাড়িয়া ইউনিয়নে বেশী পুকুর খনন করা হয়েছে। বর্তমানে ওই পুকুর গুলো থেকে বাণিজ্যিকভাবে সারা বছর মাছ চাষ করা হচ্ছে।

উপজেলার কয়েকজন মাছ চাষিরা সাথে কথা হলে জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশে রাজশাহী অঞ্চলের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর মাছে ফরমালিন আতঙ্কের কারণে ক্রেতারা গত কয়েক বছর থেকে বড় আকারের তাজা মাছ কিনতে বেশী আগ্রহী হয়েছে। তাদের চাহিদা মোতাবেক প্রতিদিন শত শত ট্রাকে বিশেষ ব্যবস্থায় তাজা মাছ সরবরাহ করছেন চাষিরা। বর্তমানে বড় ও তাজা মাছ গুলো প্রকার ভেদে প্রতি কেজি ৩শ’ থেকে ৩৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে করোনা কালীন সময়ে বাজার একটু কমেছে।

শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের মাছ চাষী এরশাদ আলী জানান, গত কয়েক বছর থেকে বাজার ভালো হওয়ায় বর্তমানে এই এলাকায় অনেকেই এখন মাছ চাষে আগ্রহ হচ্ছেন। অনেক কৃষক তাদের নিচু জমি গুলোতে এখন পুকুর খনন করছেন। আবার কেউ তাদের জমি গুলো পুকুর খনন করতে আগ্রহী হয়ে মৎস্য চাষিদের কাছে লীজ দিচ্ছেন।
তিনি জানান, বর্তমানে এই এলাকায় প্রতি বিঘা পুকুর বছরে ইজারা মূল্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর আধুনকি প্রযুক্তিতে প্রতিবছর এক বিঘা পুকুরে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। লাভ বেশি হওয়ায় মাছ চাষ করা হচ্ছে।

পুঠিয়ার আমজাদ হোসেন নামের অপর একজন মাছ চাষি বলেন, গত কয়েক বছর থেকে এই এলাকার বেশীর ভাগ মানুষের মাছ চাষ হচ্ছে অর্থ উপার্জনের প্রধান মাধ্যম। বর্তমানে মাছ চাষ অনেক লাভজনক হওয়ায় প্রতিনিয়ত নতুন চাষিদের সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে প্রতিবছর এই উপজেলায় প্রায় ৩২ হাজার মে.টন বিভিন্ন জাতের মাছ উৎপাদন হচ্ছে। যার বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশীর ভাগ তাজা মাছ দু’শতাধিক ট্রাকের মাধ্যমে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। আর মাছ চাষকে ঘিরে এলাকার তিন হাজারেরও বেশী বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

ভালুকগাছি ইউনিয়নের আরেক মৎস্য চাষি আব্দুল জলিল জানান, বর্তমানে গুনগত মানের পোনা সনাক্ত ও প্রযুক্তিগত ভাবে মাছ চাষ করার বিষয়ে আরো গুরুত্ব দিলে ভালো হবে। এতে অনেকে লোকসান গুনছেন তা দূর হবে। যেমন নদীর পোনার মাছ অনেক ভালো উৎপাদন হয়। এই মাছ গুলোর পোনা সঠিক ভাবে চাষীদের মাঝে সরবরহ হওয়া দরকার।

পুঠিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ওমর আলী জানান, আমরা আগ্রহী মাছ চাষীদের সার্বক্ষনিক প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সহযোগিতা করছি। বর্তমানে মাছ চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেকেই আগ্রহে এগিয়ে আসছেন। এর মধ্যে নতুন করে পুকুর খনন করতে আমাদের কাছে ৩৮টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। চাষিদের সঠিক তদারকির কারণে সারা দেশে এই অঞ্চলের উৎপাদিত তাজা মাছের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। আর মাছ চাষ করে এলাকার চাষিরা অর্থনৈতিক ভাবে অনেক লাভবান হচ্ছেন।

পুঠিয়ায় মাছ চাষে দুই হাজার বেকারের কর্মস্থান: বছরে এক হাজার কোটি টাকা আয়

প্রকাশিত সময় ০৭:০৯:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জুলাই ২০২০

তারেক মাহমুদ, পুঠিয়া, রাজশাহীঃ কয়েক বছর থেকেই মাছ চাষে রিতীমতো বিপ্লব ঘটে গেছে রাজশাহীর পুঠিয় উপজেলায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাজা মাছ সরবরাহে প্রথম স্থানে এখন রাজশাহী জেলা। আর পুঠিয়া উপজেলা তার অন্যতম। পুঠিয়া ও পার্শবতী উপজেলা গুলো দিয়ে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক ট্রাকে করে লক্ষ লক্ষ টাকার তাজা মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে। এতে দেশের ফরমালিন মুক্ত মাছ পাচ্ছে বাইরের ক্রেতারা ও নতুন করে হচ্ছে বেকারদের কর্মস্থান।

রাজধানীতে উত্তরাঞ্চলে তাজা মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখানে প্রতিনিয়ত নতুন পুকুরের পাশাপাশি বাড়ছে চাষিদের সংখ্যা। তথ্যমতে এই উপজেলায় সব মিলে প্রতিবছর ৩২ হাজার মে.টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য এক হাজার কোটি টাকা। আর মৎস্যজীবিদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় তিন হাজার বেকার যুবকদের।

উপজেলা ভূমি ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, পূর্বের তালিকা অনুসারে উপজেলায় এক হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ৭ হাজার ৭টি পুকুর রয়েছে। ওই পুকুর গুলো থেকে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার মে.টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ গুলোর তথ্যমতে গত ১০ বছরে নতুন করে পুরো উপজেলায় নতুন করে প্রায় দু’হাজার হেক্টর জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। যা ভূমি ও মৎস্য অফিসের অন্তর্ভৃক্ত নয়। এর মধ্যে ভালুকগাছি ও শিলমাড়িয়া ইউনিয়নে বেশী পুকুর খনন করা হয়েছে। বর্তমানে ওই পুকুর গুলো থেকে বাণিজ্যিকভাবে সারা বছর মাছ চাষ করা হচ্ছে।

উপজেলার কয়েকজন মাছ চাষিরা সাথে কথা হলে জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশে রাজশাহী অঞ্চলের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর মাছে ফরমালিন আতঙ্কের কারণে ক্রেতারা গত কয়েক বছর থেকে বড় আকারের তাজা মাছ কিনতে বেশী আগ্রহী হয়েছে। তাদের চাহিদা মোতাবেক প্রতিদিন শত শত ট্রাকে বিশেষ ব্যবস্থায় তাজা মাছ সরবরাহ করছেন চাষিরা। বর্তমানে বড় ও তাজা মাছ গুলো প্রকার ভেদে প্রতি কেজি ৩শ’ থেকে ৩৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে করোনা কালীন সময়ে বাজার একটু কমেছে।

শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের মাছ চাষী এরশাদ আলী জানান, গত কয়েক বছর থেকে বাজার ভালো হওয়ায় বর্তমানে এই এলাকায় অনেকেই এখন মাছ চাষে আগ্রহ হচ্ছেন। অনেক কৃষক তাদের নিচু জমি গুলোতে এখন পুকুর খনন করছেন। আবার কেউ তাদের জমি গুলো পুকুর খনন করতে আগ্রহী হয়ে মৎস্য চাষিদের কাছে লীজ দিচ্ছেন।
তিনি জানান, বর্তমানে এই এলাকায় প্রতি বিঘা পুকুর বছরে ইজারা মূল্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর আধুনকি প্রযুক্তিতে প্রতিবছর এক বিঘা পুকুরে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। লাভ বেশি হওয়ায় মাছ চাষ করা হচ্ছে।

পুঠিয়ার আমজাদ হোসেন নামের অপর একজন মাছ চাষি বলেন, গত কয়েক বছর থেকে এই এলাকার বেশীর ভাগ মানুষের মাছ চাষ হচ্ছে অর্থ উপার্জনের প্রধান মাধ্যম। বর্তমানে মাছ চাষ অনেক লাভজনক হওয়ায় প্রতিনিয়ত নতুন চাষিদের সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে প্রতিবছর এই উপজেলায় প্রায় ৩২ হাজার মে.টন বিভিন্ন জাতের মাছ উৎপাদন হচ্ছে। যার বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশীর ভাগ তাজা মাছ দু’শতাধিক ট্রাকের মাধ্যমে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। আর মাছ চাষকে ঘিরে এলাকার তিন হাজারেরও বেশী বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

ভালুকগাছি ইউনিয়নের আরেক মৎস্য চাষি আব্দুল জলিল জানান, বর্তমানে গুনগত মানের পোনা সনাক্ত ও প্রযুক্তিগত ভাবে মাছ চাষ করার বিষয়ে আরো গুরুত্ব দিলে ভালো হবে। এতে অনেকে লোকসান গুনছেন তা দূর হবে। যেমন নদীর পোনার মাছ অনেক ভালো উৎপাদন হয়। এই মাছ গুলোর পোনা সঠিক ভাবে চাষীদের মাঝে সরবরহ হওয়া দরকার।

পুঠিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ওমর আলী জানান, আমরা আগ্রহী মাছ চাষীদের সার্বক্ষনিক প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সহযোগিতা করছি। বর্তমানে মাছ চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেকেই আগ্রহে এগিয়ে আসছেন। এর মধ্যে নতুন করে পুকুর খনন করতে আমাদের কাছে ৩৮টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। চাষিদের সঠিক তদারকির কারণে সারা দেশে এই অঞ্চলের উৎপাদিত তাজা মাছের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। আর মাছ চাষ করে এলাকার চাষিরা অর্থনৈতিক ভাবে অনেক লাভবান হচ্ছেন।