ঢাকা ০৮:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

চাটমোহরে ফসলি জমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির হিড়িক : নির্বিকার প্রশাসন

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০২:০৯:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ মে ২০২২
  • / 106

চাটসোহরে অননুমোদিত মাটি বিক্রয়

চাটমোহরে ফসলি জমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির হিড়িক : নির্বিকার প্রশাসন। ছবি: তোফাজ্জল হোসেন বাবু

 

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০১ :৪২ রাত, ১ মে ২০২২

চাটমোহরে ফসলি জমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির হিড়িক; নির্বিকার প্রশাসন

পাবনার চাটমোহরে বিভিন্ন বিলের ফসলি জমি ও পুকুর সংস্কারের নামে মাটি কাটার হিড়িক পড়েছে।

যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই একটি অসাধু চক্র প্রকাশ্যে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে।

কুত্তা গাড়ি, ট্রলি ও ট্রাকে মাটি নিয়ে যাবার সময় সড়কে পড়ছে মাটি। এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করা হলেও এ বিষয়ে কারো কোন মাথাব্যাথা নেই। এতে নষ্ট হচ্ছে স্থানীয় সড়ক। প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।

গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ধুলাউড়ি ও রামনগর গ্রামের মধ্যবর্তী মাঠ থেকে এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন পার্শ্ববর্তী দোলং গ্রামের আনোয়ার হোসেন। পুকুর সংস্কারের নামে ঝাঁকড়া গ্রামের বাচ্চু, জাহাঙ্গীর ও ফোরকানের যৌথ মালিকানাধীন একটি পুকুর থেকে যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন ঝাঁকড়া গ্রামের আব্দুল গফুর।

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিন উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের পূর্বটিয়ারতলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় চাটমোহর-পাবনা সড়কের পশ্চিম পাশ থেকে শফিকুল ইসলাম নামক এক ব্যক্তি এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে পুকুর খনন করে ট্রলি ও ট্রাকযোগে মাটি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যত্র। এছাড়া বাহাদুরপুর গ্রামে জনাব হাজীর বাড়ির পেছনে বিলে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করছেন দেলোয়ার হোসেন।

এসকল পুকুর খননকারী ও মাটি বিক্রেতাদের কাছে জানতে চাইলে তারা প্রশাসনের অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি। ওই ইউনিয়নের ভূমি অফিসের নায়েবের কাছ থেকে জানা গেছে, তাদের কারোরই মাটি কাটার অনুমতি নেই।

শনিবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, গুনাইগাছা পূর্বপাড়া ইট ভাটার সামনে পুকুর সংস্কারের নামে চলছে খনন। মৃত রোস্তম আলীর চার ছেলে রাজ্জাক, ইদ্রিস, জাফর, রেজাউল বাড়ির পাড় বাধার জন্য মাটি কাটছেন বলে জানা গেছে। মাটি বিক্রি করছেন না বলে দাবি করেন। প্রশাসনের অনুমতি না থাকলেও, স্থানীয় বর্তমান চেয়ারম্যান রজব আলী বাবলু, সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মওলা তাদের মাটি কাটতে অনুমতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সেখানে উপস্থিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মওলা বলেন, পুকুরের পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে। তাই মাটি কেটে পাড় বাধা হচ্ছে। মাটি বিক্রি করা হবে না। প্রশাসনের অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেন নাই।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, কিছু মাটি ব্যবসায়ী ফসলি জমির মালিকদের সাথে চুক্তি করে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। মাটি বহনকারী কুত্তা গাড়ি, ট্রলি, ট্রাক চাটমোহরের বিভিন্ন রাস্তায় দ্রুত গতিতে চলাচল করছে। আকার ভেদে প্রতি গাড়ি মাটি ৫শ থেকে ১ হাজার ৫’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেক যায়গায় সড়কের অংশ কেটে গাড়ি ওাঠা-নামার ব্যবস্থা করায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পাশিপাশি এসব যানবাহনে মাটি বহন করার সময় ধুলাবালিতে পথে চলাচলকারী মানুষের নানা সমস্যা হচ্ছে। মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বায়ু দূষণ জনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

মাটি নিয়ে যাওয়ার কারণে আশপাশের ফসলি জমি ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানানোর পর তারা পুকুর খনন বন্ধ করে দিলেও, কিছুদিন পর মাটি ব্যবসায়ীরা আবার মাটি কাটা শুরু করেন। এভাবেই চলছে ফসলি জমিতে পুকুর খনন আর মাটি বিক্রির উৎসব। অনেকে আবার দিনে মাটি না কেটে রাতের আঁধারে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। কিন্তু প্রশাসনের নজরদারিতেও বন্ধ হচ্ছে না মাটি কাটা ও বিক্রির ব্যবসা।

এ ব্যাপারে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, এসি ল্যান্ড ও ইউএনও স্যাররা খবর পেয়ে আমাদের জানালে আমরা গিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করে দিয়ে আসি। পরে আবার কাটা শুরু করে। এজন্য দরকার কঠোর অভিযান। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা গেলে মাটি কাটা ও বিক্রি কমে আসবে।

এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তানজিনা খাতুনের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈকত ইসলাম বলেন, মাটি কাটার তো অনুমতি নাই। আমরা অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনা করি। কখনও পুলিশ পাঠিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। সমস্যা হলো কিছুদিন পর আবার শুরু করে। কিংবা একজনকে বন্ধ করলে অন্য জায়গায় অন্য কেউ মাটি কাটা শুরু করে। এখানে আরেকটি সমস্যা হলো, মাটির দরকার, কিন্তু মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বেপরোয়াভাবে মানুষ মাটি কাটছে ও বিক্রি করছে। আপনারা আমাদের তথ্য দেন, আমরা ব্যবস্থা নেবো।

 

 আরও পড়ুনঃ

এই রকম আরও টপিক

চাটমোহরে ফসলি জমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির হিড়িক : নির্বিকার প্রশাসন

প্রকাশিত সময় ০২:০৯:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ মে ২০২২
চাটমোহরে ফসলি জমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির হিড়িক : নির্বিকার প্রশাসন। ছবি: তোফাজ্জল হোসেন বাবু

 

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০১ :৪২ রাত, ১ মে ২০২২

চাটমোহরে ফসলি জমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির হিড়িক; নির্বিকার প্রশাসন

পাবনার চাটমোহরে বিভিন্ন বিলের ফসলি জমি ও পুকুর সংস্কারের নামে মাটি কাটার হিড়িক পড়েছে।

যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই একটি অসাধু চক্র প্রকাশ্যে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে।

কুত্তা গাড়ি, ট্রলি ও ট্রাকে মাটি নিয়ে যাবার সময় সড়কে পড়ছে মাটি। এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করা হলেও এ বিষয়ে কারো কোন মাথাব্যাথা নেই। এতে নষ্ট হচ্ছে স্থানীয় সড়ক। প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।

গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ধুলাউড়ি ও রামনগর গ্রামের মধ্যবর্তী মাঠ থেকে এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন পার্শ্ববর্তী দোলং গ্রামের আনোয়ার হোসেন। পুকুর সংস্কারের নামে ঝাঁকড়া গ্রামের বাচ্চু, জাহাঙ্গীর ও ফোরকানের যৌথ মালিকানাধীন একটি পুকুর থেকে যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন ঝাঁকড়া গ্রামের আব্দুল গফুর।

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিন উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের পূর্বটিয়ারতলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় চাটমোহর-পাবনা সড়কের পশ্চিম পাশ থেকে শফিকুল ইসলাম নামক এক ব্যক্তি এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে পুকুর খনন করে ট্রলি ও ট্রাকযোগে মাটি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যত্র। এছাড়া বাহাদুরপুর গ্রামে জনাব হাজীর বাড়ির পেছনে বিলে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করছেন দেলোয়ার হোসেন।

এসকল পুকুর খননকারী ও মাটি বিক্রেতাদের কাছে জানতে চাইলে তারা প্রশাসনের অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি। ওই ইউনিয়নের ভূমি অফিসের নায়েবের কাছ থেকে জানা গেছে, তাদের কারোরই মাটি কাটার অনুমতি নেই।

শনিবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, গুনাইগাছা পূর্বপাড়া ইট ভাটার সামনে পুকুর সংস্কারের নামে চলছে খনন। মৃত রোস্তম আলীর চার ছেলে রাজ্জাক, ইদ্রিস, জাফর, রেজাউল বাড়ির পাড় বাধার জন্য মাটি কাটছেন বলে জানা গেছে। মাটি বিক্রি করছেন না বলে দাবি করেন। প্রশাসনের অনুমতি না থাকলেও, স্থানীয় বর্তমান চেয়ারম্যান রজব আলী বাবলু, সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মওলা তাদের মাটি কাটতে অনুমতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সেখানে উপস্থিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মওলা বলেন, পুকুরের পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে। তাই মাটি কেটে পাড় বাধা হচ্ছে। মাটি বিক্রি করা হবে না। প্রশাসনের অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেন নাই।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, কিছু মাটি ব্যবসায়ী ফসলি জমির মালিকদের সাথে চুক্তি করে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। মাটি বহনকারী কুত্তা গাড়ি, ট্রলি, ট্রাক চাটমোহরের বিভিন্ন রাস্তায় দ্রুত গতিতে চলাচল করছে। আকার ভেদে প্রতি গাড়ি মাটি ৫শ থেকে ১ হাজার ৫’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেক যায়গায় সড়কের অংশ কেটে গাড়ি ওাঠা-নামার ব্যবস্থা করায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পাশিপাশি এসব যানবাহনে মাটি বহন করার সময় ধুলাবালিতে পথে চলাচলকারী মানুষের নানা সমস্যা হচ্ছে। মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বায়ু দূষণ জনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

মাটি নিয়ে যাওয়ার কারণে আশপাশের ফসলি জমি ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানানোর পর তারা পুকুর খনন বন্ধ করে দিলেও, কিছুদিন পর মাটি ব্যবসায়ীরা আবার মাটি কাটা শুরু করেন। এভাবেই চলছে ফসলি জমিতে পুকুর খনন আর মাটি বিক্রির উৎসব। অনেকে আবার দিনে মাটি না কেটে রাতের আঁধারে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। কিন্তু প্রশাসনের নজরদারিতেও বন্ধ হচ্ছে না মাটি কাটা ও বিক্রির ব্যবসা।

এ ব্যাপারে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, এসি ল্যান্ড ও ইউএনও স্যাররা খবর পেয়ে আমাদের জানালে আমরা গিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করে দিয়ে আসি। পরে আবার কাটা শুরু করে। এজন্য দরকার কঠোর অভিযান। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা গেলে মাটি কাটা ও বিক্রি কমে আসবে।

এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তানজিনা খাতুনের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈকত ইসলাম বলেন, মাটি কাটার তো অনুমতি নাই। আমরা অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনা করি। কখনও পুলিশ পাঠিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। সমস্যা হলো কিছুদিন পর আবার শুরু করে। কিংবা একজনকে বন্ধ করলে অন্য জায়গায় অন্য কেউ মাটি কাটা শুরু করে। এখানে আরেকটি সমস্যা হলো, মাটির দরকার, কিন্তু মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বেপরোয়াভাবে মানুষ মাটি কাটছে ও বিক্রি করছে। আপনারা আমাদের তথ্য দেন, আমরা ব্যবস্থা নেবো।

 

 আরও পড়ুনঃ