ঢাকা ০৪:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

আজ জাতীয় শোক দিবস : পাবনায় নানা কর্মসুচী

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০২:৩০:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ অগাস্ট ২০২২
  • / 78
চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ ছবিঃ সংগৃহীত

রফিকুল ইসলাম সুইট
প্রকাশিত:২:৩০ পূ্বাহ্ন, আগষ্ট ১৪, ২০২২


কবির ভাষায় “এই ইতিহাস ভুলে যাব আজ, আমি কি তেমন সন্তান? যখন আমার পিতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান।” আজ ১৫ আগস্ট (সোমবার) জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, ইতিহাসের মহামানব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে পাবনা জেলা প্রশাসন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা জেলা পরিষদ, পাবনা পুলিশ প্রশাসন, পাবনা পৌরসভা, পাবনা জেলা আওয়ামীলীগ, পাবনা সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ, হাজী জসীম উদ্দীন কলেজ, শহীদ এম মনসুর আলী কলেজ, সকল উপজেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন নানা কর্মসচী গ্রহণ করেছে। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, কালো ব্যাচ ধারন, কোরানখানী, দোয়া মাহফিল, রচনা, চিত্রাংকন ও কবিতা প্রতিযোগীতা, বৃক্ষরোপন, গরীব দুস্থদের মাঝে উন্নত খাবার পরিবেশন, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসুচী গ্রহণ করা হয়েছে জেলার সর্বত্র। 

৪৭ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এই কালিমাময় দিনে জাতি হারিয়েছে তার গর্ব, ইতিহাসের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমানকে। একাত্তরের পরাজিত শক্তির ঘৃণ্য সর্বনাশা চক্রান্তে একদল ঘাতকের পৈশাচিকতার বলি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-পরিজন। রচিত হয় ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং নিকটাত্মীয়সহ ২৬ জনকে ওই রাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় তারা প্রাণে বেঁচে যান।

বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরঞ্জীব, তার চেতনা অবিনশ্বর। মুজিব আদর্শে শানিত বাংলার আকাশ-বাতাস, জল-সমতল। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে শেখ মুজিবুর রহমানের অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ চির প্রবহমান থাকবে। জাতির পিতা চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বিশ্বসভায় একটি উন্নয়নশীল, মর্যাদাবান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বাঙালি জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন করছে।

বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর গোটা বিশ্বে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। হত্যাকারীদের প্রতি ছড়িয়ে পড়েছিল ঘৃণার বিষবাষ্প। পশ্চিম জার্মানির নেতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী উইলি ব্রানডিট বলেছিলেন, ‘মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে, তারা যেকোনও জঘন্য কাজ করতে পারে।’
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও স্বনামধন্য সাহিত্যিক নীরদ শ্রী চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে।

‘দ্য টাইমস অব লন্ডন’র ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উলেখ করা হয়, সবকিছু সত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ, তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।

একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়, বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ এই জঘন্য হত্যাকান্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।
বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু এক-অবিচ্ছেদ্য। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম নেয়া এক শিশু, তরুণ বয়স থেকেই বাঙালি জাতির স্বাধীকার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষা জীবন ও রাজনীতি চলে পাশাপাশি। বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে জড়িয়ে ৪৭, ৫২, ৬৯, ৭০ সহ বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুর দ্বার হতে বারবার ফিরে এসেছিলেন তিনি।  বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগের কারণেই আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ।

আজ বঙ্গবন্ধু নেই রযেছে তার প্রজ্ঞার স্বাক্ষর। অসা¤প্রদায়িক রাজনীতির পুরোধা পুরুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে তিনি মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে অসা¤প্রদায়িক ‘আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করেন। বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার প্রণেতা এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবজ্ঞা পুরুষ বঙ্গবন্ধু ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সফল রূপকার। তার ৭ মার্চের ভাষণই ছিল গেরিলা যুদ্ধের কৌশল। একটি দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ৫০ দিনের মাথায় সে দেশ থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার ছিল একটি বিস্ময়কর ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর প্রজ্ঞায় এবং দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই ১৯৭২ এর ১২ মার্চ ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার মাত্র এক বছরের মধ্যে জাতিকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক সংবিধান উপহার দেন।

Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ ছবিঃ সংগৃহীত

১৯৭২ এর ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর হয়। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মানুষের পরম বন্ধু। নিজ দেশের জনগণকে নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়। জাতিসংঘ বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৭৩ সালে তাকে শান্তির জন্য জুলিও কুরি উপাধিতে ভূষিত করে। দ্রæততম সময়ে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে বাংলাদেশ ১৪২টি দেশের স্বীকৃতি লাভ করে। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন, জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ এবং ওআইসির সদস্য লাভ করে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু প্রথম বাঙালি যিনি একটি দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন। দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক সহায়তা অর্জনে সক্ষম হন।

‘৭১-এ পাকিস্তানি হায়েনারা যা করতে পারে নাই, সেই কাজটিই অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে সম্পাদন করে পাপিষ্ঠ ঘাতকরা। ঘাতকদের হাতে আরও যারা প্রাণ দিলেনঘাতকদের মূল টার্গেট ছিল যে তারা বঙ্গবন্ধুসহ তার পুরো পরিবার ও তার নিকট আত্মীয় কাউকেই পৃথিবীতে জীবিত রাখবে না। সেই অনুযায়ী তারা সেদিন ওই ঘাতকরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হত্যার এক জঘন্য উলাসে মেতে উঠেছিল। হত্যা করেছিল বিভিন্ন ঘরে ও একাধিক বাড়ি হতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং নিকট আত্মীয়সহ মোট ২৬ জনকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালোরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিহত হন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্নেল জামিল, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক। প্রায় একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণি এবং বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় পৃথক হামলা চালায়। ঘাতকদের হাতে নিহত হন শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রী আরজু মণি, আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় বেন্টু খান। সেদিন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহেনা।

পঁচাত্তর পরবর্তী অবস্থাজাতির জনককে হত্যার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশ ছিল তিমিরাচ্ছন্ন। দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব গ্রহণ করে অনির্বাচিত সরকার। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে আশ্রয়-প্রশ্রয় পায় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া হয়। এমনকি বঙ্গবন্ধু যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন তাদেরও নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ‘৭২-এর সংবিধান সংশোধন করে চার-মূলনীতি পরিবর্তন ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে সহায়তা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ১৫ আগস্টে জাতির জনকের সপরিবারে হত্যাই সব ভয়াবহতা ছাড়িয়ে গেছে। সেদিন দুগ্ধপোষ্য শিশু, অন্তঃসত্তা স্ত্রী, প্রতিবন্ধী কেউই রেহাই পায়নি। হত্যাকান্ডে খুনিদের শান্ডি নিশ্চিত না করে বরং দীর্ঘ সময় ধরে তাদের আড়াল করার অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি খুনিরা পুরস্কৃতও হয়েছে নানাভাবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। ঘাতকরা যেন নিরাপদে হত্যাকান্ড ঘটাতে পারেন সে জন্য তিনি নীরবতা পালন করেন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটিকে আইন হিসেবে অনুমোদন করেন।

ইতিহাসের সব চেয়ে কলঙ্কময় এই ঘটনায় খুনিরা অত্যন্ত প্রতাপ নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। দীর্ঘদিন জাতিকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে এ খুনের কলঙ্ক। একটি রাষ্ট্রের স্থপতিকে সপরিবারে খুনের ঘটনার পর অপরাধীদের দাম্ভিকতা প্রদর্শন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। দীর্ঘ সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে তাদের পরিবারের সব সদস্য হারানোর মর্মান্তিক বেদনা বয়ে বেড়াতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, জাতির কাছে পিতা, মাতা ও স্বজন হারানোর বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের কেউ তাদের মর্মবেদনায় কর্ণপাত করেনি। প্রতি পদে পদে খুনীদের দোসর ও মদদদানকারী সরকারের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজালে আটকে থেকেছে ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাযজ্ঞের বিচার। সময়ের পালাবদলে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ হত্যাকান্ডের বিচারের পথ উন্মুক্ত করে। বাংলাদেশের স্থপতির নির্মম-নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বিচার পেতে বাঙালী জাতিকে ৩৫টি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে ২০১০ সালের শুরুতেই ২৮ জানুয়ারি মধ্যরাতে মানবতার শত্রু নরপিশাচ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে। পাঁচ খুনীর ফাঁসি হলেও আজও নেপথ্যের কুশিলবরা রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাই এবারের শোক দিবসের সর্বত্র একই আওয়াজ- শুধু খুনী নয়, নেপথ্যের কুশিলবদেরও দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।

পাবনা জেলা প্রশাসন দুইদিন ব্যাপী ব্যাপক কর্মসুচী গ্রহন করেছে। ১৪ আগষ্ঠ সাড়ে ১০টায় চিত্রাংকন, ৩ টায় রচনা প্রতিযোগীতা, ৪ টায় কবিতা আবৃত্তি, ১৫ আগষ্ঠ সূর্য্যোদয়ের সাথে সাথে পতাকা অর্ধনমিত রাখা, ১০ টায় পুষ্পার্ঘ অর্পণ, সাড়ে ১০ টায় আলোচনা সভা, আলেখ্য অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণ, দুপুরে কোরান খানী, দোয়া, প্রার্থনা, এতিম শিশুদের উন্নত খাবার পরিবেশন সহ নানা কর্মসুচী গ্রহন করা হয়েছে। সকল উপজেলা প্রশাসন অনুরুপ কর্মসুচী গ্রহণ করেছে।

জেলা আওয়ামী লীগ শোক র‌্যালী, আলোচনা সভা, খাদ্য বিতরণ সহ দিনব্যাপী নানা কর্মসুচী গ্রহণ করেছে।

 
লেখাঃ রফিকুল ইসলাম সুইট সাংবাদিক

 


 আরও পড়ুনঃ

 আরও পড়ুনঃ


আজ জাতীয় শোক দিবস : পাবনায় নানা কর্মসুচী

প্রকাশিত সময় ০২:৩০:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ অগাস্ট ২০২২
চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ ছবিঃ সংগৃহীত

রফিকুল ইসলাম সুইট
প্রকাশিত:২:৩০ পূ্বাহ্ন, আগষ্ট ১৪, ২০২২


কবির ভাষায় “এই ইতিহাস ভুলে যাব আজ, আমি কি তেমন সন্তান? যখন আমার পিতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান।” আজ ১৫ আগস্ট (সোমবার) জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, ইতিহাসের মহামানব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে পাবনা জেলা প্রশাসন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা জেলা পরিষদ, পাবনা পুলিশ প্রশাসন, পাবনা পৌরসভা, পাবনা জেলা আওয়ামীলীগ, পাবনা সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ, হাজী জসীম উদ্দীন কলেজ, শহীদ এম মনসুর আলী কলেজ, সকল উপজেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন নানা কর্মসচী গ্রহণ করেছে। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, কালো ব্যাচ ধারন, কোরানখানী, দোয়া মাহফিল, রচনা, চিত্রাংকন ও কবিতা প্রতিযোগীতা, বৃক্ষরোপন, গরীব দুস্থদের মাঝে উন্নত খাবার পরিবেশন, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসুচী গ্রহণ করা হয়েছে জেলার সর্বত্র। 

৪৭ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এই কালিমাময় দিনে জাতি হারিয়েছে তার গর্ব, ইতিহাসের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমানকে। একাত্তরের পরাজিত শক্তির ঘৃণ্য সর্বনাশা চক্রান্তে একদল ঘাতকের পৈশাচিকতার বলি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-পরিজন। রচিত হয় ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং নিকটাত্মীয়সহ ২৬ জনকে ওই রাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় তারা প্রাণে বেঁচে যান।

বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরঞ্জীব, তার চেতনা অবিনশ্বর। মুজিব আদর্শে শানিত বাংলার আকাশ-বাতাস, জল-সমতল। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে শেখ মুজিবুর রহমানের অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ চির প্রবহমান থাকবে। জাতির পিতা চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বিশ্বসভায় একটি উন্নয়নশীল, মর্যাদাবান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বাঙালি জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন করছে।

বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর গোটা বিশ্বে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। হত্যাকারীদের প্রতি ছড়িয়ে পড়েছিল ঘৃণার বিষবাষ্প। পশ্চিম জার্মানির নেতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী উইলি ব্রানডিট বলেছিলেন, ‘মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে, তারা যেকোনও জঘন্য কাজ করতে পারে।’
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও স্বনামধন্য সাহিত্যিক নীরদ শ্রী চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে।

‘দ্য টাইমস অব লন্ডন’র ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উলেখ করা হয়, সবকিছু সত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ, তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।

একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়, বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ এই জঘন্য হত্যাকান্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।
বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু এক-অবিচ্ছেদ্য। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম নেয়া এক শিশু, তরুণ বয়স থেকেই বাঙালি জাতির স্বাধীকার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষা জীবন ও রাজনীতি চলে পাশাপাশি। বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে জড়িয়ে ৪৭, ৫২, ৬৯, ৭০ সহ বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুর দ্বার হতে বারবার ফিরে এসেছিলেন তিনি।  বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগের কারণেই আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ।

আজ বঙ্গবন্ধু নেই রযেছে তার প্রজ্ঞার স্বাক্ষর। অসা¤প্রদায়িক রাজনীতির পুরোধা পুরুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে তিনি মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে অসা¤প্রদায়িক ‘আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করেন। বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার প্রণেতা এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবজ্ঞা পুরুষ বঙ্গবন্ধু ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সফল রূপকার। তার ৭ মার্চের ভাষণই ছিল গেরিলা যুদ্ধের কৌশল। একটি দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ৫০ দিনের মাথায় সে দেশ থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার ছিল একটি বিস্ময়কর ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর প্রজ্ঞায় এবং দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই ১৯৭২ এর ১২ মার্চ ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার মাত্র এক বছরের মধ্যে জাতিকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক সংবিধান উপহার দেন।

Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ ছবিঃ সংগৃহীত

১৯৭২ এর ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর হয়। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মানুষের পরম বন্ধু। নিজ দেশের জনগণকে নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়। জাতিসংঘ বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৭৩ সালে তাকে শান্তির জন্য জুলিও কুরি উপাধিতে ভূষিত করে। দ্রæততম সময়ে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে বাংলাদেশ ১৪২টি দেশের স্বীকৃতি লাভ করে। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন, জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ এবং ওআইসির সদস্য লাভ করে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু প্রথম বাঙালি যিনি একটি দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন। দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক সহায়তা অর্জনে সক্ষম হন।

‘৭১-এ পাকিস্তানি হায়েনারা যা করতে পারে নাই, সেই কাজটিই অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে সম্পাদন করে পাপিষ্ঠ ঘাতকরা। ঘাতকদের হাতে আরও যারা প্রাণ দিলেনঘাতকদের মূল টার্গেট ছিল যে তারা বঙ্গবন্ধুসহ তার পুরো পরিবার ও তার নিকট আত্মীয় কাউকেই পৃথিবীতে জীবিত রাখবে না। সেই অনুযায়ী তারা সেদিন ওই ঘাতকরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হত্যার এক জঘন্য উলাসে মেতে উঠেছিল। হত্যা করেছিল বিভিন্ন ঘরে ও একাধিক বাড়ি হতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং নিকট আত্মীয়সহ মোট ২৬ জনকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালোরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিহত হন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্নেল জামিল, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক। প্রায় একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণি এবং বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় পৃথক হামলা চালায়। ঘাতকদের হাতে নিহত হন শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রী আরজু মণি, আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় বেন্টু খান। সেদিন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহেনা।

পঁচাত্তর পরবর্তী অবস্থাজাতির জনককে হত্যার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশ ছিল তিমিরাচ্ছন্ন। দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব গ্রহণ করে অনির্বাচিত সরকার। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে আশ্রয়-প্রশ্রয় পায় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া হয়। এমনকি বঙ্গবন্ধু যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন তাদেরও নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ‘৭২-এর সংবিধান সংশোধন করে চার-মূলনীতি পরিবর্তন ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে সহায়তা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ১৫ আগস্টে জাতির জনকের সপরিবারে হত্যাই সব ভয়াবহতা ছাড়িয়ে গেছে। সেদিন দুগ্ধপোষ্য শিশু, অন্তঃসত্তা স্ত্রী, প্রতিবন্ধী কেউই রেহাই পায়নি। হত্যাকান্ডে খুনিদের শান্ডি নিশ্চিত না করে বরং দীর্ঘ সময় ধরে তাদের আড়াল করার অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি খুনিরা পুরস্কৃতও হয়েছে নানাভাবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। ঘাতকরা যেন নিরাপদে হত্যাকান্ড ঘটাতে পারেন সে জন্য তিনি নীরবতা পালন করেন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটিকে আইন হিসেবে অনুমোদন করেন।

ইতিহাসের সব চেয়ে কলঙ্কময় এই ঘটনায় খুনিরা অত্যন্ত প্রতাপ নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। দীর্ঘদিন জাতিকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে এ খুনের কলঙ্ক। একটি রাষ্ট্রের স্থপতিকে সপরিবারে খুনের ঘটনার পর অপরাধীদের দাম্ভিকতা প্রদর্শন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। দীর্ঘ সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে তাদের পরিবারের সব সদস্য হারানোর মর্মান্তিক বেদনা বয়ে বেড়াতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, জাতির কাছে পিতা, মাতা ও স্বজন হারানোর বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের কেউ তাদের মর্মবেদনায় কর্ণপাত করেনি। প্রতি পদে পদে খুনীদের দোসর ও মদদদানকারী সরকারের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজালে আটকে থেকেছে ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাযজ্ঞের বিচার। সময়ের পালাবদলে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ হত্যাকান্ডের বিচারের পথ উন্মুক্ত করে। বাংলাদেশের স্থপতির নির্মম-নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বিচার পেতে বাঙালী জাতিকে ৩৫টি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে ২০১০ সালের শুরুতেই ২৮ জানুয়ারি মধ্যরাতে মানবতার শত্রু নরপিশাচ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে। পাঁচ খুনীর ফাঁসি হলেও আজও নেপথ্যের কুশিলবরা রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাই এবারের শোক দিবসের সর্বত্র একই আওয়াজ- শুধু খুনী নয়, নেপথ্যের কুশিলবদেরও দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।

পাবনা জেলা প্রশাসন দুইদিন ব্যাপী ব্যাপক কর্মসুচী গ্রহন করেছে। ১৪ আগষ্ঠ সাড়ে ১০টায় চিত্রাংকন, ৩ টায় রচনা প্রতিযোগীতা, ৪ টায় কবিতা আবৃত্তি, ১৫ আগষ্ঠ সূর্য্যোদয়ের সাথে সাথে পতাকা অর্ধনমিত রাখা, ১০ টায় পুষ্পার্ঘ অর্পণ, সাড়ে ১০ টায় আলোচনা সভা, আলেখ্য অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণ, দুপুরে কোরান খানী, দোয়া, প্রার্থনা, এতিম শিশুদের উন্নত খাবার পরিবেশন সহ নানা কর্মসুচী গ্রহন করা হয়েছে। সকল উপজেলা প্রশাসন অনুরুপ কর্মসুচী গ্রহণ করেছে।

জেলা আওয়ামী লীগ শোক র‌্যালী, আলোচনা সভা, খাদ্য বিতরণ সহ দিনব্যাপী নানা কর্মসুচী গ্রহণ করেছে।

 
লেখাঃ রফিকুল ইসলাম সুইট সাংবাদিক

 


 আরও পড়ুনঃ

 আরও পড়ুনঃ