ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারীদের কঠোর বিচার করা হবে —সদ্য কারামুক্ত জাকারিয়া পিন্টু

- প্রকাশিত সময় ০৪:৩৩:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 30
শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা মামলায় ফাঁসির সাজায় কারাবন্দি থেকে মুক্তি পাওয়া ঈশ্বরদী পৌর বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু বলেছেন- ‘তিন দশক আগে পাবনার ঈশ্বরদীতে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার মামলাটি ছিল স্থানীয় আওয়ামীলীগের দলীয় গ্রুপিংজনিত মামলা। সেই মিথ্যা ভিত্তিহীন সাজানো মামলায় আমরা (বিএনপি’র) ৪৭ জন নেতাকর্মী ফরমায়েশী রায়ে কারাবন্দি ছিলাম। আমিসহ স্থানীয় বিএনপি’র ৯জন শীর্ষ নেতা ফাঁসির আসামী হয়ে কারাগারে বন্দি ছিলাম।’
বিএনপি’র নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে জাকারিয়া পিন্টু বলেন- ‘ছাত্র-জনতার জীবন ও রক্তের গণ-অভ্যুত্থানের কারণে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। আমরা মুক্তি পেয়েছি। দেশবাসী স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। এই কারণে ছাত্র-জনতার নিকট আমরা চিরঋণী। তাদের সকল কর্মকান্ডে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপি নিঃস্বার্থভাবে পাশে থাকবে। ঈশ্বরদীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা হামলা চালিয়েছে, গুলিবর্ষণ করে আহত করেছে, মারপিট, ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি দলীয়ভাবে কঠোর বিচার ও শাস্তি দেওয়া হবে। তাই বিএনপি’র যেসব নেতা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হামলাকারী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বাহিনী আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে এখন নিজেদের ছত্রছায়ায় এনে বিএনপিতে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন, তাদের নাম ও বায়োডাটা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রস্তত করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঈশ্বরদী শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে জাকারিয় পিন্টু এসব কথা বলেন।
জাকারিয়া পিন্টু আরও বলেন- ‘আমাদের মুক্তি সেইদিনই স্বার্থক হবে, যেদিন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে আনতে পারবো। তিনি বিদেশ থেকেও কারাবন্দি ঈশ্বরদীর ৪৭ নেতাকর্মীর খোঁজ রেখেছেন। পরিবারকে সহযোগিতা করেছেন। আমাদের মুক্তির জন্য সার্বিকভাবে কাজ করেছেন। ঈশ্বরদী বিএনপি’র ৪৭ নেতার মুক্তির পর তার মুক্তি বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তারেক রহমান। তাই তাকে দেশে এনে বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে কাজ করতে হবে।’
একই সঙ্গে ৫ আগস্টের পর স্থানীয় বিএনপি’র নেতৃবৃন্দের কারণে কোন সাধারণ মানুষ কষ্ট পেলে, হামলা বা ভাংচুরের শিকার হয়ে থাকেন তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন জাকারিয়া পিন্টু।
এর আগে সকালে বিভিন্ন ধরণের ফুলে সজ্জিত কয়েকশত পরিবহণযোগে কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব পাবনা কারাগার থেকে জাকারিয়া পিন্টুকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেন। এরপর মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে আটঘরিয়া হয়ে ঈশ্বরদীতে সংবর্ধনা মঞ্চে আনা হয়। সেখানেই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর তৎকালিন বিরোধী দল আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ট্রেন বহরে দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়। এই মামলায় গত ২০১৯ সালের ৩ জুলাই স্থানীয় বিএনপি’র শীর্ষ ৪৭ নেতাকর্মীকে দন্ড প্রদান করেন পাবনা জেলা আদালত। এর মধ্যে ৯ জনকে ফাঁসি, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৩ জনকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। এরপর থেকে ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি ছিলেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর গত ২৭ আগস্ট/২৪ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টের আপিল বিভাগ প্রথমে ৩০ জন নেতাকর্মীকে জামিনে মুক্তি দেন। এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি/২৫ একই আদালত ফাঁসির ৯ জনসহ মামলার সকল আসামীকে খালাস দিয়ে রায় প্রদান করেছেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতি ঈশ্বরদী পৌর বিএনপি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এসএম ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, এডভোকেট জামিল আক্তার এলাহী, বিএনপি নেতা আহসান হাবিব, জাহিদুর রহমান পাতা, বিষ্টু সরকার, আব্দুর রাজ্জাক ফিরোজ, আমিনুর রহমান স্বপন, শামসুজ্জোহা পিপ্পু, আব্দুর রাজ্জাক, হুমায়ুন কবির দুলাল, সাহাবুদ্দিন সেন্টু, ইসলাম হোসেন জুয়েল, এনামুল হক, আনোয়ার হোসেন জুয়েল, জাহাঙ্গীর আলম, জাকারিয়া পিন্টুর সহদর ভাই জাকির হোসেন জুয়েল, মাহমুদ হাসান সোনামনি, মেহেদী হাসান সহ মামলা থেকে খালাস পাওয়া বিএনপি’র ৪৭ নেতাকর্মী, তাদের পরিবার, ও বিএনপি’র কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক।