সনাতন ধর্মালম্বীদের সরকারি অনুদান দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

- প্রকাশিত সময় ০৯:৩৮:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 5
পাবনার ঈশ্বরদীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আসন্ন ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজায় দরিদ্র মহলকে সরকারি অনুদান দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
তবে পূজায় সেই সরকারি অনুদান পাওয়ার আশায় এখনো বুক বেঁধে বসে আছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হতদরিদ্র এ মহলটি। কিন্তু অনুদান তো দুরের কথা অনুদানের নামে যে টাকা নেওয়া হয়েছে তাই ফেরত অনিশ্চিত হয়ে গেছে বর্তমানে।
যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না অনুদান বিষয়ে যোগাযোগ করা মুঠোফোন নম্বরেও। কষ্টাপার্জিত টাকা প্রতারনাচক্র হাতিয়ে নেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ভুক্তভোগী হতদরিদ্র মানুষগুলো। বলছিলাম উপজেলার বাঘইল দাশপাড়া গ্রামে অনুদানের নামে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনার কথা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঈশ্বরদী উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সূনীল চক্রবর্তী বাঘইল দাশপাড়া গ্রামের শ্রী শ্রী বারোয়ারী মাতৃ মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী পলাশ চন্দ্রকে জানান উপজেলা পরিষদ থেকে দূর্গাপূজা উপলক্ষ্যে নগদ ৪২০০ টাকা ও চাল-ডাল তেলসহ বেশ কিছু সরকারি অনুদান দেওয়া হবে। নিজ এলাকার ৫ জন বাসিন্দার জন্য বরাদ্দকৃত অনুদান গ্রহণ করতে উপজেলা পরিষদের একটি মোবাইল নম্বর প্রদান করে এবং সেই নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
পরে সেই নম্বরে যোগাযোগ করলে আরো কিছু অনুদান দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই প্রতারক চক্রের কথানুযায়ী উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আপাততঃ অনুদান ফরম ফাঁকা নেই। আপনি বাড়তি অনুদান নিতে হলে ফরম ফিলাপ বাবদ ৬০০ টাকা করে দিতে হবে বলে জানান।
শ্রী শ্রী বারোয়ারী মাতৃ মন্দির কমিটির সভাপতি পলাশ চন্দ্র নিজ এলাকার অন্যান্য বাসিন্দাদের সঙ্গে অনুদানের ব্যাপারে কথা বললে ৩৬টি পরিবারের নিকট থেকে মোট ২১ হাজার ৬ শত টাকা উত্তোলন করে উর্ধ্বতন কর্মকতার দেওয়া বিকাশ নম্বরে (০১৮৮০-৩৪৬৬৬৫) সেই টাকা প্রেরণ করা করা হয়। পরবর্তীতে ওই নম্বর থেকে পুনরায় যোগাযোগ করলে সরকারি অনুদানের গাড়ি খুব শিগগিরই তাদের প্রাপ্য অনুদান পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়।
এদিকে টাকা প্রেরনের পরের দিন সূনীল চক্রবর্তীকে বিষয়টি জানালে তিনি নিশ্চিত করেন নম্বরটি ভুয়া, তিনি আরো জানান নম্বরটি সঠিক কিনা তা যাচাই করে জানাবো বলে নানারকম তালবাহানা করে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। শুধু তাই নয় উপজেলা থেকে দেওয়া নম্বরে টাকা পাঠানোর পর থেকে সেই নম্বরেও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছেনা। এভাবে কষ্টাপার্জিত টাকা প্রতারনার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়ায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা অভিযোগ করে জানিয়েছেন এ প্রতারণা চক্রের সঙ্গে পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সূনীল চক্রবর্তী জড়িত রয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগী শ্রী জয় চন্দ্র দাশ, ভারতী রাণী ও পারুল নামে কয়েকজন বলেন, আমাদের ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপুজায় উপজেলা থেকে অনুদান দেওয়া হবে বলে আমাদের কষ্টে উপার্জিত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সূনীল চক্রবর্তী যে ফোন নম্বর দিয়েছে সেই নম্বরে টাকা পাঠানোর পর থেকে নম্বরটি বন্ধ। অনুদান তো দুরের কথা আমাদের থেকে নেওয়া টাকাটাও তারা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে। এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবী ও আমাদের টাকা ফেরত চাই।
বাঘইল দাশপাড়া শ্রী শ্রী বারোয়ারী মাতৃ মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী পলাশ চন্দ্র বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সূনীল চক্রবর্তী আমাকে মুঠোফোনে ৫ জনের নামে অনুদান বরাদ্দ হয়েছে জানিয়ে উপজেলা পরিষদে যোগাযোগের একটি নম্বর দিলে সেখানে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সেই অনুদান গ্রহণ করতে সরল মনে ৩৬ জনের থেকে ২১ হাজার ৬ শত টাকা প্রেরণ করা হয়। টাকা দেওয়ার পর থেকে ওই নম্বরটি বন্ধ পাচ্ছি। এদিকে সূনীল চক্রবর্তীর সঙ্গেও কোন যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি চাই দরিদ্র এসব মানুষের টাকা ফেরত দেওয়া হোক এবং এমন প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবী করছি।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সূনীল কুমার চক্রবর্তী বলেন, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচয় দিয়ে অনুদানের কথা জানালে আমি দরিদ্রদের কথা ভেবে তাদের নম্বরটি দিয়েছি কিন্তু বুঝতে পারিনাই এটা প্রতারক চক্র। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করার প্রস্তুতি চলছে। দেখা যাক কি হয়?
পাবনা জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রভাশ ভদ্রা বলেন, বিষয়টি স্বল্প পরিসরে জানতে পেরেছি কিন্তু এত বড় প্রতারণা হয়েছে সেটা জানা ছিলনা। এ ব্যাপারে সূনীল চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
ঈশ্বরদী উপজেলা সমাজসেবা অফিস আতিকুর রহমান জানান, আসন্ন দূর্গাপূজা উপলক্ষে আমাদের এমন কোন অনুদান আসেনি আর আমাদের অফিস থেকে কাউকে ফোন করা হয়নি।