ঢাকা ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

প্রথম করোনাভাইরাস আবিষ্কার করেছিলেন যে নারী

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৬:২৫:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০
  • / 145

সর্বপ্রথম মানবদেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিলেন যে নারী, তার নাম জুন আলমেইডা। তিনি ছিলেন স্কটল্যান্ডের অধিবাসী। একজন বাসচালকের কন্যা তিনি, যিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্কুল ছেড়েছিলেন।

জুন আলমেইডা সমসাময়িক যুগে ভাইরাস ইমেজিংয়ের ক্ষেত্রে একজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। তার কাজ বর্তমান সময়ের এই ভাইরাস মহামারির সময় আবারো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

যদিও কোভিড-১৯ একটি নতুন ধরনের ভাইরাস, তবে এটি করোনাভাইরাসেরই একটি প্রজাতি। যেটি ড. আলমেইডা ১৯৬৪ সালে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের গবেষণাগারে প্রথমবারের মত শনাক্ত করেছিলেন।

১৯৩০ সালে জুন হার্টে এই ভাইরোলজিস্টের জন্ম। এরপর গ্লাসগোর আলেজান্দ্রা পার্কের কাছাকাছি টেনেমেন্ট এলাকায় বেড়ে ওঠেন তিনি।

আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে খুব সামান্য পড়াশোনা করেই স্কুল ছাড়েন তিনি। তবে গ্লাসগো রয়্যাল ইনফার্মারিতে হিস্টোপ্যাথলজিতে গবেষণাগার কর্মী হিসাবে কাজ শুরু করেন।
পরবর্তীতে পেশাগত জীবনে উন্নতির জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান। ১৯৫৪ সালে তিনি এনরিক আলমেইডা নামে একজন ভেনেজুয়েলান শিল্পীকে বিয়ে করেন।

চিকিৎসা বিষয়ক লেখক জর্জ উইন্টারের তথ্য অনুযায়ী, এই দম্পতি ও তাদের মেয়ে পরপবর্তীতে কানাডার টরেন্টোতে পাড়ি জমান। সেখানে অন্টারিও ক্যান্সার ইন্সটিটিউটে কাজ করার সময় ড. আলমেইডা একটি ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপ দিয়ে অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দেন।

তিনি এমন একটি পদ্ধতির আবিষ্কার করেছিলেন যাতে অ্যান্টিবডি সংহত করার মাধ্যমে ভাইরাসগুলিকে আরও পরিষ্কার এবং সূক্ষ্মভাবে দেখা সম্ভব হয়।

মি. উইন্টার বলেছেন, তার এই প্রতিভার বিষয়টি যুক্তরাজ্যের মনোযোগ কাড়ে।

১৯৬৪ সালে তাকে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে কাজ করার জন্য প্রস্তাব দিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনা হয়। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর এখানেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে চিকিৎসা দেয়া হয়।

দেশে ফেরার পর তিনি ডক্টর ডেভিড টাইরেলের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন। ডক্টর টাইরেল তখন উল্টশ্যায়ারের সালসবিউরিতে সাধারণ ঠাণ্ডা নিয়ে গবেষণা কাজ পরিচালনা করছিলেন।

উইন্টার বলছেন, ডক্টর টাইরেল স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে অনুনাসিক ধোয়ার ওপর গবেষণা করছিলেন তখন। তাদের দল দেখতে পায় যে, তারা বেশ কয়েকটি সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাস বৃদ্ধি করতে পারছিলেন, কিন্তু সবগুলো নয়।

তার মধ্যে একটি বিশেষভাবে তাদের নজরে আসে। সেটির নাম দেয়া হয়েছিল বি-৮১৪, যা এসেছিল ১৯৬০ সালে সারের একটি বোর্ডিং স্কুলের একজন ছাত্রের কাজ থেকে।

তারা দেখতে পান, তারা সাধারণ সর্দি-কাশির কয়েকটি লক্ষণ স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে তৈরি করতে পারলেও, সেগুলো তাদের নিয়মিত কোষের ভেতরে আর বেড়ে উঠতে পারে না।

তবে স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে প্রত্যঙ্গের মধ্যে কিছু বৃদ্ধি দেখিয়েছিল। সেটা দেখে অবাক হয়ে ড. টাইরেল ভাবলেন, এটা কোন বৈদ্যুতিক মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা উচিত।

তারা সেসব নমুনা জুন আলমেইডাকে পাঠান, যিনি নমুনার মধ্যে ভাইরাস কণা দেখতে পান। সেগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো দেখতে হলেও পুরোপুরি তা নয়।

সেসময়ে তিনি যা শনাক্ত করেছিলেন, সেটিই বিশ্বে করোনাভাইরাস হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

উইন্টার বলছেন, ড. আলমেইডা ইঁদুরের মধ্যে হেপাটাইটিস এবং মুরগির সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস তদন্ত করার সময় এর আগে এ ধরণের কণাগুলি দেখেছিলেন।

তা সত্ত্বেও, পিয়ার-রিভিউড জার্নালে পাঠানো তার নথিটি বাতিল করে দেয়া হয়েছিল। কারণ ”রেফারিরা বলেছিলেন, তিনি যেসব ছবি দিয়েছেন, সেগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কণার বাজে ধরণের চিত্র। ”

বি-৮১৪ আবিষ্কারের বিষয়ে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি করোনাভাইরাসের প্রথম যে চিত্র দেখেছিলেন, সেটি প্রকাশিত হয় দুই বছর পরে জেনারেল ভাইরোলজি জার্নালে।

উইন্টারের তথ্য অনুসারে, ড. টাইরেল ও ড. আলমেইডার পাশাপাশি অধ্যাপক টনি ওয়াটারসন, যিনি সেন্ট থমাসের দায়িত্বে ছিলেন, তারা ওই ভাইরাসের নামকরণ করেন করোনাভাইরাস, কারণ ভাইরাসের চারপাশ জুড়ে অনেকটা মুকুটের মতো সাদৃশ্য ছিল।

ড. আলমেইডা পরবর্তীতে লন্ডনের পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল স্কুলে কাজ করেন, যেখানে তিনি ডক্টরেট সম্মানে ভূষিত হন।

ওয়েলকাম ইন্সটিটিউটে তিনি তার পেশাজীবন শেষ করেন যেখানে ভাইরাস ইমেজিংয়ের এর ক্ষেত্রে তার নামে বেশ কয়েকটি স্বত্বাধিকার হয়।

ওয়েলকাম ছেড়ে দেয়ার পর ড. আলমেইডা একজন ইয়োগা প্রশিক্ষক হন। তবে পরবর্তীতে ১৯৮০ এর দশকে তিনি এইচআইভি ভাইরাসের ইমেজিং এর ক্ষেত্রে একজন পরামর্শক হিসাবে কাজ করেন।

২০০৭ সালে, ৭৭ বছর বয়সে জুন আলমেইডা মৃত্যুবরণ করেন।

অবশেষে মৃত্যুর তের বছর পরে তিনি তার সেই কাজের জন্য স্বীকৃতি পাচ্ছেন, যা বর্তমানে বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করা ভাইরাসটি সম্পর্কে ধারনা পেতে সহায়তা করছে।

প্রথম করোনাভাইরাস আবিষ্কার করেছিলেন যে নারী

প্রকাশিত সময় ০৬:২৫:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০

সর্বপ্রথম মানবদেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিলেন যে নারী, তার নাম জুন আলমেইডা। তিনি ছিলেন স্কটল্যান্ডের অধিবাসী। একজন বাসচালকের কন্যা তিনি, যিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্কুল ছেড়েছিলেন।

জুন আলমেইডা সমসাময়িক যুগে ভাইরাস ইমেজিংয়ের ক্ষেত্রে একজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। তার কাজ বর্তমান সময়ের এই ভাইরাস মহামারির সময় আবারো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

যদিও কোভিড-১৯ একটি নতুন ধরনের ভাইরাস, তবে এটি করোনাভাইরাসেরই একটি প্রজাতি। যেটি ড. আলমেইডা ১৯৬৪ সালে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের গবেষণাগারে প্রথমবারের মত শনাক্ত করেছিলেন।

১৯৩০ সালে জুন হার্টে এই ভাইরোলজিস্টের জন্ম। এরপর গ্লাসগোর আলেজান্দ্রা পার্কের কাছাকাছি টেনেমেন্ট এলাকায় বেড়ে ওঠেন তিনি।

আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে খুব সামান্য পড়াশোনা করেই স্কুল ছাড়েন তিনি। তবে গ্লাসগো রয়্যাল ইনফার্মারিতে হিস্টোপ্যাথলজিতে গবেষণাগার কর্মী হিসাবে কাজ শুরু করেন।
পরবর্তীতে পেশাগত জীবনে উন্নতির জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান। ১৯৫৪ সালে তিনি এনরিক আলমেইডা নামে একজন ভেনেজুয়েলান শিল্পীকে বিয়ে করেন।

চিকিৎসা বিষয়ক লেখক জর্জ উইন্টারের তথ্য অনুযায়ী, এই দম্পতি ও তাদের মেয়ে পরপবর্তীতে কানাডার টরেন্টোতে পাড়ি জমান। সেখানে অন্টারিও ক্যান্সার ইন্সটিটিউটে কাজ করার সময় ড. আলমেইডা একটি ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপ দিয়ে অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দেন।

তিনি এমন একটি পদ্ধতির আবিষ্কার করেছিলেন যাতে অ্যান্টিবডি সংহত করার মাধ্যমে ভাইরাসগুলিকে আরও পরিষ্কার এবং সূক্ষ্মভাবে দেখা সম্ভব হয়।

মি. উইন্টার বলেছেন, তার এই প্রতিভার বিষয়টি যুক্তরাজ্যের মনোযোগ কাড়ে।

১৯৬৪ সালে তাকে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে কাজ করার জন্য প্রস্তাব দিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনা হয়। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর এখানেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে চিকিৎসা দেয়া হয়।

দেশে ফেরার পর তিনি ডক্টর ডেভিড টাইরেলের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন। ডক্টর টাইরেল তখন উল্টশ্যায়ারের সালসবিউরিতে সাধারণ ঠাণ্ডা নিয়ে গবেষণা কাজ পরিচালনা করছিলেন।

উইন্টার বলছেন, ডক্টর টাইরেল স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে অনুনাসিক ধোয়ার ওপর গবেষণা করছিলেন তখন। তাদের দল দেখতে পায় যে, তারা বেশ কয়েকটি সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাস বৃদ্ধি করতে পারছিলেন, কিন্তু সবগুলো নয়।

তার মধ্যে একটি বিশেষভাবে তাদের নজরে আসে। সেটির নাম দেয়া হয়েছিল বি-৮১৪, যা এসেছিল ১৯৬০ সালে সারের একটি বোর্ডিং স্কুলের একজন ছাত্রের কাজ থেকে।

তারা দেখতে পান, তারা সাধারণ সর্দি-কাশির কয়েকটি লক্ষণ স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে তৈরি করতে পারলেও, সেগুলো তাদের নিয়মিত কোষের ভেতরে আর বেড়ে উঠতে পারে না।

তবে স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে প্রত্যঙ্গের মধ্যে কিছু বৃদ্ধি দেখিয়েছিল। সেটা দেখে অবাক হয়ে ড. টাইরেল ভাবলেন, এটা কোন বৈদ্যুতিক মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা উচিত।

তারা সেসব নমুনা জুন আলমেইডাকে পাঠান, যিনি নমুনার মধ্যে ভাইরাস কণা দেখতে পান। সেগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো দেখতে হলেও পুরোপুরি তা নয়।

সেসময়ে তিনি যা শনাক্ত করেছিলেন, সেটিই বিশ্বে করোনাভাইরাস হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

উইন্টার বলছেন, ড. আলমেইডা ইঁদুরের মধ্যে হেপাটাইটিস এবং মুরগির সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস তদন্ত করার সময় এর আগে এ ধরণের কণাগুলি দেখেছিলেন।

তা সত্ত্বেও, পিয়ার-রিভিউড জার্নালে পাঠানো তার নথিটি বাতিল করে দেয়া হয়েছিল। কারণ ”রেফারিরা বলেছিলেন, তিনি যেসব ছবি দিয়েছেন, সেগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কণার বাজে ধরণের চিত্র। ”

বি-৮১৪ আবিষ্কারের বিষয়ে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি করোনাভাইরাসের প্রথম যে চিত্র দেখেছিলেন, সেটি প্রকাশিত হয় দুই বছর পরে জেনারেল ভাইরোলজি জার্নালে।

উইন্টারের তথ্য অনুসারে, ড. টাইরেল ও ড. আলমেইডার পাশাপাশি অধ্যাপক টনি ওয়াটারসন, যিনি সেন্ট থমাসের দায়িত্বে ছিলেন, তারা ওই ভাইরাসের নামকরণ করেন করোনাভাইরাস, কারণ ভাইরাসের চারপাশ জুড়ে অনেকটা মুকুটের মতো সাদৃশ্য ছিল।

ড. আলমেইডা পরবর্তীতে লন্ডনের পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল স্কুলে কাজ করেন, যেখানে তিনি ডক্টরেট সম্মানে ভূষিত হন।

ওয়েলকাম ইন্সটিটিউটে তিনি তার পেশাজীবন শেষ করেন যেখানে ভাইরাস ইমেজিংয়ের এর ক্ষেত্রে তার নামে বেশ কয়েকটি স্বত্বাধিকার হয়।

ওয়েলকাম ছেড়ে দেয়ার পর ড. আলমেইডা একজন ইয়োগা প্রশিক্ষক হন। তবে পরবর্তীতে ১৯৮০ এর দশকে তিনি এইচআইভি ভাইরাসের ইমেজিং এর ক্ষেত্রে একজন পরামর্শক হিসাবে কাজ করেন।

২০০৭ সালে, ৭৭ বছর বয়সে জুন আলমেইডা মৃত্যুবরণ করেন।

অবশেষে মৃত্যুর তের বছর পরে তিনি তার সেই কাজের জন্য স্বীকৃতি পাচ্ছেন, যা বর্তমানে বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করা ভাইরাসটি সম্পর্কে ধারনা পেতে সহায়তা করছে।