ঢাকা ১০:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪
ঐতিহাসিক

বিরামপুরে কালের সাক্ষী রতনপুর জমিদার বাড়ি

বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
  • প্রকাশিত সময় ০৫:৩০:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর ২০২২
  • / 80

বিরামপুরে কালের সাক্ষী রতনপুর জমিদার বাড়ি। ছবি: স্বতঃকণ্ঠ


দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের জমিদার বাড়িটি অযত্ম অবহেলায় পড়ে রয়েছে, দেখার কেউ নেই, এই জমিদার বাড়ীর দরজা, জানালা কিছুই নেই কোন প্রবেশের বাধা। স্থানীয়া জানায় জমিবাড়ীর দ্বিতল ভবন অনেকটা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। তারা রাতের আঁধারে সবই চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। তবে অনেকটা সুরক্ষিত রয়েছে কংঙ্কিটের দেয়ালের ইটগুলো। নিপুনগাথুনির দেয়ালের ইটগুলো এখনো অনেকটা চকচকে রয়ে গেছে। থরে থরে সাজানো দ্বিতল ভবনের ১৪টি ঘরের দেয়াল, ছাদে রয়েছে অনেক নির্দশন। সিঁড়িটি বর্তমান স্থাপত্বের একটি দৃষ্টান্ত। নেই কর্তাবাবুদের নজর। সংস্কার আর নজরদারির অভাবে প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনস্বরূপ জমিদার বাড়িটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তবুও প্রতিদিনই এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে আসে পর্যটকরা।  

উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের রতনপুর বাজারের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত এই প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনস্বরূপ জমিদার বংশের বাড়ির কথা। অষ্টাদশ শতকে পর আর ঊনবিংশ শতাব্দির কিছু আগে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করার জন্য নির্মিত হয় বাড়িটি। যুগ যুগ ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এটি। বাড়িটি সংস্কার করলে এটিই হতে পারে  পর্যটকদের জন্য এক দর্শনীয় স্থান। স্থানীয়রা জানায়, দ্রুত এটিকে সংস্কার করে সংরক্ষণ করা হবে। তবে স্থানীদের দাবি সংরক্ষণ করে জনগনের জন্য উম্মুক্ত করে দিলে পর্যটকদের আগমন ঘটবে।

বৃহস্পতিবার সকালে রতনপুর জমিদার বাড়িতে গিয়ে দেখাযায়, চারদিকে নিরবতা। পাখিরা কিঁচির মিঁচির করে ডাকা ডাকি করেছেন। মাথা উঁচু করে এখন বীরদর্পে জমিদারি ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনস্বরূপ জমিদার বাড়িটির অনেটা অরক্ষিত। জানালা দরজা কিছুই নেই। অপরিচ্ছন্ন বাড়িটিতে বেশ কিছু গরু ছাগল বসে বিশ্রাম করছেন। অষ্টাদশ শতকে ছাদে লোহার গাড়ার দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল এই ভবনটি। ভবনের দেয়ালে আগাছা,পাশঘেঁষে ঝোঁপঝাড় বাসাবেঁধে ভবনের উত্তরপাশে ইউনিয়ন ভূমি অফিস,পূর্ব উত্তরকোণে হাফেজিয়া মাদ্রাসা আর দক্ষিণদিকে আছে ইসলামীয়া মাদ্রাসা। পশ্চিমপাশে রয়েছে আমের বাগান। সেখানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত ইসলামিক মিশন হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে নিয়মিত এখনো রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। সেই সাথে এলাকার গরীব দুঃখী মহিলাদের বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

মিশন হাসপাতালের ডা. আনোয়ারুল ইসলাম জানায়, ১৯৮৬ সালে এই জমিদার বাড়ীতে প্রথম ইসলামিক মিশন হাসপাতাল গড়ে ওঠে, পরে ইসলামী ফাউন্ডেশনের মিশন হাসপাতালের ২ একর ৮৬ শতক সম্পত্তি আজও পর্যন্ত সরকারীকরণ হয়নি।

জনশ্রুতি আছে, অষ্টাদশ শতকে ব্রিটিশরা দিনাজপুরের বিরামপুরসহ ফুলবাড়ি জমিদারের পক্ষে আশপাশের অঞ্চলগুলোতে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করার জন্য রাজকুমার সরকার নামের এক ব্যক্তিকে বিরামপুর উপজেলার এলাকায় নিয়োগ করেন। সেই সময় ওই এলাকায় কোন রাজপ্রাসাদ ছিলনা। অস্থায়ীভাবে একটি ঘর নির্মাণ করে রাজকুমার সরকার সেখানে খাজনা আদায় করতেন। রাজকুমারের খাজনা আদায়ে পারদর্শীতায় ও নৈপুণ্যে  ততকালিন ফুলবাড়ির জমিদার সাড়ে ছয়শ বিঘা জমি উপহারসহ তার নিজের বোনের সঙ্গে বিয়ে দেন। একদিকে জমিদারের ছোট বোন আর বেশ কিছু জমি পেয়ে সৌভাগ্যক্রমে সাধারণ খাজনা আদায়কারী থেকে জমিদার বনে যান রাজকুমার সরকার।

শুধু তাই নয়, সম্পদের লালশায় রাজকুমার সেই সময় স্থানীয় রঘু হাসদা নামের অঢেল সম্পত্তির মালিক আদিবাসিকে সুকৌশলে ফাঁদে ফেলে। তার কাছ থেকে ধার করে নেয়ার কথা বলে বেশ কয়েক বস্তা কাঁচ টাকা হাতিয়ে পাশবর্তী অন্য জমিদারের কাছ থেকে ৩ শ বিঘা জমি নিজের নামে কিনে নেন। এ ঘটনার ২ বছর পর রঘু হাসদার আড়াইশো বিঘার ফলের বাগান চতুরতায় নিজের থলেতে ভরানোর কয়েক মাসপর সুকৌশলে উপকারী রঘু হাসদাকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করেন। সেই সময় রাজকুমার সরকারের ১২শ বিঘার ফলদ, বনজ ঔষধি জমির মালিকবনে যান তিনি। চতুর রাজকুমার নামের নব্য জমিদার আরাম আয়েশের জন্য বিলাস বহুল অভিজাত এই সুদৃশ্য দ্বিতল অট্রালিকাটি নির্মাণ করেন।

রাজ কুমারের ছিল দুইছেলে রতন কুমার ও রখুনী কান্ত বাবু। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় রতন কুমার ১৬ বছর বয়সে পাশে মন্দিরের পুকুরে স্নান করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারাযান। ছেলের শোকে বিহব্বল আচ্ছন্নের মত নির্বিকার হন রাজা। এর কিছুদিন পর ছেলের শোকে কাতরতায় রাজকুমার নিজের জীবন প্রদীপও নিভে যায়। বাবার মৃত্যুর পর ওই জমিদার বাড়ির পরবর্তী অধ্যায়ে উত্তরাধীকারী হিসেবে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে একমাত্র ছেলে রখুনী কান্ত বাবুই পৈত্রিক সূত্রে জমিদারী লাভ করেন।

রখুনী কান্ত বাবু বেশভূষা ছিল পরিপাটি। চলতেন দাম্ভিকতা নিয়ে, নিয়ম নীতিতে ছিলেন বেশ কঠোর। জমিদারী থাকাকালীন সময়ে তার বাড়িতে ১০০টি বিড়াল পুশেছিলেন, যে বিড়ালগুলোর দুধের বাটি দিলেও দুধ পান করত না যতক্ষন পর্যন্ত মালিকের হুকুম না হত। প্রজারা বাড়িতে প্রবেশ করার পর প্রস্থান করলে সেই স্থান ধুয়ে মুছে পরিস্কার করা হত।

জানা যায়, জমিদার রখুনী কান্ত বাবুর কোন সন্তান ছিলনা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হলে রখুনী কান্ত বাবু স্বস্ত্রীক আঁধারে কলকাতার উদ্দ্যেশে তার বংশধরদের কাছে পাড়ি দেন। তখন থেকে  জমিদার বাড়িটিতে খাঁনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর কিছুদিন পর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনের  উত্তর পাশে আর একটি নতুন ভবন তৈরি করা হয়েছে যেটি বর্তমানে খানপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

জমিদার বাড়ীর পাশে রয়েছে ইসলামিক মিশন, মাদ্রাসা, মসজিদ, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানসহ বিশাল একটি পুকুর। বর্তমানে রখুনী কান্ত বাবুর ১২শ বিঘা জমি ফলদ, বনজ ও ঔষধির সেই বাগান রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে অনেক সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। যতটুকুর হদিস মিলেছে ততটুকুই দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মহোদয় জমিদার রখুনী কান্ত বাবুর সম্পত্তি ১নং খাস খতিয়ানে অন্তর্ভূক্তি করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার বলেন, আমি যতদূর জানি রতনপুর জমিদার বাড়িটির মালিক ছিলেন রখুনী কান্ত বাবু। যিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। সেই থেকে বাড়িটি অরক্ষিত অবস্থায় আছে। জমিদার বাড়িটি সংস্কারের বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রততাত্তিক অধিদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি এবং জেলা প্রসাশককে বিষয়টি অবগত করেছি। তিনি আরও বলেন, প্রত্নতাত্বিক অধিদপ্তরের সম্মতি পেলেই এটি পর্যটকদের আর্কষন বাড়াতে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে জমিগুলো খাস হওয়াই অনেকটা জটিলতা আছে।

এই রকম আরও টপিক

ঐতিহাসিক

বিরামপুরে কালের সাক্ষী রতনপুর জমিদার বাড়ি

প্রকাশিত সময় ০৫:৩০:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর ২০২২

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের জমিদার বাড়িটি অযত্ম অবহেলায় পড়ে রয়েছে, দেখার কেউ নেই, এই জমিদার বাড়ীর দরজা, জানালা কিছুই নেই কোন প্রবেশের বাধা। স্থানীয়া জানায় জমিবাড়ীর দ্বিতল ভবন অনেকটা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। তারা রাতের আঁধারে সবই চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। তবে অনেকটা সুরক্ষিত রয়েছে কংঙ্কিটের দেয়ালের ইটগুলো। নিপুনগাথুনির দেয়ালের ইটগুলো এখনো অনেকটা চকচকে রয়ে গেছে। থরে থরে সাজানো দ্বিতল ভবনের ১৪টি ঘরের দেয়াল, ছাদে রয়েছে অনেক নির্দশন। সিঁড়িটি বর্তমান স্থাপত্বের একটি দৃষ্টান্ত। নেই কর্তাবাবুদের নজর। সংস্কার আর নজরদারির অভাবে প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনস্বরূপ জমিদার বাড়িটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তবুও প্রতিদিনই এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে আসে পর্যটকরা।  

উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের রতনপুর বাজারের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত এই প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনস্বরূপ জমিদার বংশের বাড়ির কথা। অষ্টাদশ শতকে পর আর ঊনবিংশ শতাব্দির কিছু আগে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করার জন্য নির্মিত হয় বাড়িটি। যুগ যুগ ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এটি। বাড়িটি সংস্কার করলে এটিই হতে পারে  পর্যটকদের জন্য এক দর্শনীয় স্থান। স্থানীয়রা জানায়, দ্রুত এটিকে সংস্কার করে সংরক্ষণ করা হবে। তবে স্থানীদের দাবি সংরক্ষণ করে জনগনের জন্য উম্মুক্ত করে দিলে পর্যটকদের আগমন ঘটবে।

বৃহস্পতিবার সকালে রতনপুর জমিদার বাড়িতে গিয়ে দেখাযায়, চারদিকে নিরবতা। পাখিরা কিঁচির মিঁচির করে ডাকা ডাকি করেছেন। মাথা উঁচু করে এখন বীরদর্পে জমিদারি ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনস্বরূপ জমিদার বাড়িটির অনেটা অরক্ষিত। জানালা দরজা কিছুই নেই। অপরিচ্ছন্ন বাড়িটিতে বেশ কিছু গরু ছাগল বসে বিশ্রাম করছেন। অষ্টাদশ শতকে ছাদে লোহার গাড়ার দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল এই ভবনটি। ভবনের দেয়ালে আগাছা,পাশঘেঁষে ঝোঁপঝাড় বাসাবেঁধে ভবনের উত্তরপাশে ইউনিয়ন ভূমি অফিস,পূর্ব উত্তরকোণে হাফেজিয়া মাদ্রাসা আর দক্ষিণদিকে আছে ইসলামীয়া মাদ্রাসা। পশ্চিমপাশে রয়েছে আমের বাগান। সেখানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত ইসলামিক মিশন হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে নিয়মিত এখনো রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। সেই সাথে এলাকার গরীব দুঃখী মহিলাদের বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

মিশন হাসপাতালের ডা. আনোয়ারুল ইসলাম জানায়, ১৯৮৬ সালে এই জমিদার বাড়ীতে প্রথম ইসলামিক মিশন হাসপাতাল গড়ে ওঠে, পরে ইসলামী ফাউন্ডেশনের মিশন হাসপাতালের ২ একর ৮৬ শতক সম্পত্তি আজও পর্যন্ত সরকারীকরণ হয়নি।

জনশ্রুতি আছে, অষ্টাদশ শতকে ব্রিটিশরা দিনাজপুরের বিরামপুরসহ ফুলবাড়ি জমিদারের পক্ষে আশপাশের অঞ্চলগুলোতে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করার জন্য রাজকুমার সরকার নামের এক ব্যক্তিকে বিরামপুর উপজেলার এলাকায় নিয়োগ করেন। সেই সময় ওই এলাকায় কোন রাজপ্রাসাদ ছিলনা। অস্থায়ীভাবে একটি ঘর নির্মাণ করে রাজকুমার সরকার সেখানে খাজনা আদায় করতেন। রাজকুমারের খাজনা আদায়ে পারদর্শীতায় ও নৈপুণ্যে  ততকালিন ফুলবাড়ির জমিদার সাড়ে ছয়শ বিঘা জমি উপহারসহ তার নিজের বোনের সঙ্গে বিয়ে দেন। একদিকে জমিদারের ছোট বোন আর বেশ কিছু জমি পেয়ে সৌভাগ্যক্রমে সাধারণ খাজনা আদায়কারী থেকে জমিদার বনে যান রাজকুমার সরকার।

শুধু তাই নয়, সম্পদের লালশায় রাজকুমার সেই সময় স্থানীয় রঘু হাসদা নামের অঢেল সম্পত্তির মালিক আদিবাসিকে সুকৌশলে ফাঁদে ফেলে। তার কাছ থেকে ধার করে নেয়ার কথা বলে বেশ কয়েক বস্তা কাঁচ টাকা হাতিয়ে পাশবর্তী অন্য জমিদারের কাছ থেকে ৩ শ বিঘা জমি নিজের নামে কিনে নেন। এ ঘটনার ২ বছর পর রঘু হাসদার আড়াইশো বিঘার ফলের বাগান চতুরতায় নিজের থলেতে ভরানোর কয়েক মাসপর সুকৌশলে উপকারী রঘু হাসদাকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করেন। সেই সময় রাজকুমার সরকারের ১২শ বিঘার ফলদ, বনজ ঔষধি জমির মালিকবনে যান তিনি। চতুর রাজকুমার নামের নব্য জমিদার আরাম আয়েশের জন্য বিলাস বহুল অভিজাত এই সুদৃশ্য দ্বিতল অট্রালিকাটি নির্মাণ করেন।

রাজ কুমারের ছিল দুইছেলে রতন কুমার ও রখুনী কান্ত বাবু। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় রতন কুমার ১৬ বছর বয়সে পাশে মন্দিরের পুকুরে স্নান করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারাযান। ছেলের শোকে বিহব্বল আচ্ছন্নের মত নির্বিকার হন রাজা। এর কিছুদিন পর ছেলের শোকে কাতরতায় রাজকুমার নিজের জীবন প্রদীপও নিভে যায়। বাবার মৃত্যুর পর ওই জমিদার বাড়ির পরবর্তী অধ্যায়ে উত্তরাধীকারী হিসেবে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে একমাত্র ছেলে রখুনী কান্ত বাবুই পৈত্রিক সূত্রে জমিদারী লাভ করেন।

রখুনী কান্ত বাবু বেশভূষা ছিল পরিপাটি। চলতেন দাম্ভিকতা নিয়ে, নিয়ম নীতিতে ছিলেন বেশ কঠোর। জমিদারী থাকাকালীন সময়ে তার বাড়িতে ১০০টি বিড়াল পুশেছিলেন, যে বিড়ালগুলোর দুধের বাটি দিলেও দুধ পান করত না যতক্ষন পর্যন্ত মালিকের হুকুম না হত। প্রজারা বাড়িতে প্রবেশ করার পর প্রস্থান করলে সেই স্থান ধুয়ে মুছে পরিস্কার করা হত।

জানা যায়, জমিদার রখুনী কান্ত বাবুর কোন সন্তান ছিলনা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হলে রখুনী কান্ত বাবু স্বস্ত্রীক আঁধারে কলকাতার উদ্দ্যেশে তার বংশধরদের কাছে পাড়ি দেন। তখন থেকে  জমিদার বাড়িটিতে খাঁনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর কিছুদিন পর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনের  উত্তর পাশে আর একটি নতুন ভবন তৈরি করা হয়েছে যেটি বর্তমানে খানপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

জমিদার বাড়ীর পাশে রয়েছে ইসলামিক মিশন, মাদ্রাসা, মসজিদ, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানসহ বিশাল একটি পুকুর। বর্তমানে রখুনী কান্ত বাবুর ১২শ বিঘা জমি ফলদ, বনজ ও ঔষধির সেই বাগান রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে অনেক সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। যতটুকুর হদিস মিলেছে ততটুকুই দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মহোদয় জমিদার রখুনী কান্ত বাবুর সম্পত্তি ১নং খাস খতিয়ানে অন্তর্ভূক্তি করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার বলেন, আমি যতদূর জানি রতনপুর জমিদার বাড়িটির মালিক ছিলেন রখুনী কান্ত বাবু। যিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। সেই থেকে বাড়িটি অরক্ষিত অবস্থায় আছে। জমিদার বাড়িটি সংস্কারের বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রততাত্তিক অধিদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি এবং জেলা প্রসাশককে বিষয়টি অবগত করেছি। তিনি আরও বলেন, প্রত্নতাত্বিক অধিদপ্তরের সম্মতি পেলেই এটি পর্যটকদের আর্কষন বাড়াতে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে জমিগুলো খাস হওয়াই অনেকটা জটিলতা আছে।