ঢাকা ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

ঈশ্বরদীতে নারী কেলেংকারীতে শ্রীঘরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি:
  • প্রকাশিত সময় ১১:৪০:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
  • / 289

বিয়ের প্রলোভনে ভাড়া বাসায় রেখে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে ধর্ষণ করে বিয়ে করতে অস্বীকার করায় ধর্ষণ মামলায় শ্রীঘরে গেলেন ঈশ্বরদী পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম শাওন (২৬)। শাওন ঈশ্বরদী শহরের পূর্বটেংরি ঈদগাহ রোড এলাকার মোঃ শহীদুল ইসলামের ছেলে।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার। 

এলাকাবাসী, থানা ও ভুক্তভোগির সুত্রে জানা যায়, নাটোর সিংড়া এলাকার মৃত আমির আলী সরদারের মেয়ে রুপা খাতুন (২৪) ঈশ্বরদী ইপিজেডে চাকরী করে। ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতা শাওন ও রুপার পরিচয় ঘটে। এরপর প্রেম ও বিয়ের প্রলোভনে শাওনের নিজবাড়িসহ স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে তারা বসবাস করে। এভাবে তিন বছর ধরে বসবাস করাসহ ব্যবসা করার জন্য কয়েকদফায় রূপার নিকট থেকে শাওন টাকা নেয়। কিন্তু বিয়ে করে না। শেষ পর্যন্ত গত দুই মাস পুর্বে রূপা বাধ্য হয়ে বিয়ের দাবীতে শাওনের বাড়িতেই গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তখন শাওনের বাবা, মা, বোনসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নারী নেতৃদের সহযোগিতায় রূপাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর রূপার সঙ্গে শাওন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। ফলে রূপা ঈশ্বরদীতে থেকে শাওনের খোঁজ করে। অবশেষে গত মঙ্গলবার রাতে রূপা ঈশ্বরদী রেলগেটস্থ বাস টার্মিনালে শাওনকে দেখতে পেয়ে জাপটে ধরে। সেখানে তারা মারপিট শুরু করে। বিষয়টি দেখে প্রত্যক্ষদশরীরা থানায় খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের দুইজনকে থানায় নিয়ে যায়। থানায় বিয়ের আশ্বাস দিলে রূপা ও শাওনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরের দিন বিয়ে করতে অস্বীকার করায় গত বুধবার রাতে রূপা আবার বিয়ের দাবীতে প্রেমিক শাওনের বাড়িতে অবস্থান করে অনশন শুরু করে। পৌরসভায় স্থানীয় কাউন্সিলর আব্দুল আওয়াল মিন্টুসহ জনপ্রতিনিধি বিষয়টি সমাধান করতে না পেরে থানায় খবর দেয়। তখন আমবাগান পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ প্রেমিক শাওনের বাড়ি গিয়ে তাদের থানায় নিয়ে যায়। শাওন বিয়ে করতে অস্বীকার করায় প্রেমিকা রূপা বাদী হয়ে শাওনের নামে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। এই ঘটনায় আওয়ামী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা দলীয় লোকজনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। 

প্রেমিকা রূপা কান্নাজনিত কন্ঠে জানান, আমাকে শাওনের বিয়ে করতেই হবে। প্রেমের সম্পর্ক ধরে আমাকে ধর্ষণ করে সেই চিত্র মোবাইলে ভিডিও করে। এরপর থেকে ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হুমকি দিয়ে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে আমাকে স্ত্রী হিসেবে ব্যবহার করেছে। টাকা পয়সা নিয়েছে। শাওনের পরিবারও আমাদের সম্পর্ক জানে। কিন্তু এখন বিয়ে করতে অস্বীকার করছে। আমার তো আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ সবাই জানে শাওন আমার স্বামী। এখন যদি জানে আমাদের বিয়ে না হয়েই ৩ বছর ধরে স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করছি তাহলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় নেই। 

ঈশ্বরদী পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম শাওন জানান, রূপা আমার ভাল বন্ধু। এই জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিলো। সখ্যতাও ছিলো। আমার বাড়িতেও রূপা ভাড়াটিয়া হিসেবে ছিলো। রূপা ভাল মেয়ে নয় জানতে পেরে আমার পরিবার তাকে আমাদের বাসা থেকে বের করে দেয়। এখন আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলেও শাওন অভিযোগ করে। 

শাওনের বাবা শহীদুল ইসলাম জানান, রূপার সঙ্গে আমার ছেলে শাওনের প্রেমের কোন সম্পর্ক ছিলো না। রূপা আমাদের বাসার ভাড়াটিয়া ছিলো। কিন্তু রূপার কক্ষে বহিরাগত ছেলেদের আসতে দেখে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। রূপা খারাপ মেয়ে। এভাবেই ঈশ্বরদী শহরের আরো দুই একজন ছেলের নিকট থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও দাবী করেন শাওনের বাবা। 

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার জানান, রূপা বাদী হয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম শাওনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছে। শাওনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রূপাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও শাওনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

ঈশ্বরদীতে নারী কেলেংকারীতে শ্রীঘরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

প্রকাশিত সময় ১১:৪০:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩

বিয়ের প্রলোভনে ভাড়া বাসায় রেখে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে ধর্ষণ করে বিয়ে করতে অস্বীকার করায় ধর্ষণ মামলায় শ্রীঘরে গেলেন ঈশ্বরদী পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম শাওন (২৬)। শাওন ঈশ্বরদী শহরের পূর্বটেংরি ঈদগাহ রোড এলাকার মোঃ শহীদুল ইসলামের ছেলে।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার। 

এলাকাবাসী, থানা ও ভুক্তভোগির সুত্রে জানা যায়, নাটোর সিংড়া এলাকার মৃত আমির আলী সরদারের মেয়ে রুপা খাতুন (২৪) ঈশ্বরদী ইপিজেডে চাকরী করে। ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতা শাওন ও রুপার পরিচয় ঘটে। এরপর প্রেম ও বিয়ের প্রলোভনে শাওনের নিজবাড়িসহ স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে তারা বসবাস করে। এভাবে তিন বছর ধরে বসবাস করাসহ ব্যবসা করার জন্য কয়েকদফায় রূপার নিকট থেকে শাওন টাকা নেয়। কিন্তু বিয়ে করে না। শেষ পর্যন্ত গত দুই মাস পুর্বে রূপা বাধ্য হয়ে বিয়ের দাবীতে শাওনের বাড়িতেই গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তখন শাওনের বাবা, মা, বোনসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নারী নেতৃদের সহযোগিতায় রূপাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর রূপার সঙ্গে শাওন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। ফলে রূপা ঈশ্বরদীতে থেকে শাওনের খোঁজ করে। অবশেষে গত মঙ্গলবার রাতে রূপা ঈশ্বরদী রেলগেটস্থ বাস টার্মিনালে শাওনকে দেখতে পেয়ে জাপটে ধরে। সেখানে তারা মারপিট শুরু করে। বিষয়টি দেখে প্রত্যক্ষদশরীরা থানায় খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের দুইজনকে থানায় নিয়ে যায়। থানায় বিয়ের আশ্বাস দিলে রূপা ও শাওনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরের দিন বিয়ে করতে অস্বীকার করায় গত বুধবার রাতে রূপা আবার বিয়ের দাবীতে প্রেমিক শাওনের বাড়িতে অবস্থান করে অনশন শুরু করে। পৌরসভায় স্থানীয় কাউন্সিলর আব্দুল আওয়াল মিন্টুসহ জনপ্রতিনিধি বিষয়টি সমাধান করতে না পেরে থানায় খবর দেয়। তখন আমবাগান পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ প্রেমিক শাওনের বাড়ি গিয়ে তাদের থানায় নিয়ে যায়। শাওন বিয়ে করতে অস্বীকার করায় প্রেমিকা রূপা বাদী হয়ে শাওনের নামে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। এই ঘটনায় আওয়ামী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা দলীয় লোকজনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। 

প্রেমিকা রূপা কান্নাজনিত কন্ঠে জানান, আমাকে শাওনের বিয়ে করতেই হবে। প্রেমের সম্পর্ক ধরে আমাকে ধর্ষণ করে সেই চিত্র মোবাইলে ভিডিও করে। এরপর থেকে ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হুমকি দিয়ে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে আমাকে স্ত্রী হিসেবে ব্যবহার করেছে। টাকা পয়সা নিয়েছে। শাওনের পরিবারও আমাদের সম্পর্ক জানে। কিন্তু এখন বিয়ে করতে অস্বীকার করছে। আমার তো আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ সবাই জানে শাওন আমার স্বামী। এখন যদি জানে আমাদের বিয়ে না হয়েই ৩ বছর ধরে স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করছি তাহলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় নেই। 

ঈশ্বরদী পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম শাওন জানান, রূপা আমার ভাল বন্ধু। এই জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিলো। সখ্যতাও ছিলো। আমার বাড়িতেও রূপা ভাড়াটিয়া হিসেবে ছিলো। রূপা ভাল মেয়ে নয় জানতে পেরে আমার পরিবার তাকে আমাদের বাসা থেকে বের করে দেয়। এখন আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলেও শাওন অভিযোগ করে। 

শাওনের বাবা শহীদুল ইসলাম জানান, রূপার সঙ্গে আমার ছেলে শাওনের প্রেমের কোন সম্পর্ক ছিলো না। রূপা আমাদের বাসার ভাড়াটিয়া ছিলো। কিন্তু রূপার কক্ষে বহিরাগত ছেলেদের আসতে দেখে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। রূপা খারাপ মেয়ে। এভাবেই ঈশ্বরদী শহরের আরো দুই একজন ছেলের নিকট থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও দাবী করেন শাওনের বাবা। 

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার জানান, রূপা বাদী হয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম শাওনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছে। শাওনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রূপাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও শাওনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।