ঢাকা ০৬:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

শিশুতোষ কবি বন্দে আলী মিয়া’র জন্মের ১১৪ বছর

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ১১:৫৮:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২০
  • / 211

‘‘আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর
থাকি সেথা সবে মিলে-নাহি কেহ পর।
পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই
এক সাথে খেলি আর পাঠশালে যাই।
আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান
আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ।
মাঠ ভরা ধার আর জল ভরা দীঘি
চাঁদের কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি।
আম গাছ জাম গাছ বাঁশ ঝাড় যেন
মিলে মিশে আছে তারা আপনার হেন।
সকালে সোনার রবি পূর্ব দিকে ওঠে
পাখী ডাকে বায়ু বয় নানা ফুল ফোটে।” (প্রথম কবিতা)

আজ ১৭ জানুয়ারি ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। পাবনার সাহিত্যাঙ্গনের এক উজ্জল নক্ষত্র। কবি বন্দে আলী মিয়া। এইক্ষণে তিনি আমাদের মাঝে নেই। তবুও পৃথিবীতে তিনি এসেছিলেন এদিনে। জন্মের ১১৪ বছরে পদার্পন করলেন। এই কবির স্মৃতিটুকু আমাদের মাঝে-মাঝেই তার কাছে টেনে নেয়। শিশু সাহিত্যের নান্দনিক কবি/ আমাদের গ্রামের কবি/ বিখ্যাত ময়নামতিচরের কবি, পাবনার কৃতি সন্তান কবি ‘বন্দে আলী মিয়া’। কবি বন্দে আলী মিয়া রচিত শিশুতোষ সাহিত্য ছড়া ও গান এদেশের মানুষের মাঝে এখনও সচলতার পরিচয় বহন করে। বাংলাদেশের কবিদের মধ্যে শিশু সাহিত্যের বিশেষ অবস্থান ছিল কবি বন্দে আলী মিয়ার। আর পাবনার সাহিত্যাঙ্গনের সাহিত্যের সিদ্ধপুরুষদের মধ্যে অনন্য একটি প্রতিভার নাম।

পাবনা জেলা শহরের রাধানগর মহল­ার উমেদ আলী মিয়া ও মা নেকজান নেছার কোল জুড়ে আসেন কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি। শহরের রাধানগর মহল্লায় তিনি ক্রমান্বয়ে বেড়ে ওঠেন। ১৯২৩ সালে কবি বন্দে আলী মিয়া পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের পূর্ব-দক্ষিণ কোনায় অবস্থিত রাধানগর মজুমদার একাডেমি (বর্তমানে আর, এম একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ হিসেবে পরিচিত) থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯২৭ সালে কলকাতা বৌ-বাজারে ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমি থেকে চারুকলায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৩০ সালে কর্মের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে কলকাতা করপোরেশন স্কুলে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ২০ বছর চাকরি করে অবশেষে তিনি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে অবসন গ্রহণ করেন।

কবি বন্দে আলী মিয়া ছিলেন একাধারে গীতিকার, উপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও অসংখ্য শিশুতোষ সাহিত্যের এক অনন্য প্রতিভাধর সাহিত্যিক। সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন জীবনীকার ও স্মৃতিকথার কুশলী লেখক। তিনি সমস্ত জীবন বাংলা সাহিত্যের ভূবনে আচ্ছাদিত ছিলেন। কবির জীবনকালে নানা সমস্যার-জটিলতার সন্মুখিন হয়েছেন। সুখ যেমন তার সাথী ছিল তেমনি দুঃখও ছিল ওতোপ্রতভাবে জড়িত। সুখে ছিল শান্তি আর দুঃখে ছিল নির্মমতা ও অস্থিরতা। কবি বন্দে আলী মিয়া দুঃখকে আকঁড়ে ধরে ধৈর্য্যতার সঙ্গে প্রবাহমান সময় অতিবাহিত করলেও কখনো সাহিত্য চর্চায় পিছুটান হননি। তার অসাধারণ লেখনির মাঝে তুলে ধরেছেন সমাজের কথা; সেই সঙ্গে দেশের কথা। তিনি আর্থিক দৈনদশায় নিমজ্জিত ছিলেন এমন সময় তার গেছে। তারপরেও তিনি বাংলার প্রকৃতি, মাটি ও মানুষকে আপন করে এই সমাজেই প্রতিষ্ঠার চেষ্টা তার ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে চালিয়ে গেছেন।

জনশ্রুতি আছে, টাকা পয়সার অভাবে তিনি বেনামে মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে প্রকাশকের কাছে একবার বই বিক্রয় করেছিলেন। তার লেখা আরও অনেক গ্রন্থ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এমন গ্রন্থও কবির আছে যে, তার আর দ্বিতীয় কোনও পাণ্ডুলিপি তার কাছে ছিল না। তিনি কোনো সময়ে তার রচনাকৃত কোনো বই দরকার হলে পরিচিত জনের কাছে সহযোগিতা চাইতেন বইটি সংগ্রহ করার জন্য। কারণ অনেক সময় তার নিজের কপিও কাছে থাকতো না। সরল প্রকৃতির সাদাসিদে মানুষ হিসেবেই তিনি সর্বজন পরিচিত ছিলেন। আর্থিক দৈন্যদশার পরও কারও কাছে কোনোদিন হাত পেতে নিজে কখনো মাথা নত করেননি। বিভিন্ন লেখক কবি বন্দে আলী মিয়াকে বিশিষ্ট বিদেশি সাহিত্যিকদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, তিনি মুখে মুখে গল্প বলায় যথেষ্ট পারদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন। যদিও বিশ্বখ্যাত রুশ লেখক ও উপন্যাসিক ‘লেভ টলস্টয়ের’ যেমন মুখে মুখে গল্প বলায় পারদর্শী ছিলেন, তেমনি কবি বন্দে আলী মিয়ারও পারদর্শী ছিলেন।

কবি বন্দে আলী মিয়া কলকাতা, ঢাকা ও রাজশাহী এ তিনটি স্থানই তার কর্মস্থল ছিল। কবি জীবনের শেষ দিকে বাংলাদেশ বেতার রাজশাহীর স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি সময় সুযোগ পেলেই শিশুদের সঙ্গে হাসি ঠাট্টায় মেতে যেতেন। তিনি সুযোগ পেলেই ছড়াকারে কথা বলতেন বা কোনো কাগজ-কলম হাতের কাছে পেলেই লিখতেন ছড়া- ‘ঢুলু-ঢুলু আঁখি-এ রাতে কোথায় থাকি! কি বা করি কি বা খাই; কোথায় মেজবান-ধারে-কাছে কেহ নাই।’ কবি বেতারে কাজ করার সময় ছোটদের আসর “সবুজ মেলা” পরিচালনা করতেন এবং তিনি ‘গল্প দাদু’ নামে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি বেতারে “ছেলে ঘুমালো” অনুষ্ঠানের জন্য প্রায়ই নতুন নতুন গল্প রচনা করতেন। তিনি তিরিশ-চলি­শ দশকের প্রথম তিরিশ বছর কলকাতায় অবস্থান করেছেন। এই অবস্থান সময়ে কবি বন্দে আলী মিয়া কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অবনীন্দ্রনাথ, সজনিকান্ত দাশ, প্রমথ চৌধুরী, নরেশ দেব, হুমায়ুন কবির, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, একে ফজলুল হক, ওস্তাদ জমির উদ্দিন খাঁ, সৈয়দ এমদাদ আলী, শেকোয়ার অনুবাদক আশরাফ আলী খান, শাহাদৎ হোসেন প্রমুখ বরেণ্য সাহিত্যিকদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত সূত্রে তিনি সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। কখনও কখনও গান রচনায় তিনি আকৃষ্ট হতেন। আবার অনেকে তাকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতাও করেছেন।

কবি বন্দে আলী মিয়ার প্রথম কাব্য ‘ময়নামতির চর’ ১৯৩২ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রশংসার বাণীতে শিরোভূষণ করে প্রকাশ লাভ করে। ময়নামতির চর কাব্যগ্রন্থের ভূমিকা লিখতে গিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার স্ব-হস্তে লিখেছেন- “তোমার ময়নামতীর চর কাব্যখানিতে গঙ্গা চরের দৃশ্য এবং তার জীবনযাত্রার প্রত্যক্ষ ছবি দেখা গেল। পড়ে বিশেষ আনন্দ পেয়েছি। তোমার রচনা সহজ এবং স্পষ্ট, কোথায়ও ফাঁকি নেই। সমস্ত সরের অনুরাগ দিয়ে তুমি দেখেছ এবং কলমের অনায়াস শুদ্ধিতে লিখেছ। তোমার সুপরিচিত প্রাদেশিক গ্রাম্য শব্দগুলি যথাস্থানে ব্যবহার করতে তুমি কুণ্ঠিত হওনি। তাতে করে কবিতাগুলি আরো সরস হয়ে উঠেছে। পদ্মাতীরের পাড়াগাঁয়ের এমন নিকটস্পর্শ বাংলা ভাষায় আর কোনো কবিতায় পেয়েছি বলে আমার মনে পড়ছে না। বাংলা সাহিত্যে তুমি আপন বিশেষ স্থানটি অধিকার করতে পেরেছ বলে আমি মনে করি” (২৬ জুলাই ১৯৩২)।

তরুণ কবি বন্দে আলী মিয়া ২৬ বছর বয়সে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। সাহিত্যের অন্যদিকে তিনি নিয়োজিত না থাকলেও কেবলমাত্র শিশুসাহিত্যের স্রষ্টা হিসেবেই অমর হয়ে থাকবেন নিঃসন্দেহে। কবি বন্দে আলী মিয়ার শিশুতোষ গ্রন্থের সংখ্যা ১০৫টি এবং অন্যান্য বিষয়ে লেখা বইগুলো যোগ করলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৬টিতে।

তাঁর উলে­খযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে ‘কুচ-বরণ কন্যা’, ‘গুপ্তধন’, ‘শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালা’, ‘চোর-জামাই’, ‘ঝিনুক-পরী’, ‘দুই বন্ধু’, ‘যেমন কর্ম-তেমন ফল’, ‘ডাইনি বউ’, ‘শিশুদের বিষাদসিন্ধু’ ইত্যাদি। কবির বেশকিছু অপ্রকাশিত গ্রন্থও রয়েছে। এদিকে, প্রফেসর ডক্টর গোলাম সাকলায়েন প্রণিত বাংলা একাডেমি প্রকাশিত (১৯৮৮) কবি বন্দে আলী মিয়া জীবনীগ্রন্থে উলে­খ আছে উপন্যান ১০ খানা, নাটক ৬ খানা, অনুবাদ ১ খানা, স্মৃতিকথা ১ খানা ও সঙ্গীত গ্রন্থ ৩ খানা। চোরজামাই শিশুতোষ বইটি লিখে তিনি প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন।

কবি কলকাতায় সিটি করপোরেশন পরিচালিত স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যে ২০ বছর চাকরি করেছেন। তখন তার সহকর্মী ছিলেন কবি আব্দুল কাদির। ‘বিকাশ’ একটি পত্রিকার নাম। এই পত্রিকার মাধ্যমেই কবি বন্দে আলী মিয়া সাংবাদিকতা শুরু করেন। এক সময়ে তিনি ‘বিকাশ’ পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৭ সালে তার লেখা ছড়া ও কবিতা ভারতের বেঙ্গল প্রেসিসিডেন্সি গেজেট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কলকাতা ও ঢাকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাহিত্য সাময়িকীতে তার লেখা প্রকাশ হতো। তিরিশ-চলি­শ দশকের কোনো এক সময়ে কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্যে আসার ফলে তার মনে নতুন প্রেরণার সৃষ্টি হয় এবং এর ফলশ্রুতিতে তিনি কণ্ঠশিল্পীদের বিভিন্ন ধরনের গান রচনা করতে শুরু করেন। কাজী নজরুল ইসলামের নির্দেশে তিনি গীতি আলেখ্য “কারবালা” রচনা করেন। তার গানগুলো তৎকালের রেকর্ড কোম্পানি রেকর্ড করেন। দুইটি রেকর্ড চারখণ্ডে সমাপ্ত করা হয়।

টুইন রেকর্ড এফ.টি- ৪৮৪১-৪২ এটি ১৯৩৭ সালে প্রকাশ লাভ করে এবং অংশগ্রহণ করে ‘মুসলিম ফ্রেন্ডস্’। ঠিক এর কিছু আগে প্রখ্যাত শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহম্মদ কবি বন্দে আলী মিয়া দ্বারা রচিত ‘ওয়াজ মাহফিল’ টুইন রেকর্ডে বাণীবদ্ধ করেন। অপরটি টুইন রেকর্ড এফ.টি- ৪৭৭৯। এটি খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে। জনপ্রিয়তা অর্জনের ফলে কবি শুধু টুইন রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত না থেকে তিনি মেগাফোন, কলোম্বিয়া, হিন্দুস্থান, তাজ, সেনোলা, রিগ্যাল রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করেন। কবি নাটিকাই শুধু রচনাই করতেন না; তাতে তিনি অভিনয় এবং নিজে পরিচালনাও করতেন। শিল্পী ও সুরকার আব্দুল হালিম চৌধুরী বন্দে আলী মিয়ার বেশ কয়েকটি গান হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানিতে কণ্ঠ দেন।

তাঁর লেখা ও গাওয়া গান হলো- জিন্দেগী তোর আখের হইল (এইচ-৮৯৯) ও ইয়া এলাহী কবুল কর (এইচ-৮৯৯) অপরদিকে, আরও ইসলামী গানসহ বিভিন্ন ধরনের গান সম্পর্কে জানা যায়, যেমন- ইব্রাহিম খলিলুলাহ-খোদা তালার প্রিয়জন, আবদুল কাদের জিলানী-বুজর্গ পীর, লা’শারিকালা নামে নাওখানি বাইয়া, জেয়ারতের রওযা ভূমে, রোজা নামাজ, মরু মদিনায়, এসো পথিক, পিয়াল পাতার, এতো জ্বালা জানি যদি, চেয়েছিনু মালাখানি, ভালবেসে, দখিনা বাতাস বধু, দল বেঁধে চলে মেঘ, শতেক তারার মাঝে, আমার ভূবনে মধু পূর্ণিমা আলো, পিয়াল বনের পাখি, তোমার পথের ধারে, তোমার কামনার রূপধরে ইত্যাদি। তিরিশ-চলি­শের দশকে কবি বন্দে আলী মিয়ার কলকাতা রংমহল থিয়েটার হলে ‘বৌদিদির রেস্টুরেন্ট’ অভিনীত হলে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

প্রায় ৪ মাসাধিকাল ধরে কবির ‘কমিক’ এ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। কবি বন্দে আলী মিয়া তার রচিত ‘কমিক’ নাটকে অভিনয় থেকে যে রয়্যালটি পেয়েছিলেন তা দিয়ে তিনি রাজশাহী বেতারের কাছে একটি বাড়ি কিনেন। তার রচিত নাটিকাগুলো হলো- (রেকর্ড কোডসহ)-পরলোক প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড (জেএনজে-৫৩৭০), শাদ্দাদের স্বর্গ প্রথম ও দ্বিতীয়খণ্ড (এফটি-১২১৫৩), যাকাত প্রথম, দ্বিতীয় (১২৯৩৪), তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ড (এফটি-১২৯৩৫), ইসলামের জয় ১ ও ২ খন্ড (এইচ-১১৬৩৭), মিলাদ মাহফিল ১ থেকে ৪ (কিউএস-৩০৩-৪), নামাজের মহিমা ১ থেকে ২ খণ্ড (জেএনজি-৫৫৩৫), ওয়াজ মাহফিল ১ থেকে ৪ খণ্ড (৪৭৭৯-৮০), কারবালা ১ থেকে ৪ খণ্ড (এফটি-৪৮৪১-৪২), মদিনা দর্শন ১ থেকে ৪ খণ্ড (এফটি-১৩২২৪-২৫), বিয়ে বাড়ী ১ থেকে ৪ খণ্ড (জেএনজি-৫০৯৯), রাবেয়া ১ থেকে ৬ খণ্ড (কিউএস-২৫১-২), হাজী মহসিন ১ থেকে ৬ খণ্ড (এফটি-১২৬৩৫-৩৬-৩৭), আলাদীন ১ থেকে ৬ খণ্ড (জেএনজি- ৫৪৩৫-৩৬-৩৭), সত্যপীর ১ থেকে ৮ খণ্ড (আরএল-১১৫৮-৫৯-৬০-৬১), পতিভক্তি ১ থেকে ২ খণ্ড (এইচআরটি-১১৬), সোহরাব রোস্তম ১ থেকে ৪ খণ্ড (জেএজি-৫২৭১-৭২), বৌদিদি রেস্টুরেন্ট কমিক নক্সা (১) ও নক্সা (২) (কিউএস-৬১১), রাঞ্ছারাম ঢ্যাং-কমিক নক্সা-১ ও নক্সা-২ (কিউএস-৬২৩), পয়দায়েছে দুনিয়া প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড (এফটি-১৩৬৩১), বেহেশ্ত, দোজখ (এফটি-১৩১৭০) এবং বাংলার কৃষি ১ ও ২ খণ্ড (জেএনজি-৫৫১৪)।

১৯৫০ এর পর তিনি ঢাকায় আসেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় মুদ্রণের পাশাপাশি তিনি বই-পুস্তক ও ছেপে বের করতে থাকেন। ১৯৬১ সালে ইস্ট-বেঙ্গল পাবলিসার্স তার পরোক্ষ সম্পাদনায় প্রকাশ করে শিশুতোষ পত্রিকা ‘ময়ুরপঙ্খি’। কবি বন্দে আলী মিয়া জীবনের সন্ধিক্ষণে এসে রাজশাহীর ‘প্রতীতি’ সম্পাদনা করেন। প্রথমবর্ষে উত্তরা সাহিত্য মজলিশের যে কার্যকরী সংসদ গঠিত হয় তার সদস্য তিনি ছিলেন। সাহিত্য মজলিশের প্রথম সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের স্বনামধন্য সাহিত্যিক প্রয়াত গোপাল হালদার। কবি বন্দে আলী মিয়া জীবনকালে অনেক পদক, পুরস্কার ও অভিনন্দন পেয়েছিলেন। সবশেষে রাজশাহীর উত্তরা সাহিত্য মজলিশ কবিকে এক হাজার টাকা নজরানা দিয়ে সম্বর্ধনা জানায় এবং কবি সংবর্ধনা সংখ্যা বের করেন। ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কবি বন্দে আলী মিয়ার ‘ধরিত্রী’ কাব্য প্রকাশ লাভ করে। এ কাব্যের ‘বিদায় প্রহর’ কবিতার অংশে বিশেষ প্রতীতির বন্দে আলী সংখ্যায় শিরোভূষণ পূর্বক প্রকাশ লাভ করে।

‘বিদায় প্রহর’ কবিতার সেই অংশ বিশেষ নিম্নোলে­খিত-
এবারে আমার শেষ হয়ে এলো
প্রবাসের দিনগুলি
যাবার বেলায় বারে বারে হায়
মন ওঠে তবু দুলি।
কেটেছে হেথায় কয়টি বছর
সুখে-দুখে বেদনায়
স্মরণ ভরিয়া রহিল সে সব
ভুলিব না কভু তায়।
আমার স্মরণে তোমাদের ছবি
জেগে রবে অনুক্ষণ
বিদায় এবার ফুরায়েছে মোর
প্রবাসের প্রয়োজন।’ (শেষ কবিতা)

বরেণ্য প্রতিভার অধিকারী পাবনার কৃতি সন্তান কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯৭৯ সালের ২৭ জুন রাজশাহীর কাজিরহাট অঞ্চলের নিজ বাসভবনে সকাল ১১টা ১০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে কবি বন্দে আলী মিয়ার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। জীবনীগ্রন্থসহ বিভিন্ন জন তার সংসার জীবন নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বিত। বাবা-মা’র সম্মতিক্রমে তিনি পাবনা শহরের জেলাপাড়া মহল্লার রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কারণ অনেকের মতে, তিনি কলকাতা, রাজশাহী ও ঢাকায় সংসার পেতেছিলেন। এমনও শোনা যায় কবি বন্দে আলী মিয়ার নওগাঁ জেলাতেও আরও একটি সংসার ছিল। কোন সালের কত তারিখের কি বারে তিনি বিবাহ করেন তা জানা না গেলেও হেনা, শামসুন্নাহার ও পরীবানু নামে অপর তিন স্ত্রীর নামও পাওয়া যায়।

জেলার স্বনামধন্য, সাহিত্যাঙ্গনের প্রতিটি শাখায় যার বিচরণ। তাকে স্মরণেই কবির নিজ জেলায় কবি বন্দে আলী মিয়া স্মরণ পরিষদ, কবি বন্দে আলী মিয়া শিশু একাডেমি গড়ে তোলা হলেও কার্যত তা সক্রিয় নয়। এছাড়াও প্রথম থেকে তার নামকরণে জেলার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তরস্থ কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে। স¤প্রতি পাবনা পৌরসভা একটি সড়কের নামকরণ এবং বন্দে আলী মিয়া সুপার মার্কেট নামে একটি অভিজাত শপিং মল গড়ছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটি তার নামের করা হয়েছে। শিশুদের কবি, গল্প দাদু ও গ্রামের কবি বন্দে আলী মিয়ার স্মৃতি রক্ষায় সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি রয়েছে পাবনাবাসীর।

পাবনার সচেতন মহল ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাদের অভিমত, কবি বন্দে আলী মিয়া একজন নানা গুনে প্রতিভাবান সাহিত্যিক। যার বিচরণ সাহিত্যের প্রতিটি পরতে পরতে। অথচ যিনি মোটর মালিক নন, তার নামে বাস টার্মিনালের নামকরণ, যিনি ব্যবসায়ী নন, তার নামে সুপার মার্কেট। যা হতাশা ছাড়া কিছুই নয়। তাদের দাবী, স্বনামধন্য এই কবি ছিলেন একজন উন্নতমানের চিত্রশিল্পী। তাই শিক্ষানগরী পাবনায় তার নামে একটি চিত্রকর্ম প্রশিক্ষণ স্কুল বা একাডেমি কিংবা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা। পাশাপাশি পাবনার ঐতিহ্যবাহি বিদ্যাপীঠ সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা মেডিকেল কলেজ এমন কি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবাস নতুন নতুন কোন ভবনে তার নামে নামকরণ করা।

কবি বন্দে আলী মিয়ার জন্মদিন বা মৃত্যুদিন এক সময়ে নীরবেই কেটে যেতো। গত কয়েক বছর হলো জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করলেও নিয়মিত নয়। প্রতিবারই কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে জেলার প্রথম ‘কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়’ এর পক্ষ থেকে নেয়া হয় বিভিন্ন কর্মসূচি। অন্যদিকে, শহরের রাধানগরে কবির বসতভিটা ‘কবিকুঞ্জ’ জীর্ণশীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। জেলাবাসী তথা কবি অনুরাগী এবং ভক্তদের দাবি বাড়িটি সংস্কার করে কবির রেখে যাওয়া কর্ম-স্মৃতিগুলোর সংরক্ষণ করে একটি আর্কাইভ বা সংগ্রহশালা করা হোক। কবির রেখে যাওয়া কর্মগুলো যথাযথ সংরক্ষণ করতে পারলে তরুণ প্রজন্ম তথা আগামী প্রজন্ম এই স্বনামধন্য কবি, কবির সকল স্তরের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে জানতে, শিখতে ও বুঝতে পারবে এমন প্রত্যাশা পাবনাবাসীর।

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী
পাবনা।

শিশুতোষ কবি বন্দে আলী মিয়া’র জন্মের ১১৪ বছর

প্রকাশিত সময় ১১:৫৮:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২০

‘‘আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর
থাকি সেথা সবে মিলে-নাহি কেহ পর।
পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই
এক সাথে খেলি আর পাঠশালে যাই।
আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান
আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ।
মাঠ ভরা ধার আর জল ভরা দীঘি
চাঁদের কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি।
আম গাছ জাম গাছ বাঁশ ঝাড় যেন
মিলে মিশে আছে তারা আপনার হেন।
সকালে সোনার রবি পূর্ব দিকে ওঠে
পাখী ডাকে বায়ু বয় নানা ফুল ফোটে।” (প্রথম কবিতা)

আজ ১৭ জানুয়ারি ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। পাবনার সাহিত্যাঙ্গনের এক উজ্জল নক্ষত্র। কবি বন্দে আলী মিয়া। এইক্ষণে তিনি আমাদের মাঝে নেই। তবুও পৃথিবীতে তিনি এসেছিলেন এদিনে। জন্মের ১১৪ বছরে পদার্পন করলেন। এই কবির স্মৃতিটুকু আমাদের মাঝে-মাঝেই তার কাছে টেনে নেয়। শিশু সাহিত্যের নান্দনিক কবি/ আমাদের গ্রামের কবি/ বিখ্যাত ময়নামতিচরের কবি, পাবনার কৃতি সন্তান কবি ‘বন্দে আলী মিয়া’। কবি বন্দে আলী মিয়া রচিত শিশুতোষ সাহিত্য ছড়া ও গান এদেশের মানুষের মাঝে এখনও সচলতার পরিচয় বহন করে। বাংলাদেশের কবিদের মধ্যে শিশু সাহিত্যের বিশেষ অবস্থান ছিল কবি বন্দে আলী মিয়ার। আর পাবনার সাহিত্যাঙ্গনের সাহিত্যের সিদ্ধপুরুষদের মধ্যে অনন্য একটি প্রতিভার নাম।

পাবনা জেলা শহরের রাধানগর মহল­ার উমেদ আলী মিয়া ও মা নেকজান নেছার কোল জুড়ে আসেন কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি। শহরের রাধানগর মহল্লায় তিনি ক্রমান্বয়ে বেড়ে ওঠেন। ১৯২৩ সালে কবি বন্দে আলী মিয়া পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের পূর্ব-দক্ষিণ কোনায় অবস্থিত রাধানগর মজুমদার একাডেমি (বর্তমানে আর, এম একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ হিসেবে পরিচিত) থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯২৭ সালে কলকাতা বৌ-বাজারে ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমি থেকে চারুকলায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৩০ সালে কর্মের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে কলকাতা করপোরেশন স্কুলে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ২০ বছর চাকরি করে অবশেষে তিনি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে অবসন গ্রহণ করেন।

কবি বন্দে আলী মিয়া ছিলেন একাধারে গীতিকার, উপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও অসংখ্য শিশুতোষ সাহিত্যের এক অনন্য প্রতিভাধর সাহিত্যিক। সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন জীবনীকার ও স্মৃতিকথার কুশলী লেখক। তিনি সমস্ত জীবন বাংলা সাহিত্যের ভূবনে আচ্ছাদিত ছিলেন। কবির জীবনকালে নানা সমস্যার-জটিলতার সন্মুখিন হয়েছেন। সুখ যেমন তার সাথী ছিল তেমনি দুঃখও ছিল ওতোপ্রতভাবে জড়িত। সুখে ছিল শান্তি আর দুঃখে ছিল নির্মমতা ও অস্থিরতা। কবি বন্দে আলী মিয়া দুঃখকে আকঁড়ে ধরে ধৈর্য্যতার সঙ্গে প্রবাহমান সময় অতিবাহিত করলেও কখনো সাহিত্য চর্চায় পিছুটান হননি। তার অসাধারণ লেখনির মাঝে তুলে ধরেছেন সমাজের কথা; সেই সঙ্গে দেশের কথা। তিনি আর্থিক দৈনদশায় নিমজ্জিত ছিলেন এমন সময় তার গেছে। তারপরেও তিনি বাংলার প্রকৃতি, মাটি ও মানুষকে আপন করে এই সমাজেই প্রতিষ্ঠার চেষ্টা তার ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে চালিয়ে গেছেন।

জনশ্রুতি আছে, টাকা পয়সার অভাবে তিনি বেনামে মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে প্রকাশকের কাছে একবার বই বিক্রয় করেছিলেন। তার লেখা আরও অনেক গ্রন্থ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এমন গ্রন্থও কবির আছে যে, তার আর দ্বিতীয় কোনও পাণ্ডুলিপি তার কাছে ছিল না। তিনি কোনো সময়ে তার রচনাকৃত কোনো বই দরকার হলে পরিচিত জনের কাছে সহযোগিতা চাইতেন বইটি সংগ্রহ করার জন্য। কারণ অনেক সময় তার নিজের কপিও কাছে থাকতো না। সরল প্রকৃতির সাদাসিদে মানুষ হিসেবেই তিনি সর্বজন পরিচিত ছিলেন। আর্থিক দৈন্যদশার পরও কারও কাছে কোনোদিন হাত পেতে নিজে কখনো মাথা নত করেননি। বিভিন্ন লেখক কবি বন্দে আলী মিয়াকে বিশিষ্ট বিদেশি সাহিত্যিকদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, তিনি মুখে মুখে গল্প বলায় যথেষ্ট পারদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন। যদিও বিশ্বখ্যাত রুশ লেখক ও উপন্যাসিক ‘লেভ টলস্টয়ের’ যেমন মুখে মুখে গল্প বলায় পারদর্শী ছিলেন, তেমনি কবি বন্দে আলী মিয়ারও পারদর্শী ছিলেন।

কবি বন্দে আলী মিয়া কলকাতা, ঢাকা ও রাজশাহী এ তিনটি স্থানই তার কর্মস্থল ছিল। কবি জীবনের শেষ দিকে বাংলাদেশ বেতার রাজশাহীর স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি সময় সুযোগ পেলেই শিশুদের সঙ্গে হাসি ঠাট্টায় মেতে যেতেন। তিনি সুযোগ পেলেই ছড়াকারে কথা বলতেন বা কোনো কাগজ-কলম হাতের কাছে পেলেই লিখতেন ছড়া- ‘ঢুলু-ঢুলু আঁখি-এ রাতে কোথায় থাকি! কি বা করি কি বা খাই; কোথায় মেজবান-ধারে-কাছে কেহ নাই।’ কবি বেতারে কাজ করার সময় ছোটদের আসর “সবুজ মেলা” পরিচালনা করতেন এবং তিনি ‘গল্প দাদু’ নামে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি বেতারে “ছেলে ঘুমালো” অনুষ্ঠানের জন্য প্রায়ই নতুন নতুন গল্প রচনা করতেন। তিনি তিরিশ-চলি­শ দশকের প্রথম তিরিশ বছর কলকাতায় অবস্থান করেছেন। এই অবস্থান সময়ে কবি বন্দে আলী মিয়া কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অবনীন্দ্রনাথ, সজনিকান্ত দাশ, প্রমথ চৌধুরী, নরেশ দেব, হুমায়ুন কবির, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, একে ফজলুল হক, ওস্তাদ জমির উদ্দিন খাঁ, সৈয়দ এমদাদ আলী, শেকোয়ার অনুবাদক আশরাফ আলী খান, শাহাদৎ হোসেন প্রমুখ বরেণ্য সাহিত্যিকদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত সূত্রে তিনি সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। কখনও কখনও গান রচনায় তিনি আকৃষ্ট হতেন। আবার অনেকে তাকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতাও করেছেন।

কবি বন্দে আলী মিয়ার প্রথম কাব্য ‘ময়নামতির চর’ ১৯৩২ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রশংসার বাণীতে শিরোভূষণ করে প্রকাশ লাভ করে। ময়নামতির চর কাব্যগ্রন্থের ভূমিকা লিখতে গিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার স্ব-হস্তে লিখেছেন- “তোমার ময়নামতীর চর কাব্যখানিতে গঙ্গা চরের দৃশ্য এবং তার জীবনযাত্রার প্রত্যক্ষ ছবি দেখা গেল। পড়ে বিশেষ আনন্দ পেয়েছি। তোমার রচনা সহজ এবং স্পষ্ট, কোথায়ও ফাঁকি নেই। সমস্ত সরের অনুরাগ দিয়ে তুমি দেখেছ এবং কলমের অনায়াস শুদ্ধিতে লিখেছ। তোমার সুপরিচিত প্রাদেশিক গ্রাম্য শব্দগুলি যথাস্থানে ব্যবহার করতে তুমি কুণ্ঠিত হওনি। তাতে করে কবিতাগুলি আরো সরস হয়ে উঠেছে। পদ্মাতীরের পাড়াগাঁয়ের এমন নিকটস্পর্শ বাংলা ভাষায় আর কোনো কবিতায় পেয়েছি বলে আমার মনে পড়ছে না। বাংলা সাহিত্যে তুমি আপন বিশেষ স্থানটি অধিকার করতে পেরেছ বলে আমি মনে করি” (২৬ জুলাই ১৯৩২)।

তরুণ কবি বন্দে আলী মিয়া ২৬ বছর বয়সে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। সাহিত্যের অন্যদিকে তিনি নিয়োজিত না থাকলেও কেবলমাত্র শিশুসাহিত্যের স্রষ্টা হিসেবেই অমর হয়ে থাকবেন নিঃসন্দেহে। কবি বন্দে আলী মিয়ার শিশুতোষ গ্রন্থের সংখ্যা ১০৫টি এবং অন্যান্য বিষয়ে লেখা বইগুলো যোগ করলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৬টিতে।

তাঁর উলে­খযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে ‘কুচ-বরণ কন্যা’, ‘গুপ্তধন’, ‘শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালা’, ‘চোর-জামাই’, ‘ঝিনুক-পরী’, ‘দুই বন্ধু’, ‘যেমন কর্ম-তেমন ফল’, ‘ডাইনি বউ’, ‘শিশুদের বিষাদসিন্ধু’ ইত্যাদি। কবির বেশকিছু অপ্রকাশিত গ্রন্থও রয়েছে। এদিকে, প্রফেসর ডক্টর গোলাম সাকলায়েন প্রণিত বাংলা একাডেমি প্রকাশিত (১৯৮৮) কবি বন্দে আলী মিয়া জীবনীগ্রন্থে উলে­খ আছে উপন্যান ১০ খানা, নাটক ৬ খানা, অনুবাদ ১ খানা, স্মৃতিকথা ১ খানা ও সঙ্গীত গ্রন্থ ৩ খানা। চোরজামাই শিশুতোষ বইটি লিখে তিনি প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন।

কবি কলকাতায় সিটি করপোরেশন পরিচালিত স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যে ২০ বছর চাকরি করেছেন। তখন তার সহকর্মী ছিলেন কবি আব্দুল কাদির। ‘বিকাশ’ একটি পত্রিকার নাম। এই পত্রিকার মাধ্যমেই কবি বন্দে আলী মিয়া সাংবাদিকতা শুরু করেন। এক সময়ে তিনি ‘বিকাশ’ পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৭ সালে তার লেখা ছড়া ও কবিতা ভারতের বেঙ্গল প্রেসিসিডেন্সি গেজেট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কলকাতা ও ঢাকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাহিত্য সাময়িকীতে তার লেখা প্রকাশ হতো। তিরিশ-চলি­শ দশকের কোনো এক সময়ে কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্যে আসার ফলে তার মনে নতুন প্রেরণার সৃষ্টি হয় এবং এর ফলশ্রুতিতে তিনি কণ্ঠশিল্পীদের বিভিন্ন ধরনের গান রচনা করতে শুরু করেন। কাজী নজরুল ইসলামের নির্দেশে তিনি গীতি আলেখ্য “কারবালা” রচনা করেন। তার গানগুলো তৎকালের রেকর্ড কোম্পানি রেকর্ড করেন। দুইটি রেকর্ড চারখণ্ডে সমাপ্ত করা হয়।

টুইন রেকর্ড এফ.টি- ৪৮৪১-৪২ এটি ১৯৩৭ সালে প্রকাশ লাভ করে এবং অংশগ্রহণ করে ‘মুসলিম ফ্রেন্ডস্’। ঠিক এর কিছু আগে প্রখ্যাত শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহম্মদ কবি বন্দে আলী মিয়া দ্বারা রচিত ‘ওয়াজ মাহফিল’ টুইন রেকর্ডে বাণীবদ্ধ করেন। অপরটি টুইন রেকর্ড এফ.টি- ৪৭৭৯। এটি খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে। জনপ্রিয়তা অর্জনের ফলে কবি শুধু টুইন রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত না থেকে তিনি মেগাফোন, কলোম্বিয়া, হিন্দুস্থান, তাজ, সেনোলা, রিগ্যাল রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করেন। কবি নাটিকাই শুধু রচনাই করতেন না; তাতে তিনি অভিনয় এবং নিজে পরিচালনাও করতেন। শিল্পী ও সুরকার আব্দুল হালিম চৌধুরী বন্দে আলী মিয়ার বেশ কয়েকটি গান হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানিতে কণ্ঠ দেন।

তাঁর লেখা ও গাওয়া গান হলো- জিন্দেগী তোর আখের হইল (এইচ-৮৯৯) ও ইয়া এলাহী কবুল কর (এইচ-৮৯৯) অপরদিকে, আরও ইসলামী গানসহ বিভিন্ন ধরনের গান সম্পর্কে জানা যায়, যেমন- ইব্রাহিম খলিলুলাহ-খোদা তালার প্রিয়জন, আবদুল কাদের জিলানী-বুজর্গ পীর, লা’শারিকালা নামে নাওখানি বাইয়া, জেয়ারতের রওযা ভূমে, রোজা নামাজ, মরু মদিনায়, এসো পথিক, পিয়াল পাতার, এতো জ্বালা জানি যদি, চেয়েছিনু মালাখানি, ভালবেসে, দখিনা বাতাস বধু, দল বেঁধে চলে মেঘ, শতেক তারার মাঝে, আমার ভূবনে মধু পূর্ণিমা আলো, পিয়াল বনের পাখি, তোমার পথের ধারে, তোমার কামনার রূপধরে ইত্যাদি। তিরিশ-চলি­শের দশকে কবি বন্দে আলী মিয়ার কলকাতা রংমহল থিয়েটার হলে ‘বৌদিদির রেস্টুরেন্ট’ অভিনীত হলে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

প্রায় ৪ মাসাধিকাল ধরে কবির ‘কমিক’ এ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। কবি বন্দে আলী মিয়া তার রচিত ‘কমিক’ নাটকে অভিনয় থেকে যে রয়্যালটি পেয়েছিলেন তা দিয়ে তিনি রাজশাহী বেতারের কাছে একটি বাড়ি কিনেন। তার রচিত নাটিকাগুলো হলো- (রেকর্ড কোডসহ)-পরলোক প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড (জেএনজে-৫৩৭০), শাদ্দাদের স্বর্গ প্রথম ও দ্বিতীয়খণ্ড (এফটি-১২১৫৩), যাকাত প্রথম, দ্বিতীয় (১২৯৩৪), তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ড (এফটি-১২৯৩৫), ইসলামের জয় ১ ও ২ খন্ড (এইচ-১১৬৩৭), মিলাদ মাহফিল ১ থেকে ৪ (কিউএস-৩০৩-৪), নামাজের মহিমা ১ থেকে ২ খণ্ড (জেএনজি-৫৫৩৫), ওয়াজ মাহফিল ১ থেকে ৪ খণ্ড (৪৭৭৯-৮০), কারবালা ১ থেকে ৪ খণ্ড (এফটি-৪৮৪১-৪২), মদিনা দর্শন ১ থেকে ৪ খণ্ড (এফটি-১৩২২৪-২৫), বিয়ে বাড়ী ১ থেকে ৪ খণ্ড (জেএনজি-৫০৯৯), রাবেয়া ১ থেকে ৬ খণ্ড (কিউএস-২৫১-২), হাজী মহসিন ১ থেকে ৬ খণ্ড (এফটি-১২৬৩৫-৩৬-৩৭), আলাদীন ১ থেকে ৬ খণ্ড (জেএনজি- ৫৪৩৫-৩৬-৩৭), সত্যপীর ১ থেকে ৮ খণ্ড (আরএল-১১৫৮-৫৯-৬০-৬১), পতিভক্তি ১ থেকে ২ খণ্ড (এইচআরটি-১১৬), সোহরাব রোস্তম ১ থেকে ৪ খণ্ড (জেএজি-৫২৭১-৭২), বৌদিদি রেস্টুরেন্ট কমিক নক্সা (১) ও নক্সা (২) (কিউএস-৬১১), রাঞ্ছারাম ঢ্যাং-কমিক নক্সা-১ ও নক্সা-২ (কিউএস-৬২৩), পয়দায়েছে দুনিয়া প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড (এফটি-১৩৬৩১), বেহেশ্ত, দোজখ (এফটি-১৩১৭০) এবং বাংলার কৃষি ১ ও ২ খণ্ড (জেএনজি-৫৫১৪)।

১৯৫০ এর পর তিনি ঢাকায় আসেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় মুদ্রণের পাশাপাশি তিনি বই-পুস্তক ও ছেপে বের করতে থাকেন। ১৯৬১ সালে ইস্ট-বেঙ্গল পাবলিসার্স তার পরোক্ষ সম্পাদনায় প্রকাশ করে শিশুতোষ পত্রিকা ‘ময়ুরপঙ্খি’। কবি বন্দে আলী মিয়া জীবনের সন্ধিক্ষণে এসে রাজশাহীর ‘প্রতীতি’ সম্পাদনা করেন। প্রথমবর্ষে উত্তরা সাহিত্য মজলিশের যে কার্যকরী সংসদ গঠিত হয় তার সদস্য তিনি ছিলেন। সাহিত্য মজলিশের প্রথম সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের স্বনামধন্য সাহিত্যিক প্রয়াত গোপাল হালদার। কবি বন্দে আলী মিয়া জীবনকালে অনেক পদক, পুরস্কার ও অভিনন্দন পেয়েছিলেন। সবশেষে রাজশাহীর উত্তরা সাহিত্য মজলিশ কবিকে এক হাজার টাকা নজরানা দিয়ে সম্বর্ধনা জানায় এবং কবি সংবর্ধনা সংখ্যা বের করেন। ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কবি বন্দে আলী মিয়ার ‘ধরিত্রী’ কাব্য প্রকাশ লাভ করে। এ কাব্যের ‘বিদায় প্রহর’ কবিতার অংশে বিশেষ প্রতীতির বন্দে আলী সংখ্যায় শিরোভূষণ পূর্বক প্রকাশ লাভ করে।

‘বিদায় প্রহর’ কবিতার সেই অংশ বিশেষ নিম্নোলে­খিত-
এবারে আমার শেষ হয়ে এলো
প্রবাসের দিনগুলি
যাবার বেলায় বারে বারে হায়
মন ওঠে তবু দুলি।
কেটেছে হেথায় কয়টি বছর
সুখে-দুখে বেদনায়
স্মরণ ভরিয়া রহিল সে সব
ভুলিব না কভু তায়।
আমার স্মরণে তোমাদের ছবি
জেগে রবে অনুক্ষণ
বিদায় এবার ফুরায়েছে মোর
প্রবাসের প্রয়োজন।’ (শেষ কবিতা)

বরেণ্য প্রতিভার অধিকারী পাবনার কৃতি সন্তান কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯৭৯ সালের ২৭ জুন রাজশাহীর কাজিরহাট অঞ্চলের নিজ বাসভবনে সকাল ১১টা ১০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে কবি বন্দে আলী মিয়ার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। জীবনীগ্রন্থসহ বিভিন্ন জন তার সংসার জীবন নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বিত। বাবা-মা’র সম্মতিক্রমে তিনি পাবনা শহরের জেলাপাড়া মহল্লার রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কারণ অনেকের মতে, তিনি কলকাতা, রাজশাহী ও ঢাকায় সংসার পেতেছিলেন। এমনও শোনা যায় কবি বন্দে আলী মিয়ার নওগাঁ জেলাতেও আরও একটি সংসার ছিল। কোন সালের কত তারিখের কি বারে তিনি বিবাহ করেন তা জানা না গেলেও হেনা, শামসুন্নাহার ও পরীবানু নামে অপর তিন স্ত্রীর নামও পাওয়া যায়।

জেলার স্বনামধন্য, সাহিত্যাঙ্গনের প্রতিটি শাখায় যার বিচরণ। তাকে স্মরণেই কবির নিজ জেলায় কবি বন্দে আলী মিয়া স্মরণ পরিষদ, কবি বন্দে আলী মিয়া শিশু একাডেমি গড়ে তোলা হলেও কার্যত তা সক্রিয় নয়। এছাড়াও প্রথম থেকে তার নামকরণে জেলার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তরস্থ কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে। স¤প্রতি পাবনা পৌরসভা একটি সড়কের নামকরণ এবং বন্দে আলী মিয়া সুপার মার্কেট নামে একটি অভিজাত শপিং মল গড়ছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটি তার নামের করা হয়েছে। শিশুদের কবি, গল্প দাদু ও গ্রামের কবি বন্দে আলী মিয়ার স্মৃতি রক্ষায় সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি রয়েছে পাবনাবাসীর।

পাবনার সচেতন মহল ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাদের অভিমত, কবি বন্দে আলী মিয়া একজন নানা গুনে প্রতিভাবান সাহিত্যিক। যার বিচরণ সাহিত্যের প্রতিটি পরতে পরতে। অথচ যিনি মোটর মালিক নন, তার নামে বাস টার্মিনালের নামকরণ, যিনি ব্যবসায়ী নন, তার নামে সুপার মার্কেট। যা হতাশা ছাড়া কিছুই নয়। তাদের দাবী, স্বনামধন্য এই কবি ছিলেন একজন উন্নতমানের চিত্রশিল্পী। তাই শিক্ষানগরী পাবনায় তার নামে একটি চিত্রকর্ম প্রশিক্ষণ স্কুল বা একাডেমি কিংবা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা। পাশাপাশি পাবনার ঐতিহ্যবাহি বিদ্যাপীঠ সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা মেডিকেল কলেজ এমন কি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবাস নতুন নতুন কোন ভবনে তার নামে নামকরণ করা।

কবি বন্দে আলী মিয়ার জন্মদিন বা মৃত্যুদিন এক সময়ে নীরবেই কেটে যেতো। গত কয়েক বছর হলো জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করলেও নিয়মিত নয়। প্রতিবারই কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে জেলার প্রথম ‘কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়’ এর পক্ষ থেকে নেয়া হয় বিভিন্ন কর্মসূচি। অন্যদিকে, শহরের রাধানগরে কবির বসতভিটা ‘কবিকুঞ্জ’ জীর্ণশীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। জেলাবাসী তথা কবি অনুরাগী এবং ভক্তদের দাবি বাড়িটি সংস্কার করে কবির রেখে যাওয়া কর্ম-স্মৃতিগুলোর সংরক্ষণ করে একটি আর্কাইভ বা সংগ্রহশালা করা হোক। কবির রেখে যাওয়া কর্মগুলো যথাযথ সংরক্ষণ করতে পারলে তরুণ প্রজন্ম তথা আগামী প্রজন্ম এই স্বনামধন্য কবি, কবির সকল স্তরের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে জানতে, শিখতে ও বুঝতে পারবে এমন প্রত্যাশা পাবনাবাসীর।

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী
পাবনা।