ঢাকা ১০:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

সাংবাদিকদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০১:৫৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / 86

রণেশ মৈত্র
সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।

নিজের সাংবাদিকতা জীবনের দিকে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি, ঐ জীবন আমি শুরু করেছিলাম ১৯৫১ সালে অর্থাৎ আজ থেকে ৬৮ বছর আগে। আজ ও ঐ জীবন অব্যাহত। পাওয়া না পাওয়ার ব্যক্তিগত কোন অর্জন বা অনর্জনের কোন চিন্তা থেকে নয়-দেশ ও দেশের স্বার্থে নিয়ত কর্মরত সাংবাদিকদের জীবন সাধ্যমত স্বচ্ছন্দ ও বিপন্মুক্ত করার প্রত্যয়ে। দেশের নিপীড়িত শোষিত মানুষের স্বার্থে সাংবাদিকতাকেই ব্রত হিসেবে নিয়ে। কতটা সফল হয়েছিল তা অপরের বিচার্য্য তবে ব্যর্থ হইনি বলেই মনে করি।

সিলেট থেকে সে কালে প্রকাশিত হতো একটি প্রগতিশীল সাপ্তাহিক পত্রিকা নওবেলাল। তারই পাবনাস্থ সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে শুরু করি সাংবাদিক জীবনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমা।

সিলেটের ঐ পত্রিকাটিতে (অধুনালুপ্ত) প্রধানতঃ ছাত্র ও গণ আন্দোলনের ও মানুষের দুর্দশা নিয়ে খবর লিখতাম। তখন কলকাতা থেকেও বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা এ দেশে নিয়মিত আসতো গ্রাহকও ছিল অনেক। সব পত্রিকারই একজন করে নিজস্ব সংবাদদাতা নিযুক্ত ছিলেন প্রতিটি জেলায়। যখনই পাকিস্তান সামরিক শাসনের কবলে পড়লো, তখন থেকেই কলকাতার পত্রিকা আসাও বন্ধ হয়ে গেল তাঁদের সংবাদদাতারাও।

একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা কলকাতা থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হতো “সত্যযুগ” নামে। পত্রিকাটি আমাদের ভাষা আন্দোলন ও অপরাপর আন্দোলনের খবর নিষ্ঠার সাথে প্রকাশ করতো। সেই “সত্যযুগ” এর পাবনাস্থ সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগপত্র পেয়ে ২/১ বছর কাজ করেছি। অতঃপর পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়।

১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি ছাত্রাবস্থায়। সদ্য গঠিত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের শাখা কমিটি প্রথম গঠন করি আমরা কতিপয় প্রগতিশীল ছাত্র মিলে। অল্পদিনেই পাবনাতে ছাত্র ইউনিয়ন একটি বৃহৎ ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়।

১৯৫৩ সালে, অর্থাৎ পাবনাতে ছাত্র ইউনিয়নের শাখা গঠনের মাস কয়েক পরেই এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করে ভিপি জিএস সহ সকল আসনে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থীরা (একটি মাত্র আসন বাদে) বিপুল ভোটাধিক্যে বিজয় অর্জন করে। প্রতিযোগিতা করতে হয়েছিলো ছাত্র লীগের প্রার্থীদের সাথে তখন তারা পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ নামে পরিচিত ছিলেন ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়ও কিন্তু সে জনপ্রিয়তায় ধস নেমে গিয়েছিল ছাত্র ইউনিয়নের নিষ্ঠা ও কর্মতৎপরতা ও দেশপ্রেমিক নীতি আদর্শের কল্যাণে।

যা হোক, ১৯৫৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। হক-ভাষানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন সদ্য গঠিত যুক্ত ফ্রন্ট বিপুল বিজয় অর্জন করে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে প্রদেশের প্রায় সকল আসনে পরাজিত করে।

ঐ নির্বাচনের পূর্বে যুক্ত ফ্রন্টের সপক্ষে নির্বাচনী অভিযানে লিপ্ত থাকায় ২২ ফেব্রুয়ারি ভোরে জন নিরাপত্তা আইনে বিনাবিচারে গ্রেফতার করে। যুক্তফ্রন্টের বিজয় অর্জনের সাথে সথে এক মাস আটক থাকার পর অপরাপর রাজবন্দীদের সাথে বিনা শর্তে মুক্তি লাভ করি।

দৈনিক সংবাদ ছিল মুসলিম লীগ মালিকানাধীন পত্রিকা। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে মুসলিম লীগ পরাজিত হওয়ার পর তারা পত্রিকাটি বিক্রয় করে দেন আহমেদুল কবিরের কাছে। তখন থেকে পত্রিকাটি বাম-গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে নতুন আঙ্গিকে প্রকাশিত হতে থাকে।

অপরদিকে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পর থেকে শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বে মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। কিন্তু মাত্র ৫৮ দিনের মাথায় ৯২ (ক) ধারা জারী করে কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ সরকার পূর্ব বাংলার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভাকে বাতিল করে কিছু সংখ্যক মন্ত্রী, এমএলএ ও হাজার হাজার নেতা কর্মীকে জন নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করে।

৯২(ক) ধারা জারীর পর পরই একই দিন বিকেলে ছাত্র ইউনিয়ন অফিস থেকে আমাকেও গ্রেফতার করা হয়। যেদিন গ্রেফতার করা হলো ঐদিনই ডাকযোগে পাকিস্তান অবজার্ভর নামক খ্যাতনামা ইংরেজী পত্রিকার পাবনা জেলা সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগপত্র ডাকযোগে আমার হাতে এসে পৌঁছায় কিন্তু গ্রেফতার জনিত কারণে অবজার্ভারে কোন সংবাদ পাঠনোর সুযোগ হলো না।

এবারের কারাজীবন ছিল দীর্ঘ দেড় বছরের। বেরিয়ে এসে দেখি, অন্য একজন অবজার্ভারের নিয়োগপত্র সংগ্রহ করে কাজ করছেন। তখন দরখাস্ত করলাম ‘সংবাদ’। দ্রুতই নিয়োগপত্র পেলাম। দীর্ঘদিন সংবাদে প্রকাশিত আমার রিপোর্টগুলি সারা দেশের পাঠকদের প্রশংসা অর্জন করে। সংবাদের তৎকালীন বার্তা সম্পাদক তোয়ার খাম (বর্তমানে জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক)।

বস্তুতঃ সংবাদে কাজ করা কালেই আমার রিপোর্টিং জীবনের শ্রেষ্ঠতম মুহুর্ত। এতটাই যে ঐ সময়কালে (১৯৫৫ থেকে ১৯৬৪) সামরিক শাসন থাকা সত্বেও গণমুখী রিপোর্টিং বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। একই সময়কালে বার্তা সংস্থা পিপিআই, ইউপিবি এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান অবজার্ভার ডেকে নিয়োগপত্র দেয়। আমিও সেগুলিতে সাগ্রহে কাজ করি।

দফায় দফায় গ্রেফতার হই ষাটের দশকে। স্বভাবতই কারাবাস কালে সাংবাদিকতায় ছেদ পড়ে যেত। আবার কারামুক্তির পরে নিয়মিত তা শুরুও হতো।

১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার প্রথম সাংবাদিকদের বিভিন্ন পদ ও দায়িত্বভেদে বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ করে একটি বেতন বোর্ড রোয়েদাদ গেজেট আকারে প্রকাশ করলে দ্রুতই তা সংবাদ, ইত্তেফাক, অবজার্ভার সহ সকল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতে জেলা সংবাদদাতাদের জন্য লাইনেজ এবং সামান্য কিছু ভাতার বিধান রাখা হয়েছিল।

এ যাবতকাল মফঃস্বলে কর্মরত সাংবাদিকেরা আদৌ কোন বেতন ভাতা, এমন কি, সংবাদ সংগ্রহ ও তা পাঠানোর জন্য ডাক খরচও পেতেন না। তাই সামান্য হলেও সবাই (সকল জেলা পর্য্যায়ের সাংবাদিক) যাতে বেতন বোর্ড রোযেদাদ মোতাবেক কিছু পারিশ্রমিক পান তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অগ্রজ এ.কে.এম. আজিজুল হক (আজাদ ও মর্নিং নিউজ) পরামর্শ করে পাবনাতে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগীয় মফঃস্বল সাংবাদিক সম্মেলন আহবান করি। এ খবর ঢাকায় সকল পত্রিকায় দুই কলাম শিরোনামে প্রকাশিত হলে অনেকেরই নজর কাড়ে। রংপুরের অবজার্ভার ঢাকা গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডেত রানী ঢাকা সফরে আসায় তাঁকে দেখতে।

ঢাকা প্রেক্লাবে বসে সকাল বেলায় সংবাদপত্রগুলির পাতা উল্টাতেই আবু সাদেকের নজরে পড়লো পাবনায় আহুত রাজশাহী-খুলনা বিভাগীয় মফঃস্বল সাংবাদিক সম্মেলনের খবর। তৎক্ষণাৎ প্রেসক্লাবে প্রাতঃরাশ গ্রহণরত পূর্ব পাকিস্তানে সাংবাদিক ইউনিয়নের এক নেতাকে খবরটি দেখালেন। তিনি খবরটি পড়ে আবু সাদেককে দ্রুত পাবনা এসে আমার সাথে যোগাযোগ করে প্রস্তাবিত ঐ সম্মেলনটিকে বিভাগীয় সম্মেলনের পরিবর্তে “পূর্ব পাকিস্তান মফঃস্বল সাংবাদিক সম্মেলনে” রূপান্তারিত করলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে বলে জানালেন।

আবু সাদেক তাঁর ব্যাগ কাঁধে নিয়ে তৎক্ষণাৎ পাবনা ছুটলেন। পাবনা এসে আমাদের খুঁজে বের করে দু’দিন ধরে আলোচনা করে সম্মত করালেন। উক্ত নেতাটির পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে। কিন্তু কমিটির সভা ডেকে পূর্ব পাকিস্তান মফঃস্বল সাংবাদিক সম্মেলন পাবনাতে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়ে তার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ ও সম্প্রসারিত প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়-এ.এক.এম. আজিজুল হককে সভাপতি ও আমাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে। সম্মেলনের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানা হয় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম মন্ত্রী লে.জে. বুরকিকে। তিনি সম্মতিপত্র জানালেন তবে কিছু দিন পর জানালেন নানাবিধ ব্যবস্ততা জনিত কারণে তাঁর অপারগতা।

অতঃপর পাকিস্তান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী বগুড়ার মোহাম্মদ আলী কে আমন্ত্রন জানালে তিনি তা সানন্দে গ্রহণ করেন। ৮ ও ৯ মে, ১৯৬২ দু দিনব্যাপী হকের সভাপতিত্বে। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান অবজার্ভার সম্পাদক আবদুস সালাম ও মর্নিং নিউজ সম্পাদক এস.জি.এম বদরুদ্দিন। সম্মতি জানালেও বিশেষ পরিস্থিতির কারণে আসতে পারলেন না ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ও সংবাদ সম্পাদক জহুর হোসেন চৌধুরী প্রতিশ্রুতি দিছের আসতে না পেরে সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে বার্তা পাঠিয়েছিলেন।

তখন জেলার সংখ্যা ছিল মাত্র ১৭ টি। পত্রিকার সাংখ্যা অত্যান্ত অল্প-তাই সাংবাদিকের সংখ্যঠর ছিল অত্যৗল্প সীমিত। তবুও প্রায় ১৫ টি জেলা থেকে ৫/৫০ জনের মত সাংবাদিক গাঁটের পয়সা খরচ করে এসেছিলাম। তন পাবনাতে ভাল কোন আবাসিক হোটেল না থাকায় আমরা একটি স্কুল ঘরে ডেলিগেটদের থাকার ব্যবস্থা করি শুধু আহারের ও পানীয় জলের।

বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় সম্মেলন দুদিন ধরে চললো। অবজার্ভার ও মর্নিং নিউজ সম্পাদকদ্বয় সারা দেশ থেকে আসা তাঁদের সংবাদদাতাদের সাথে বৈঠক করেন। আমাকেও তাঁরা উভয়েই বৈঠক দুটিতে ডাকেন যদিও আমি তন ‘সংবাদ’ ও অবজার্ভারের সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত। মর্নিং নিউজ সম্পাদক আমাকে তাৎক্ষণিকভঅবে তাঁর পত্রিকার সংবাদদাতা হিসেবে আমাকে নিয়োগপত্র দিলেন।

দুই সম্পাদকই কথা দিলেন, তাঁরা ওয়েজ বোর্ডের বিধান অনুযায়ী পরিশ্রমিক দেনে জেলা সংবাদদাতাদেরকে। আমাদের প্রাথমিক বিজয় সূচিত হলো। গঠিত হলো “পূর্ব পাকিস্তান মফঃস্বল সাংবাদিক সমিতি” যা পরে “পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতি নামে অভিহিত হয়।”

এর ধাক্কা গিয়ে লাগে, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা প্রভৃতি পত্রিকায়। সমিতির ডেলিগেশন দৈনিক বাংলা কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করে আবেদন জানালে তাঁরা দেশের ৪টি জেলার যেমন, পাবনা, রংপুর, বরিশাল ও মহকুমা শহর মুন্সীগঞ্জেও যোগ্যতার ভিত্তিতে ষ্টাফ রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ দেন। তারা হয়ে গেলেন বেতনভূক্ত, পেশাদার সাংবাদিক। দৈনিক বাংলার বাদ-বাকীরা এবং ইত্তেফাকের জেলা সংবাদদাতারা লাইনেজ, রিটেইনার পেতে সুরু করলেন।

সম্মেলনে গ্রহীত মেনিফেষ্টোতে যে লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছিল তা হলো,

এক. সারা দেশের মফঃস্বল সাংবাদিকদেরকে ঐক্যবদ্ধ;

দুই. ঐক্যবদ্ধ আন্দোিলনের মাধ্যমে সকল মফঃস্বল সাংবাদিককে স্টাফ বা বেতনভূক্ত রিপোর্টার পদে উন্নীত করে মফঃস্বল সাংবাদিকতাকেও পেশায় পরিণত করা;

তিন. অতঃপর মফ:স্বলে কর্মওু সকল সাংবাদিককে বেতন বোর্ড রোয়েদাদে ষ্টাফ রিপোর্টারদের জন্য বরাদ্দ সকল সুযোগ সুবিধা আদায়;

চার. কালক্রমে ঢাকাস্থ এবং সকল মফঃস্বল সাংবাদিককে ঐক্যবদ্ধ করে একই সংগঠনে সকলে সামিল হওয়া এবং

পাঁচ. এভাবে গঠিত ঐক্যব্ধ সংগঠনে সারা দেশের সকল সাংবাদিককে ঐক্যবদ্ধ করে সাংবাদিকদের অধিকতর মর্য্যাদা আদায়ের জন্য ধাপে ধাপে আন্দোলন গড়ে তোলা।

এ লক্ষ্যগুলির সবগুলি অর্জিত হয়নি তবে বেশ কিছু অর্জিত হয়েছে। তাকালেই চোখে পড়ে এখন অনেক মফঃস্বল সাংবাদিকই মোটামুটি পরিশ্রমিক পাচ্ছেন।

এখন প্রয়োজন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ফেডারেশন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যব্ধভাবে পরস্পরের দাবী আদায়ে সমন্বিত আন্দোলন গড়ে তোলা।

সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা হিসেবে স্বীকৃত বটে কিন্তু তাদের উপযুক্ত মর্য্যাদা আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কারণ অনৈক্য। বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি মহল বিশেষ কর্তৃক কুক্ষিগতকরে ফেলায় তা আজ অস্তিত্বহীন। ফেডারেলও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন রাজনৈতিক দৃষ্টি ভংগীর অজুহাতে এক দশকেরও বেশী আগে থেকে বিভক্ত।

তাই আজ প্রধান দায়িত্ব রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা-আদর্শিক অবস্থান নির্বিষে সকল সাংবাদিকের, বিশোষতঃ মফঃস্বল সাংবাদিকের ঐক্যবদ্ধ নতুন সংগঠন গড়ে তোলা এবং একই সাথে উভয় ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন আগের মত এক সংগঠনে পরিণত হলে সকল সাংবাদিকই উপকৃত হবেন। আর এটা নির্ভর করবে নেতৃত্বের আন্তরিকতা এবং রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি নিরপেক্ষ দৃষ্টি ভঙ্গীর উপর।

সাংবাদিকতা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি পেশা। দুবৃত্তদের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়ে আহত নিহত হন সাংবাদিকেরা। দুর্নীতিাবজদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করলে মানহানির মোকর্দমার আশংকা। সরকারের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করলে সরকারের অসহনশীল অংশ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক। সাংবাদিকতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকী দিতে পরোয়া করেন না।

এ ধরনের আরও অনেক প্রতিকূলতা আছে, অতীতেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে হয়তো যদি সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন না করেন।

কিন্তু এগুলির কাছে মাথা নত করলে অপশক্তিগুলির কাছে আত্মসমর্পন করতে হবে। কাজেই ঝুঁকি নিয়েই সাংবাদিকতা করতে হবে। অনেক সময় আদালতকে পাশে পাওয়া যাবে এবং অতীতেও এমন কি সামরিক শাসনামলেও, কখনও কখনও আদলাত দৃঢ়তার সাথে সাংবাদিকের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।

এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, পুলিশের ভূমিকা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সুষ্ঠু, সাধীন, সৎ সাংবাদিকাতর পরিপস্থী। তবুও তার কাছে নতি স্বীকার করলে তা হবে আত্মঘাতি। আর পুলিশ যে এতটা সাহস পায় তারও প্রধান কারণ সাংবাদিকদের মধ্যেকার অনৈক্য।

তাই নগর-শহর-উপজেলা বা কোন প্রকার সংকীর্ণ আঞ্চলিকতা পরিহার করে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আজ সর্বাধিক।

সাংবাদিকদের ঐক্যের বিকল্প নেই

প্রকাশিত সময় ০১:৫৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০

রণেশ মৈত্র
সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।

নিজের সাংবাদিকতা জীবনের দিকে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি, ঐ জীবন আমি শুরু করেছিলাম ১৯৫১ সালে অর্থাৎ আজ থেকে ৬৮ বছর আগে। আজ ও ঐ জীবন অব্যাহত। পাওয়া না পাওয়ার ব্যক্তিগত কোন অর্জন বা অনর্জনের কোন চিন্তা থেকে নয়-দেশ ও দেশের স্বার্থে নিয়ত কর্মরত সাংবাদিকদের জীবন সাধ্যমত স্বচ্ছন্দ ও বিপন্মুক্ত করার প্রত্যয়ে। দেশের নিপীড়িত শোষিত মানুষের স্বার্থে সাংবাদিকতাকেই ব্রত হিসেবে নিয়ে। কতটা সফল হয়েছিল তা অপরের বিচার্য্য তবে ব্যর্থ হইনি বলেই মনে করি।

সিলেট থেকে সে কালে প্রকাশিত হতো একটি প্রগতিশীল সাপ্তাহিক পত্রিকা নওবেলাল। তারই পাবনাস্থ সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে শুরু করি সাংবাদিক জীবনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমা।

সিলেটের ঐ পত্রিকাটিতে (অধুনালুপ্ত) প্রধানতঃ ছাত্র ও গণ আন্দোলনের ও মানুষের দুর্দশা নিয়ে খবর লিখতাম। তখন কলকাতা থেকেও বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা এ দেশে নিয়মিত আসতো গ্রাহকও ছিল অনেক। সব পত্রিকারই একজন করে নিজস্ব সংবাদদাতা নিযুক্ত ছিলেন প্রতিটি জেলায়। যখনই পাকিস্তান সামরিক শাসনের কবলে পড়লো, তখন থেকেই কলকাতার পত্রিকা আসাও বন্ধ হয়ে গেল তাঁদের সংবাদদাতারাও।

একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা কলকাতা থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হতো “সত্যযুগ” নামে। পত্রিকাটি আমাদের ভাষা আন্দোলন ও অপরাপর আন্দোলনের খবর নিষ্ঠার সাথে প্রকাশ করতো। সেই “সত্যযুগ” এর পাবনাস্থ সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগপত্র পেয়ে ২/১ বছর কাজ করেছি। অতঃপর পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়।

১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি ছাত্রাবস্থায়। সদ্য গঠিত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের শাখা কমিটি প্রথম গঠন করি আমরা কতিপয় প্রগতিশীল ছাত্র মিলে। অল্পদিনেই পাবনাতে ছাত্র ইউনিয়ন একটি বৃহৎ ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়।

১৯৫৩ সালে, অর্থাৎ পাবনাতে ছাত্র ইউনিয়নের শাখা গঠনের মাস কয়েক পরেই এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করে ভিপি জিএস সহ সকল আসনে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থীরা (একটি মাত্র আসন বাদে) বিপুল ভোটাধিক্যে বিজয় অর্জন করে। প্রতিযোগিতা করতে হয়েছিলো ছাত্র লীগের প্রার্থীদের সাথে তখন তারা পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ নামে পরিচিত ছিলেন ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়ও কিন্তু সে জনপ্রিয়তায় ধস নেমে গিয়েছিল ছাত্র ইউনিয়নের নিষ্ঠা ও কর্মতৎপরতা ও দেশপ্রেমিক নীতি আদর্শের কল্যাণে।

যা হোক, ১৯৫৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। হক-ভাষানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন সদ্য গঠিত যুক্ত ফ্রন্ট বিপুল বিজয় অর্জন করে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে প্রদেশের প্রায় সকল আসনে পরাজিত করে।

ঐ নির্বাচনের পূর্বে যুক্ত ফ্রন্টের সপক্ষে নির্বাচনী অভিযানে লিপ্ত থাকায় ২২ ফেব্রুয়ারি ভোরে জন নিরাপত্তা আইনে বিনাবিচারে গ্রেফতার করে। যুক্তফ্রন্টের বিজয় অর্জনের সাথে সথে এক মাস আটক থাকার পর অপরাপর রাজবন্দীদের সাথে বিনা শর্তে মুক্তি লাভ করি।

দৈনিক সংবাদ ছিল মুসলিম লীগ মালিকানাধীন পত্রিকা। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে মুসলিম লীগ পরাজিত হওয়ার পর তারা পত্রিকাটি বিক্রয় করে দেন আহমেদুল কবিরের কাছে। তখন থেকে পত্রিকাটি বাম-গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে নতুন আঙ্গিকে প্রকাশিত হতে থাকে।

অপরদিকে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পর থেকে শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বে মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। কিন্তু মাত্র ৫৮ দিনের মাথায় ৯২ (ক) ধারা জারী করে কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ সরকার পূর্ব বাংলার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভাকে বাতিল করে কিছু সংখ্যক মন্ত্রী, এমএলএ ও হাজার হাজার নেতা কর্মীকে জন নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করে।

৯২(ক) ধারা জারীর পর পরই একই দিন বিকেলে ছাত্র ইউনিয়ন অফিস থেকে আমাকেও গ্রেফতার করা হয়। যেদিন গ্রেফতার করা হলো ঐদিনই ডাকযোগে পাকিস্তান অবজার্ভর নামক খ্যাতনামা ইংরেজী পত্রিকার পাবনা জেলা সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগপত্র ডাকযোগে আমার হাতে এসে পৌঁছায় কিন্তু গ্রেফতার জনিত কারণে অবজার্ভারে কোন সংবাদ পাঠনোর সুযোগ হলো না।

এবারের কারাজীবন ছিল দীর্ঘ দেড় বছরের। বেরিয়ে এসে দেখি, অন্য একজন অবজার্ভারের নিয়োগপত্র সংগ্রহ করে কাজ করছেন। তখন দরখাস্ত করলাম ‘সংবাদ’। দ্রুতই নিয়োগপত্র পেলাম। দীর্ঘদিন সংবাদে প্রকাশিত আমার রিপোর্টগুলি সারা দেশের পাঠকদের প্রশংসা অর্জন করে। সংবাদের তৎকালীন বার্তা সম্পাদক তোয়ার খাম (বর্তমানে জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক)।

বস্তুতঃ সংবাদে কাজ করা কালেই আমার রিপোর্টিং জীবনের শ্রেষ্ঠতম মুহুর্ত। এতটাই যে ঐ সময়কালে (১৯৫৫ থেকে ১৯৬৪) সামরিক শাসন থাকা সত্বেও গণমুখী রিপোর্টিং বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। একই সময়কালে বার্তা সংস্থা পিপিআই, ইউপিবি এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান অবজার্ভার ডেকে নিয়োগপত্র দেয়। আমিও সেগুলিতে সাগ্রহে কাজ করি।

দফায় দফায় গ্রেফতার হই ষাটের দশকে। স্বভাবতই কারাবাস কালে সাংবাদিকতায় ছেদ পড়ে যেত। আবার কারামুক্তির পরে নিয়মিত তা শুরুও হতো।

১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার প্রথম সাংবাদিকদের বিভিন্ন পদ ও দায়িত্বভেদে বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ করে একটি বেতন বোর্ড রোয়েদাদ গেজেট আকারে প্রকাশ করলে দ্রুতই তা সংবাদ, ইত্তেফাক, অবজার্ভার সহ সকল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতে জেলা সংবাদদাতাদের জন্য লাইনেজ এবং সামান্য কিছু ভাতার বিধান রাখা হয়েছিল।

এ যাবতকাল মফঃস্বলে কর্মরত সাংবাদিকেরা আদৌ কোন বেতন ভাতা, এমন কি, সংবাদ সংগ্রহ ও তা পাঠানোর জন্য ডাক খরচও পেতেন না। তাই সামান্য হলেও সবাই (সকল জেলা পর্য্যায়ের সাংবাদিক) যাতে বেতন বোর্ড রোযেদাদ মোতাবেক কিছু পারিশ্রমিক পান তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অগ্রজ এ.কে.এম. আজিজুল হক (আজাদ ও মর্নিং নিউজ) পরামর্শ করে পাবনাতে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগীয় মফঃস্বল সাংবাদিক সম্মেলন আহবান করি। এ খবর ঢাকায় সকল পত্রিকায় দুই কলাম শিরোনামে প্রকাশিত হলে অনেকেরই নজর কাড়ে। রংপুরের অবজার্ভার ঢাকা গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডেত রানী ঢাকা সফরে আসায় তাঁকে দেখতে।

ঢাকা প্রেক্লাবে বসে সকাল বেলায় সংবাদপত্রগুলির পাতা উল্টাতেই আবু সাদেকের নজরে পড়লো পাবনায় আহুত রাজশাহী-খুলনা বিভাগীয় মফঃস্বল সাংবাদিক সম্মেলনের খবর। তৎক্ষণাৎ প্রেসক্লাবে প্রাতঃরাশ গ্রহণরত পূর্ব পাকিস্তানে সাংবাদিক ইউনিয়নের এক নেতাকে খবরটি দেখালেন। তিনি খবরটি পড়ে আবু সাদেককে দ্রুত পাবনা এসে আমার সাথে যোগাযোগ করে প্রস্তাবিত ঐ সম্মেলনটিকে বিভাগীয় সম্মেলনের পরিবর্তে “পূর্ব পাকিস্তান মফঃস্বল সাংবাদিক সম্মেলনে” রূপান্তারিত করলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে বলে জানালেন।

আবু সাদেক তাঁর ব্যাগ কাঁধে নিয়ে তৎক্ষণাৎ পাবনা ছুটলেন। পাবনা এসে আমাদের খুঁজে বের করে দু’দিন ধরে আলোচনা করে সম্মত করালেন। উক্ত নেতাটির পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে। কিন্তু কমিটির সভা ডেকে পূর্ব পাকিস্তান মফঃস্বল সাংবাদিক সম্মেলন পাবনাতে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়ে তার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ ও সম্প্রসারিত প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়-এ.এক.এম. আজিজুল হককে সভাপতি ও আমাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে। সম্মেলনের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানা হয় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম মন্ত্রী লে.জে. বুরকিকে। তিনি সম্মতিপত্র জানালেন তবে কিছু দিন পর জানালেন নানাবিধ ব্যবস্ততা জনিত কারণে তাঁর অপারগতা।

অতঃপর পাকিস্তান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী বগুড়ার মোহাম্মদ আলী কে আমন্ত্রন জানালে তিনি তা সানন্দে গ্রহণ করেন। ৮ ও ৯ মে, ১৯৬২ দু দিনব্যাপী হকের সভাপতিত্বে। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান অবজার্ভার সম্পাদক আবদুস সালাম ও মর্নিং নিউজ সম্পাদক এস.জি.এম বদরুদ্দিন। সম্মতি জানালেও বিশেষ পরিস্থিতির কারণে আসতে পারলেন না ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ও সংবাদ সম্পাদক জহুর হোসেন চৌধুরী প্রতিশ্রুতি দিছের আসতে না পেরে সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে বার্তা পাঠিয়েছিলেন।

তখন জেলার সংখ্যা ছিল মাত্র ১৭ টি। পত্রিকার সাংখ্যা অত্যান্ত অল্প-তাই সাংবাদিকের সংখ্যঠর ছিল অত্যৗল্প সীমিত। তবুও প্রায় ১৫ টি জেলা থেকে ৫/৫০ জনের মত সাংবাদিক গাঁটের পয়সা খরচ করে এসেছিলাম। তন পাবনাতে ভাল কোন আবাসিক হোটেল না থাকায় আমরা একটি স্কুল ঘরে ডেলিগেটদের থাকার ব্যবস্থা করি শুধু আহারের ও পানীয় জলের।

বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় সম্মেলন দুদিন ধরে চললো। অবজার্ভার ও মর্নিং নিউজ সম্পাদকদ্বয় সারা দেশ থেকে আসা তাঁদের সংবাদদাতাদের সাথে বৈঠক করেন। আমাকেও তাঁরা উভয়েই বৈঠক দুটিতে ডাকেন যদিও আমি তন ‘সংবাদ’ ও অবজার্ভারের সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত। মর্নিং নিউজ সম্পাদক আমাকে তাৎক্ষণিকভঅবে তাঁর পত্রিকার সংবাদদাতা হিসেবে আমাকে নিয়োগপত্র দিলেন।

দুই সম্পাদকই কথা দিলেন, তাঁরা ওয়েজ বোর্ডের বিধান অনুযায়ী পরিশ্রমিক দেনে জেলা সংবাদদাতাদেরকে। আমাদের প্রাথমিক বিজয় সূচিত হলো। গঠিত হলো “পূর্ব পাকিস্তান মফঃস্বল সাংবাদিক সমিতি” যা পরে “পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতি নামে অভিহিত হয়।”

এর ধাক্কা গিয়ে লাগে, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা প্রভৃতি পত্রিকায়। সমিতির ডেলিগেশন দৈনিক বাংলা কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করে আবেদন জানালে তাঁরা দেশের ৪টি জেলার যেমন, পাবনা, রংপুর, বরিশাল ও মহকুমা শহর মুন্সীগঞ্জেও যোগ্যতার ভিত্তিতে ষ্টাফ রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ দেন। তারা হয়ে গেলেন বেতনভূক্ত, পেশাদার সাংবাদিক। দৈনিক বাংলার বাদ-বাকীরা এবং ইত্তেফাকের জেলা সংবাদদাতারা লাইনেজ, রিটেইনার পেতে সুরু করলেন।

সম্মেলনে গ্রহীত মেনিফেষ্টোতে যে লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছিল তা হলো,

এক. সারা দেশের মফঃস্বল সাংবাদিকদেরকে ঐক্যবদ্ধ;

দুই. ঐক্যবদ্ধ আন্দোিলনের মাধ্যমে সকল মফঃস্বল সাংবাদিককে স্টাফ বা বেতনভূক্ত রিপোর্টার পদে উন্নীত করে মফঃস্বল সাংবাদিকতাকেও পেশায় পরিণত করা;

তিন. অতঃপর মফ:স্বলে কর্মওু সকল সাংবাদিককে বেতন বোর্ড রোয়েদাদে ষ্টাফ রিপোর্টারদের জন্য বরাদ্দ সকল সুযোগ সুবিধা আদায়;

চার. কালক্রমে ঢাকাস্থ এবং সকল মফঃস্বল সাংবাদিককে ঐক্যবদ্ধ করে একই সংগঠনে সকলে সামিল হওয়া এবং

পাঁচ. এভাবে গঠিত ঐক্যব্ধ সংগঠনে সারা দেশের সকল সাংবাদিককে ঐক্যবদ্ধ করে সাংবাদিকদের অধিকতর মর্য্যাদা আদায়ের জন্য ধাপে ধাপে আন্দোলন গড়ে তোলা।

এ লক্ষ্যগুলির সবগুলি অর্জিত হয়নি তবে বেশ কিছু অর্জিত হয়েছে। তাকালেই চোখে পড়ে এখন অনেক মফঃস্বল সাংবাদিকই মোটামুটি পরিশ্রমিক পাচ্ছেন।

এখন প্রয়োজন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ফেডারেশন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যব্ধভাবে পরস্পরের দাবী আদায়ে সমন্বিত আন্দোলন গড়ে তোলা।

সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা হিসেবে স্বীকৃত বটে কিন্তু তাদের উপযুক্ত মর্য্যাদা আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কারণ অনৈক্য। বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি মহল বিশেষ কর্তৃক কুক্ষিগতকরে ফেলায় তা আজ অস্তিত্বহীন। ফেডারেলও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন রাজনৈতিক দৃষ্টি ভংগীর অজুহাতে এক দশকেরও বেশী আগে থেকে বিভক্ত।

তাই আজ প্রধান দায়িত্ব রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা-আদর্শিক অবস্থান নির্বিষে সকল সাংবাদিকের, বিশোষতঃ মফঃস্বল সাংবাদিকের ঐক্যবদ্ধ নতুন সংগঠন গড়ে তোলা এবং একই সাথে উভয় ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন আগের মত এক সংগঠনে পরিণত হলে সকল সাংবাদিকই উপকৃত হবেন। আর এটা নির্ভর করবে নেতৃত্বের আন্তরিকতা এবং রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি নিরপেক্ষ দৃষ্টি ভঙ্গীর উপর।

সাংবাদিকতা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি পেশা। দুবৃত্তদের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়ে আহত নিহত হন সাংবাদিকেরা। দুর্নীতিাবজদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করলে মানহানির মোকর্দমার আশংকা। সরকারের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করলে সরকারের অসহনশীল অংশ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক। সাংবাদিকতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকী দিতে পরোয়া করেন না।

এ ধরনের আরও অনেক প্রতিকূলতা আছে, অতীতেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে হয়তো যদি সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন না করেন।

কিন্তু এগুলির কাছে মাথা নত করলে অপশক্তিগুলির কাছে আত্মসমর্পন করতে হবে। কাজেই ঝুঁকি নিয়েই সাংবাদিকতা করতে হবে। অনেক সময় আদালতকে পাশে পাওয়া যাবে এবং অতীতেও এমন কি সামরিক শাসনামলেও, কখনও কখনও আদলাত দৃঢ়তার সাথে সাংবাদিকের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।

এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, পুলিশের ভূমিকা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সুষ্ঠু, সাধীন, সৎ সাংবাদিকাতর পরিপস্থী। তবুও তার কাছে নতি স্বীকার করলে তা হবে আত্মঘাতি। আর পুলিশ যে এতটা সাহস পায় তারও প্রধান কারণ সাংবাদিকদের মধ্যেকার অনৈক্য।

তাই নগর-শহর-উপজেলা বা কোন প্রকার সংকীর্ণ আঞ্চলিকতা পরিহার করে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আজ সর্বাধিক।