ঢাকা ০২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

কোভিড-১৯ এর তান্ডব এবং আপদকালিন রেশনিং ব্যবস্থা

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ১২:৩২:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ এপ্রিল ২০২০
  • / 157

অতিউৎপাদন এবং অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থার কারনে শিল্পউন্নত দেশসহ সমগ্র বিশ্ব আজ নানামুখি সমস্যার সম্মুখিন।

এ ধরনের ব্যবস্থার কারনে যে কোন সময় অশান্ত হয়ে উঠতে পারে আমাদের প্রিয় বাসস্থান পৃথিবী নামক গ্রহটি। অপরদিকে নুন্যতম বেঁচে থাকার ভোগ্য পন্যের অভাবের কারনে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে সকল আইন কানুন মহামারির ভয়ভীতি সব কিছুই যেন উপেক্ষিত। রাষ্ট্রের সকল উপদেশ আদেশ উপেক্ষা করে মানুষ মহামারির মৃত্যু ঝুকি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে রাস্তায়।

করোনা ভাইরাসের কারনে বিশ্বের বেশিরভাগ রাষ্ট্রের জনগনকে মহামারির হাত থেকে রক্ষায় দীর্ঘ সরকারি ছুটি, লকডাউন এর মত কর্মসুচি বাস্তবায়নে দেশের সশস্ত্র বাহিনী মাঠে নামিয়ে সামাজিক দুরত্ব রক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন নিউজ মিডিয়ার খবরে তাই জানা যায়।

সরকার প্রধানদের আন্তরিক আকুতি এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা সমূহকে মাঠে নামিয়ে লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা অর্থাৎ কোভিড-১৯ কে রুখতে যেয়ে এই রুঢ় বাস্তবতা আজ আমাদের সামনে।

ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ প্যানডামিক বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে ১৯৩০ এর দশকের সংঘটিত মহামন্দার চেয়েও ভয়াবহ মন্দার দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব।

মহামারি বিশ্বে এই প্রথম নয়। বর্তমান ইতিহাস মতে ৪৩০ খৃস্টপুর্বে ঘটে যাওয়া “এপিডেমিক অব এথেন্স” থেকে বর্তমান সময়ের কোভিড-১৯ প্যানডামিক পর্যন্ত নানা সময়ে মানুষকে মোকাবেলা করতে হয়ছে নানা ধরনের মহামারী বা বিশ্ব মহামারির মত ঘটনাকে।

মহামারির এসব ইতিহাস থেকে জানা যায় অতিতের চেয়ে ইদানিং সময়ে ভাইরাস জনিত এপিডেমিক বা প্যানডামিক অসুখ সমুহের পাদুর্ভাব ঘন ঘন মানব সমাজকে আক্রমন করছে।

বিংশ শতাব্দির শুরুর এই ২০ বৎসরে ২০০৩ সালে সার্স এপিডেমিক, ২০০৯ সনে সোয়াইন ফুলু এপিডেমিক, ২০১০ সনে কলেরা এপিডেমিক অব হাইতি, ২০১২ সনে হাম, ২০১৪ সনে ইবোলা এপিডেমিক এবং ২০২০ সনে বর্তমান কোভিড-১৯ প্যানডামিক আমাদেরকে স্মরন করিয়ে দিচ্ছে যতই দিন যাচ্ছে ততই অল্প সময়ের ব্যবধানে আমরা এ ধরনের নতুন ভাইরাস জনিত মহামারি সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি। কাজেই আজ সময় এসেছে এ ধরনের মহামারি মোকাবেলায় আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটা।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যানে আমরা জানতে পারছি ভাইরাস সমুহ নতুন ভাবে যখনই আমাদের সামনে আসছে তখনই কিছুটা নতুন চরিত্র নিয়ে আসছে। আর নতুন ভাইরাস আক্রমন হলে ভাইরাসটির চরিত্র বুঝে উঠা পর্যন্ত মানুষজনকে ঘরে বসিয়ে রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনায় নুন্যতম বেচে থাকার আহারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন হয়ে পড়ছে মানুষের জিবন বাচানোর স্বার্থে।

কোভিড-১৯ এর আক্রমন থেকে দেশের সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে বাচাতে বাংলাদেশেও নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যাবস্থা । আবস্থাদৃষ্টে প্রতিয়মান হয়েছে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষকে ঘরে বসিয়ে নুন্যতম খাদ্যের যোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে সদিচ্ছার ঘাটতি নেই রাষ্ট্রযন্ত্রের জনকল্যামুখী উদ্যেগের।

তারপরও কাঙ্খিত ফলাফলের অভাবে প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে ভাইরাসে সংক্রামনের রুগির সংখ্যা। সংক্রামন ঠেকাতে এত উদ্যোগের পরও মানুষ বেরিয়ে পড়ছে খাদ্যের খোঁজে। কারন হিসাবে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি খবর আমাদের দৃষ্টি কেড়েছে ৭ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত করোনা রুগি সানাক্ত ১৬৪ আর রিলিফ চোর চিহ্নিত ২০৪ জন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরব উজ্জল ইতিহাস মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশে কর্মহীন অনাহারী মানুষের জন্য ভিক্ষা করে আনা রিলিফের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছিল বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।

এমনই একটি অবস্থায় সম্পদের সুষম বন্টনের বিষয়টি মাথায় নিয়ে আহার, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের মত মৌলিক অধিকার সমূহে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার মত বৃহৎ কার্য্যক্রম হাতে না নিতে পারলেও নিদেন পক্ষে কোভিড-১৯ এর ভাইরাসের আক্রমন বা এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে জিবন বাচানোর লক্ষ্য নিয়ে আপদকালিন ব্যাবস্থা হিসাবে সমগ্র জাতিকে একটি রেশনিং ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আশা বোধকরি সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। সহায়ক হবে দুর্যোগ মোকাবেলায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ ধরনের আপদকালিন সার্বজনিন রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা কি আদৌ আমাদের মত দেশের পক্ষে সম্ভব কি না?

২০১১ সনে আদম শুমারী মোতাবেক বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লক্ষ ১৯ হাজার, জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। দেশে মোট খানার সংখ্যা ৩ কোটি ২০ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭০০। খানার মোট আকার ৪ দশমিক ৪।

প্রতি খানায় যদি একটি রেশন কার্ড দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে রেশন কার্ড দিতে হবে ৩ কোটি ২০ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭০০ টি।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১১.৯০ শতাংশ এবং দারিদ্রের হার ২৬.২০ শতাংশ।

আপদকালিন সময়ের জন্য অতিদরিদ্র, দরিদ্র এবং স্বচ্ছল তিন ধরনের রেশন কার্ড করে দেশের সমগ্র জনগোস্টিকে কার্ডের আওতায় আনা যেতে পারে।

দেশের প্রতিটি খানাকে বাধ্যতামুলক ভাবে রেশনকার্ডের আওতাভুক্ত করার পক্রিয়া চালুর মধ্য দিয়ে আপদকালিন কার্ডটিকে জাতীয় পরিচয় পত্রের মত একটি সন্মানজনক পর্যায়ে উন্নিত করে চলমান পক্রিয়া হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে। প্রয়োজনে একটি অধিদপ্তর সৃস্টি করে তাদের মাধ্যমে আপদকালিন রেশন কার্ড নবায়ন ইস্যু এবং হালনাগাদ করার কাজটি চালু রাখা যেতে পারে।

রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত রেশনিং ব্যবস্থায় গণমানুষের প্রয়োজন পূরণের পাশাপাশি অপদকালিন প্রয়োজনীয় সামগ্রীও সরবরাহ করা যেতে পারে। যেমন বর্তমানে সৃষ্ট কোভিড-১৯ এ দরকার হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও ভিটামিন সি’র মত প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করা যেতে পারে।

দেশের যে কোন আপদকালিন সময়ে সরকারের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে রেশন কার্ডের শ্রেনী মোতাবেক ফ্রি, স্বল্প মুল্যে অথবা বাজার মুল্যে সাময়িক সময়ের জন্য উক্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রয়োজন মোতাবেক নাগরিকদের জন্য হোম ডেলিভারি বা দাপ্তরিক সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

মরনঘাতি কোভিড-১৯ এর সংক্রামন মোকাবেলার তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে সময় এসেছে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়ার। কারন এটি আজ স্পস্ট হয়ে উঠেছে আমরা মানুষজাতি প্রকৃতির সঙ্গে সঠিক আচরন বা প্রকৃতি বান্ধব আচরন করতে ব্যার্থ হয়েছি। ফলশ্রুতিতে প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগ মোকাবেলা আমাদের করতে হবে। একটার পর একটা এ ধরনের নতুন নতুন ভাইরাসের মোকাবেলা করে আমাদের বাঁচতে হবে।

এবারের কোভিড-১৯ আমাদের স্মরন করে দিয়েছে পুরো দুনিয়াটাকে অচল অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে খালি চোখে অদেখা এক ভাইরাস।

পৃথিবীর মহাশক্তিধর রাষ্ট্রকে নিজের নাগরিকের জীবন বাচাতে সামন্য কুইনাইন ঔষধ, মেডিক্যাল একসেসরিস এর জন্য অন্যের দারস্থ হতে হয়। কাজেই এই সংকটময় মুহুর্তে আমাদের শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন যে, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান খাদ্য, পানি আর ঔষধ। যে উপাদান সমূহ শুধু আমার নিজের জন্য নয় আমার আশে পাশের মানুষের জন্য নিশ্চিত করতে না পারলে আমিও বাঁচতে পারবো না।

কাজেই বর্তমান সংকটে আতংকিত না হয়ে সংকট মোকাবেলার মাধ্যমে আগামী দিনের নিরাপত্তার বিষয়কে সামনে নিয়ে এসে শুধুমাত্র অতি দরিদ্র বা দরিদ্র নয় সমগ্র জাতীর জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আপদকালিন রেশনিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। যে ব্যবস্থা আমাদের দেশ জাতি সমাজ তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আপদকালিন নিরাপত্তার রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করবে।

লেখক- নুরউদ্দিন শফি
প্রকাশক সম্পাদক, দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ।

কোভিড-১৯ এর তান্ডব এবং আপদকালিন রেশনিং ব্যবস্থা

প্রকাশিত সময় ১২:৩২:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ এপ্রিল ২০২০

অতিউৎপাদন এবং অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থার কারনে শিল্পউন্নত দেশসহ সমগ্র বিশ্ব আজ নানামুখি সমস্যার সম্মুখিন।

এ ধরনের ব্যবস্থার কারনে যে কোন সময় অশান্ত হয়ে উঠতে পারে আমাদের প্রিয় বাসস্থান পৃথিবী নামক গ্রহটি। অপরদিকে নুন্যতম বেঁচে থাকার ভোগ্য পন্যের অভাবের কারনে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে সকল আইন কানুন মহামারির ভয়ভীতি সব কিছুই যেন উপেক্ষিত। রাষ্ট্রের সকল উপদেশ আদেশ উপেক্ষা করে মানুষ মহামারির মৃত্যু ঝুকি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে রাস্তায়।

করোনা ভাইরাসের কারনে বিশ্বের বেশিরভাগ রাষ্ট্রের জনগনকে মহামারির হাত থেকে রক্ষায় দীর্ঘ সরকারি ছুটি, লকডাউন এর মত কর্মসুচি বাস্তবায়নে দেশের সশস্ত্র বাহিনী মাঠে নামিয়ে সামাজিক দুরত্ব রক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন নিউজ মিডিয়ার খবরে তাই জানা যায়।

সরকার প্রধানদের আন্তরিক আকুতি এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা সমূহকে মাঠে নামিয়ে লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা অর্থাৎ কোভিড-১৯ কে রুখতে যেয়ে এই রুঢ় বাস্তবতা আজ আমাদের সামনে।

ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ প্যানডামিক বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে ১৯৩০ এর দশকের সংঘটিত মহামন্দার চেয়েও ভয়াবহ মন্দার দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব।

মহামারি বিশ্বে এই প্রথম নয়। বর্তমান ইতিহাস মতে ৪৩০ খৃস্টপুর্বে ঘটে যাওয়া “এপিডেমিক অব এথেন্স” থেকে বর্তমান সময়ের কোভিড-১৯ প্যানডামিক পর্যন্ত নানা সময়ে মানুষকে মোকাবেলা করতে হয়ছে নানা ধরনের মহামারী বা বিশ্ব মহামারির মত ঘটনাকে।

মহামারির এসব ইতিহাস থেকে জানা যায় অতিতের চেয়ে ইদানিং সময়ে ভাইরাস জনিত এপিডেমিক বা প্যানডামিক অসুখ সমুহের পাদুর্ভাব ঘন ঘন মানব সমাজকে আক্রমন করছে।

বিংশ শতাব্দির শুরুর এই ২০ বৎসরে ২০০৩ সালে সার্স এপিডেমিক, ২০০৯ সনে সোয়াইন ফুলু এপিডেমিক, ২০১০ সনে কলেরা এপিডেমিক অব হাইতি, ২০১২ সনে হাম, ২০১৪ সনে ইবোলা এপিডেমিক এবং ২০২০ সনে বর্তমান কোভিড-১৯ প্যানডামিক আমাদেরকে স্মরন করিয়ে দিচ্ছে যতই দিন যাচ্ছে ততই অল্প সময়ের ব্যবধানে আমরা এ ধরনের নতুন ভাইরাস জনিত মহামারি সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি। কাজেই আজ সময় এসেছে এ ধরনের মহামারি মোকাবেলায় আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটা।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যানে আমরা জানতে পারছি ভাইরাস সমুহ নতুন ভাবে যখনই আমাদের সামনে আসছে তখনই কিছুটা নতুন চরিত্র নিয়ে আসছে। আর নতুন ভাইরাস আক্রমন হলে ভাইরাসটির চরিত্র বুঝে উঠা পর্যন্ত মানুষজনকে ঘরে বসিয়ে রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনায় নুন্যতম বেচে থাকার আহারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন হয়ে পড়ছে মানুষের জিবন বাচানোর স্বার্থে।

কোভিড-১৯ এর আক্রমন থেকে দেশের সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে বাচাতে বাংলাদেশেও নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যাবস্থা । আবস্থাদৃষ্টে প্রতিয়মান হয়েছে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষকে ঘরে বসিয়ে নুন্যতম খাদ্যের যোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে সদিচ্ছার ঘাটতি নেই রাষ্ট্রযন্ত্রের জনকল্যামুখী উদ্যেগের।

তারপরও কাঙ্খিত ফলাফলের অভাবে প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে ভাইরাসে সংক্রামনের রুগির সংখ্যা। সংক্রামন ঠেকাতে এত উদ্যোগের পরও মানুষ বেরিয়ে পড়ছে খাদ্যের খোঁজে। কারন হিসাবে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি খবর আমাদের দৃষ্টি কেড়েছে ৭ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত করোনা রুগি সানাক্ত ১৬৪ আর রিলিফ চোর চিহ্নিত ২০৪ জন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরব উজ্জল ইতিহাস মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশে কর্মহীন অনাহারী মানুষের জন্য ভিক্ষা করে আনা রিলিফের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছিল বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।

এমনই একটি অবস্থায় সম্পদের সুষম বন্টনের বিষয়টি মাথায় নিয়ে আহার, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের মত মৌলিক অধিকার সমূহে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার মত বৃহৎ কার্য্যক্রম হাতে না নিতে পারলেও নিদেন পক্ষে কোভিড-১৯ এর ভাইরাসের আক্রমন বা এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে জিবন বাচানোর লক্ষ্য নিয়ে আপদকালিন ব্যাবস্থা হিসাবে সমগ্র জাতিকে একটি রেশনিং ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আশা বোধকরি সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। সহায়ক হবে দুর্যোগ মোকাবেলায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ ধরনের আপদকালিন সার্বজনিন রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা কি আদৌ আমাদের মত দেশের পক্ষে সম্ভব কি না?

২০১১ সনে আদম শুমারী মোতাবেক বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লক্ষ ১৯ হাজার, জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। দেশে মোট খানার সংখ্যা ৩ কোটি ২০ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭০০। খানার মোট আকার ৪ দশমিক ৪।

প্রতি খানায় যদি একটি রেশন কার্ড দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে রেশন কার্ড দিতে হবে ৩ কোটি ২০ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭০০ টি।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১১.৯০ শতাংশ এবং দারিদ্রের হার ২৬.২০ শতাংশ।

আপদকালিন সময়ের জন্য অতিদরিদ্র, দরিদ্র এবং স্বচ্ছল তিন ধরনের রেশন কার্ড করে দেশের সমগ্র জনগোস্টিকে কার্ডের আওতায় আনা যেতে পারে।

দেশের প্রতিটি খানাকে বাধ্যতামুলক ভাবে রেশনকার্ডের আওতাভুক্ত করার পক্রিয়া চালুর মধ্য দিয়ে আপদকালিন কার্ডটিকে জাতীয় পরিচয় পত্রের মত একটি সন্মানজনক পর্যায়ে উন্নিত করে চলমান পক্রিয়া হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে। প্রয়োজনে একটি অধিদপ্তর সৃস্টি করে তাদের মাধ্যমে আপদকালিন রেশন কার্ড নবায়ন ইস্যু এবং হালনাগাদ করার কাজটি চালু রাখা যেতে পারে।

রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত রেশনিং ব্যবস্থায় গণমানুষের প্রয়োজন পূরণের পাশাপাশি অপদকালিন প্রয়োজনীয় সামগ্রীও সরবরাহ করা যেতে পারে। যেমন বর্তমানে সৃষ্ট কোভিড-১৯ এ দরকার হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও ভিটামিন সি’র মত প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করা যেতে পারে।

দেশের যে কোন আপদকালিন সময়ে সরকারের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে রেশন কার্ডের শ্রেনী মোতাবেক ফ্রি, স্বল্প মুল্যে অথবা বাজার মুল্যে সাময়িক সময়ের জন্য উক্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রয়োজন মোতাবেক নাগরিকদের জন্য হোম ডেলিভারি বা দাপ্তরিক সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

মরনঘাতি কোভিড-১৯ এর সংক্রামন মোকাবেলার তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে সময় এসেছে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়ার। কারন এটি আজ স্পস্ট হয়ে উঠেছে আমরা মানুষজাতি প্রকৃতির সঙ্গে সঠিক আচরন বা প্রকৃতি বান্ধব আচরন করতে ব্যার্থ হয়েছি। ফলশ্রুতিতে প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগ মোকাবেলা আমাদের করতে হবে। একটার পর একটা এ ধরনের নতুন নতুন ভাইরাসের মোকাবেলা করে আমাদের বাঁচতে হবে।

এবারের কোভিড-১৯ আমাদের স্মরন করে দিয়েছে পুরো দুনিয়াটাকে অচল অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে খালি চোখে অদেখা এক ভাইরাস।

পৃথিবীর মহাশক্তিধর রাষ্ট্রকে নিজের নাগরিকের জীবন বাচাতে সামন্য কুইনাইন ঔষধ, মেডিক্যাল একসেসরিস এর জন্য অন্যের দারস্থ হতে হয়। কাজেই এই সংকটময় মুহুর্তে আমাদের শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন যে, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান খাদ্য, পানি আর ঔষধ। যে উপাদান সমূহ শুধু আমার নিজের জন্য নয় আমার আশে পাশের মানুষের জন্য নিশ্চিত করতে না পারলে আমিও বাঁচতে পারবো না।

কাজেই বর্তমান সংকটে আতংকিত না হয়ে সংকট মোকাবেলার মাধ্যমে আগামী দিনের নিরাপত্তার বিষয়কে সামনে নিয়ে এসে শুধুমাত্র অতি দরিদ্র বা দরিদ্র নয় সমগ্র জাতীর জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আপদকালিন রেশনিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। যে ব্যবস্থা আমাদের দেশ জাতি সমাজ তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আপদকালিন নিরাপত্তার রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করবে।

লেখক- নুরউদ্দিন শফি
প্রকাশক সম্পাদক, দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ।