ঢাকা ০৬:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

এক শতাব্দীরও বেশি সময় পরে কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে বানরের খাঁচায় বন্দি রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের ক্ষমা প্রার্থনা

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৪:৫১:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অগাস্ট ২০২০
  • / 140

ডেস্ক নিউজঃ এখন থেকে ঠিক ১১৬ বছর আগে ১৯০৪ সালে বর্তমান গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকে এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণকে অপহরণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হয় ।

অপহরণের প্রায় দুই বছর পরে ১৯০৬ সালে তাকে অমানবিকভাবে কয়েক সপ্তাহের জন্য নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানায় বানরের খাঁচায় বন্দী করে রাখা হয়।

সেখানে তাকে বানরের সাথে রাখা হয়েছিল। এতে দর্শনার্থীদের অনেকেই বুঝতে পারতেন না সেটা আসলে মানুষ নাকি বানর? শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও আসলে যুবকটি ছিলেন ছোটখাটো দেখতে, গায়ের রঙ কালো, দাঁত অত্যন্ত তীক্ষ্ণ।

পরনে পোশাক থাকলেও পায়ে কোন জুতা ছিলো না।

তীর এবং ধনুক দিয়ে লক্ষ্যভেদের ব্যাপারে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ।

নানা রকমের কসরত দেখিয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জন করতেন তিনি। সে সময়ের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের মাধ্যমে জানা যায় দর্শকদের প্রধান আগ্রহ ছিল তার ধারালো দাঁত।

ব্রংস চিড়িয়াখানার বানরের খাঁচায় রাখা এই আফ্রিকান লোকটির নাম ছিলো ওটা বেঙ্গা। চিড়িয়াখানার দলিল থেকে জানা যায় তার উচ্চতা ছিল মাত্র চার ফুট এগারো ইঞ্চি এবং ওজন ছিল ১০৩ পাউন্ড। তার বসতি ছিলো কঙ্গোর কাসাই নদী তীরবর্তী এক গ্রামে।

তাকে যে খাঁচাইয় আটকে রাখা হত তার বাইরে একটি নোটিসে লেখা ছিল: ”সেপ্টেম্বর মাসের প্রত্যেকদিন দুপুরে তাকে প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে।”

সেসময় নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় তাকে দর্শনার্থীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় বলে উল্লেখ করা হয়। বিশেষত শিশুরা তাকে দেখে খুব মজা পেতো, হাসাহাসি করতো এবং জোরে চিৎকার করে উঠতো।

রিপোর্টে বলা হয়েছিল তাকে দেখতে কোনো কোনোদিন খাঁচার আশেপাশে একসঙ্গে পাঁচশো লোকও জড়ো হয়েছে।

শুরুতে একটি ছোট খাঁচায় রাখা হলেও পরে দর্শকের সংখ্যা বাড়তে থাকায় তাকে একটি বড় খাঁচায় সরিয়ে নেওয়া হয়। পত্রিকার রিপোর্টে আরো বলা হয়, বেঙ্গার কারণে চিড়িয়াখানায় আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে ও বাইরে ব্রংস চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের এই অমানবিক উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

কিন্তু চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তাকে বন্দী করে রাখার পক্ষে পালটা যুক্তি দিতে শুরু করে। কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হয় তাকে প্রদর্শনের জন্য সেখানে আটকে রাখা হয়নি বরং রাখা হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে, যাতে করে সে এখান থেকে পালিয়ে যেতে না পারে।

ওটা বেঙ্গাকে বন্দী করে রাখার এই ইতিহাস ধামাচাপা দিতে কর্তৃপক্ষের তরফে কয়েক দশক ধরে নানা ধরনের অপচেষ্টা চালানো হলেও ঘটনার প্রায় ১১৪ বছর পর তাকে খাঁচায় আটকে প্রদর্শনের জন্য ক্ষমা চেয়েছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি যারা নিউ ইয়র্কের ওই চিড়িয়াখানাটি পরিচালনা করে।

নিউ ইয়র্কের ব্রংস চিড়িয়াখানায় কৃষ্ণাঙ্গ ওটা বেঙ্গাকে প্রদর্শনীর জন্য প্রথম হাজির করা হয়েছিল ১৯০৬ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর। এর পর দিন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ও ইউরোপে এই ঘটনা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি শুরু হলে তাকে ওই বছরের ২৮শে সেপ্টেম্বর মুক্তি দেওয়া হয়।

যদিও এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইতে তাদের এক শতাব্দীরও বেশি সময় লেগে যায়।

বর্তমান সময়েও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি নানা আচরণ থেকে বোঝা যায় বর্ণবাদ এখনও যুক্তরাষ্ট্রে কতোখানি প্রকট।

সম্প্রতি পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের নির্মম মৃত্যুর ঘটনার পর যখন বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলন ও বিক্ষোভে সব তোলপাড় হচ্ছে ঠিক তখনই প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে ওটা বেঙ্গাকে চিড়িয়াখানায় বন্দী করে রাখার ঘটনা আবারও দেশটির সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়ে উঠেছে।

 

 

সূত্রঃ বিবিসি

এক শতাব্দীরও বেশি সময় পরে কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে বানরের খাঁচায় বন্দি রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের ক্ষমা প্রার্থনা

প্রকাশিত সময় ০৪:৫১:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অগাস্ট ২০২০

ডেস্ক নিউজঃ এখন থেকে ঠিক ১১৬ বছর আগে ১৯০৪ সালে বর্তমান গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকে এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণকে অপহরণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হয় ।

অপহরণের প্রায় দুই বছর পরে ১৯০৬ সালে তাকে অমানবিকভাবে কয়েক সপ্তাহের জন্য নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানায় বানরের খাঁচায় বন্দী করে রাখা হয়।

সেখানে তাকে বানরের সাথে রাখা হয়েছিল। এতে দর্শনার্থীদের অনেকেই বুঝতে পারতেন না সেটা আসলে মানুষ নাকি বানর? শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও আসলে যুবকটি ছিলেন ছোটখাটো দেখতে, গায়ের রঙ কালো, দাঁত অত্যন্ত তীক্ষ্ণ।

পরনে পোশাক থাকলেও পায়ে কোন জুতা ছিলো না।

তীর এবং ধনুক দিয়ে লক্ষ্যভেদের ব্যাপারে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ।

নানা রকমের কসরত দেখিয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জন করতেন তিনি। সে সময়ের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের মাধ্যমে জানা যায় দর্শকদের প্রধান আগ্রহ ছিল তার ধারালো দাঁত।

ব্রংস চিড়িয়াখানার বানরের খাঁচায় রাখা এই আফ্রিকান লোকটির নাম ছিলো ওটা বেঙ্গা। চিড়িয়াখানার দলিল থেকে জানা যায় তার উচ্চতা ছিল মাত্র চার ফুট এগারো ইঞ্চি এবং ওজন ছিল ১০৩ পাউন্ড। তার বসতি ছিলো কঙ্গোর কাসাই নদী তীরবর্তী এক গ্রামে।

তাকে যে খাঁচাইয় আটকে রাখা হত তার বাইরে একটি নোটিসে লেখা ছিল: ”সেপ্টেম্বর মাসের প্রত্যেকদিন দুপুরে তাকে প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে।”

সেসময় নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় তাকে দর্শনার্থীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় বলে উল্লেখ করা হয়। বিশেষত শিশুরা তাকে দেখে খুব মজা পেতো, হাসাহাসি করতো এবং জোরে চিৎকার করে উঠতো।

রিপোর্টে বলা হয়েছিল তাকে দেখতে কোনো কোনোদিন খাঁচার আশেপাশে একসঙ্গে পাঁচশো লোকও জড়ো হয়েছে।

শুরুতে একটি ছোট খাঁচায় রাখা হলেও পরে দর্শকের সংখ্যা বাড়তে থাকায় তাকে একটি বড় খাঁচায় সরিয়ে নেওয়া হয়। পত্রিকার রিপোর্টে আরো বলা হয়, বেঙ্গার কারণে চিড়িয়াখানায় আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে ও বাইরে ব্রংস চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের এই অমানবিক উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

কিন্তু চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তাকে বন্দী করে রাখার পক্ষে পালটা যুক্তি দিতে শুরু করে। কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হয় তাকে প্রদর্শনের জন্য সেখানে আটকে রাখা হয়নি বরং রাখা হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে, যাতে করে সে এখান থেকে পালিয়ে যেতে না পারে।

ওটা বেঙ্গাকে বন্দী করে রাখার এই ইতিহাস ধামাচাপা দিতে কর্তৃপক্ষের তরফে কয়েক দশক ধরে নানা ধরনের অপচেষ্টা চালানো হলেও ঘটনার প্রায় ১১৪ বছর পর তাকে খাঁচায় আটকে প্রদর্শনের জন্য ক্ষমা চেয়েছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি যারা নিউ ইয়র্কের ওই চিড়িয়াখানাটি পরিচালনা করে।

নিউ ইয়র্কের ব্রংস চিড়িয়াখানায় কৃষ্ণাঙ্গ ওটা বেঙ্গাকে প্রদর্শনীর জন্য প্রথম হাজির করা হয়েছিল ১৯০৬ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর। এর পর দিন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ও ইউরোপে এই ঘটনা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি শুরু হলে তাকে ওই বছরের ২৮শে সেপ্টেম্বর মুক্তি দেওয়া হয়।

যদিও এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইতে তাদের এক শতাব্দীরও বেশি সময় লেগে যায়।

বর্তমান সময়েও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি নানা আচরণ থেকে বোঝা যায় বর্ণবাদ এখনও যুক্তরাষ্ট্রে কতোখানি প্রকট।

সম্প্রতি পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের নির্মম মৃত্যুর ঘটনার পর যখন বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলন ও বিক্ষোভে সব তোলপাড় হচ্ছে ঠিক তখনই প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে ওটা বেঙ্গাকে চিড়িয়াখানায় বন্দী করে রাখার ঘটনা আবারও দেশটির সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়ে উঠেছে।

 

 

সূত্রঃ বিবিসি