ঢাকা ১০:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতে বাইডেন এখন কি করবেন? — ১ ম পর্ব

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৮:২৫:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুন ২০২১
  • / 215

GettyImages-Jo-Biden

13076878_1153703927996540_1436594833087493010_n
আসাদুজ্জামান নোহাশ
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক

এমনিতেই পূর্বত্তরসরীর রেখে যাওয়া ঝামেলা পূর্ণ বৈদেশিকনীতি তার উপর আবার নিজ দলের মধ্যে বিভাজন (অপেক্ষাকৃত তরুনদের দ্বারা)। মাঝে মাঝে বয়সের জন্য মানসিক ভারসম্যহীনতার মতো কটুকথা শুনতে হয় তাকে। আবার যোগ হয়েছে ঋনের বোঝা, করোনায় বেকারত্ব ইতহাসের রেকর্ড ভেঙ্গে এখন ১৪.৮৮%। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি প্রায় ৬ লাখের কাছাকাছি করোনায় মৃত্যু। সর্বশেষ যোগ হলো ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সংঘাত। উত্তপ্ত হয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, কোন পথে এখন হাটবেন বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট মি. জো বাইডেন?

উত্তপ্ত মধ্রপ্রাচ্য, বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা
ফিলিস্তিনি ইসরাইল যুদ্ধে ১৬ মে চীনের আহব্বানে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বাইডেনের দেশ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি প্রস্তাব আটকিয়ে দেয়। যেখানে বিশ্ব জনমত এবার ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিল।

সন্মানিত পাঠক এই ফলাফল আপাত দৃষ্টিতে ফলাফলের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখাটা সঠিক হবে না কারণ এর প্রভাব সুদূর প্রসারী এবং আমেরিকার নীতিতে পরিবর্তন ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার দ্বার উন্মোচন করবে।

লক্ষন বিবেচনায় প্রতীয়মান হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র এখন একঘরে হয়ে যাচ্ছে। কেননা এবারের যুদ্ধে মুসলিম বিশ্বের তৎপরতা মোটাদাগে চোখে পড়ার মত। ইসরাইলের বিপক্ষে এবার বিশ্ব জনমত জেগে উঠেছিল। বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব হতে শুরু করে মালয়েশিার হিসামুদ্দিন হোসাইন পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান বাখ্যা করেছেন দ্রুত সময়ে। নিজ দেশের জনগন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে ফিলিস্থিনিদের সমর্থনে।

তাবৎ বিশ্বের মোড়লকে দেখা গেল তার মোড়লিপনায় অন্যকে ভাগ দিতে হচ্ছে। অথচ যুদ্ধ বিরতীর ঘোষনা আমেরিকার নিকট হতে আসলেই বাইডনে বেশি লাভবান হতেন। আর নিজ দেশের ভাবমূর্তি আরও বেড়ে যেত। কি সুযোগটাই না মিস করলেন বাইডেন। এই জায়গা নিল চীন, ইরান, তুরস্ক আর মিশর।

গত ২০ মে আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি যখন যুদ্ধ বিরতী ঘোষনা করেন তখন লাখো ফিলিস্তিনি উচ্ছাসে মেতে ওঠে। কি জন্য এই আনন্দ? তা বলার জন্য পাঠকগনের নিকট হতে সময় চেয়ে নিচ্ছি, আপাতত আজকের বিষয় নিয়েই আলেচানা করা যাক। ফিলিস্তিনের এই উচ্ছাসে সত্যিকার অর্থে পরাজয় হলো আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির। আবারও প্রতিয়মান হলো ভুলপথে হাটছেন বাইডেন মহাশয়।

নিজ দেশে চাপের মুখে বাইডেন
বিজনেস টুডে এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২০ সালে মোট ঋণ ২৩.৪ ট্রিলিয়ন। মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৭২ হাজার ৩০৯ ডলার।

গত বছর মে মাসের ২৫ তারিখে জর্জ ফ্লোয়েড এর হত্যা কান্ডের মাঝে আমেরিকা ফুসে ওঠার স্মৃতি এখনও মানুষের মনে দাগকাটে। অথচ দ্যা গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই কৃষ্ণাঙ্গ ভোটের ৮৮% ই বাইডেনের পকেটে গেছে। আর এর জোরেই তিনি ক্ষমতায়।

বেকারত্ব একটি মারাত্বক সমস্যায় ফেলেছে বাইডেনকে। ইতিহাস কাপানো মার্জিন রেটে বেড়ে গেছে বেকারত্ব। কংগ্রেশনাল রিসার্স সার্ভিস (সিআরএস) এর রিপোর্ট অনুযায়ী করোনা মহামারীতে আমেরিকার বেকারত্ব ১৪.৮৮% এ উন্নতি হয়েছে। অথচ ২০২০ সালের শুরুতে বেকারত্বের হার ছিলো ৫.৫%। এখন পর্যন্ত বাইডেন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সঠিক কোন পরিকল্পনা করতে পারেননি অথবা বেকারত্ব সন্তোষ জনক হারে কমাতে পারেননি। যেটা তার ও দেশের জন্য একটি বড় সমস্যা।

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর পর ইসরাইলকে অকাট্য সমর্থন করে নিজ দলের অপেক্ষাকৃত তরুনদের রোষানলের মধ্যে পড়েন বাইডেন। বাইডেনকে তুলোধুনা করেন নিউইইয়র্ক রাজ্যোর নির্বাচিত ডেমোক্রেট সিনেটর ওকাসিও কর্টেজ। এতে উসকানি দেন প্রবীন সিনেটর বার্নি স্যান্ডর্স।

গোটা দল এখন দুই শিবিরে বিভক্ত। বার্নি স্যান্ডর্স (বামপন্থী ডেমোক্রেট) ২০১৬ সাল হতেই নিরবে এই ধারার সূচনা করেছেন। আর এবার প্রকাশ্যে এনেছেন নিউইয়র্ক রাজ্য হতে নির্বাচিত বামপন্থী ডেমোক্রেট সিনেটর ওকাসিও কর্টেজ।

কোরি বুশও জানান দিলেন যে আমেরিকানরাও ইসরাইলের অন্যায়ের বিরোধী। এতোদিন যা হওয়ার হয়েছে এখন থেকে আর নয়। তবে ২০১৬ সালে বার্নি স্যান্ডর্স বলেছিলেন “নেতানিয়াহু একজন বেপরোয়া, বর্ণবাদী এবং একনায়ক।”

এই চাপের ফলাফল দেখেন কি চমৎকার বাইডেন যুদ্ধ বিরতীর ঠিক একদিন আগে তড়িঘড়ি করে ঘোষনা করেন “দুই রাষ্ট্র সমাধানই এই সংঘাতের একমাত্র সমাধান এবং ইসরাইলকে জেরুজালেম নগরে সাম্প্রদায়িক লড়াই বন্ধ করতে হবে”।

মানে কি? মানেটা হলো এটার মাধ্যমে বাইডেন তার ব্যর্থতা ঢাকতে চাচ্ছেন। কংগ্রেসে ডেমোক্রেটদেরও মুখ বন্ধ রাখা হলো, আবার বাকি বিশ্ব (তুরস্ক, ইরান, আর চীনকে) একটি ভাল জবাব দেওয়া গেল। আর আশার বানী বুকে নিয়ে ফিলিস্তিনিরা বুক বাঁধলো।

ইসরালিদের বিপক্ষে যাওয়ার পরিণতি
রাশিদা তালিব, ইলহান ওমর, ওকাসিও কর্টেজ, কোরি বুশ এবং বার্নি স্যান্ডর্স প্রমুখ শুধু বাইডেনের এসব বিবৃতিতে মানবেন বলে মনে হয় না, তারা কাজে প্রমান দেখতে চাইবেন। কেননা মি. প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ শুরুর পরে ইসরাইলের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।

এখন দেখা যাক তিনি কি করেন। ইসরাইলিদের বিপক্ষে যান, নাকি ডেমোক্রেটদের কথা শুনে আমেরিকাকে সঠিক ট্র্যাকে রাখেন। যদি তিনি পরেরটা করেন তাহলে তার জন্য করুন পরিনতি ভোগ করতে হতে পারে। কারন ইসরাইল পারে না এমন কোন কাজ নেই। এর আগে যারাই তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়েছে, তাদেরকে অপমান করেছে, ঠিক মতো জীবন-জাপন করতে দেয়নি তাদের প্রত্যেককে করুন পরিনতি ভোগ করতে হয়েছে।

এই কাতারে আছেন গুন্টার গ্রাস একজন জার্মান লেখক। এই ব্যক্তি ১৯৯৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তিনি ২০১২ সালে ইসরাইলের অন্যায় আচরণ আর ফিলিস্তিনিদের করুন জীবনের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে একখানি কবিতা লিখেছিলেন। তার এই কবিতা লেখার দায়ে ইয়াহুদি সম্প্রদায় তার মুন্ডপাত করে সাথে সাথে সারা বিশ্বে তাকে পরিচিত করে তোলে একজন বিতর্কিত লেখক হিসেবে।

মেরিনা লি পেন একজন ফরাসি নারী রাজনীতিবিদ। ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন। বেচারা এমনিতেই মহিলা মানুষ তারপরে আবার নির্বাচনের আগে হলোকাষ্ট এর মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ইসরাইলের বিপক্ষে মন্তব্য করে ফেঁসে গেলেন। আর যা ফলাফল হওয়ার তাই হলো। অথচ প্রথম রাউন্ডের ভোট শেষে লি পেন ২৭% এবং ম্যাকরন ২৩% ভোট পেয়েছিলেন। নির্বাচিত হয়ে ম্যাকরন দৌড়ে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে নিহত ইয়াহুদিদের মেমোরিয়ালে গেলেন সন্মান জানাতে।

পাঠক এবার বলেন তো ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কেন এতো মুসলিম বিদ্বেষী? কথিত আছে আলবার্ট আইনস্টাইনকে ইসরাইলিরা প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দিতেই তিনি তা প্রত্যাক্ষান করেন। আর বাইডেন যে কড়া কথা বললেন তাতে তার কি অবস্থা হবে সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে ইয়াহুদিদের বিরাগভাজন হওয়াটা বোকামি তা তিনি ভালো করেই জানেন।

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে বিপদ
বাইডেন যাই বলুক না কেন কাজ না দেখে বিশ্বাস করা যায় না। এর আগে প্রেসিডেন্ট বুশ ও তার বাবা বড় বুশ, ক্লিনটন, ওবামা, নিক্সন সহ সবাই ফিলিস্তিনি ইস্যুতে একই কথা বলেছেন। কাজের কাজ কোন কিছুই হয়নি। কারন ইয়াহুদি লবি। চাক শুমার এর মত কঠোর ইসরাইল পন্থী সিনেটর যখন যুদ্ধ বিরতির কথা বললেন তখনও বাইডেন চুপ ছিলেন। যখন কংগ্রেস অধিবেশনে সিনেটররা ইসরাইলি বর্বরতার কথা বলছেন তখনও হোয়াইট হাইজে পরিবর্তনের কোন লক্ষন দেখা যায়নি। কারন ইসরাইলি লবি। (পরবর্তি পর্বের জন‍্য চোখ রাখুন স্বতঃকণ্ঠে )

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতে বাইডেন এখন কি করবেন? — ১ ম পর্ব

প্রকাশিত সময় ০৮:২৫:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুন ২০২১

13076878_1153703927996540_1436594833087493010_n
আসাদুজ্জামান নোহাশ
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক

এমনিতেই পূর্বত্তরসরীর রেখে যাওয়া ঝামেলা পূর্ণ বৈদেশিকনীতি তার উপর আবার নিজ দলের মধ্যে বিভাজন (অপেক্ষাকৃত তরুনদের দ্বারা)। মাঝে মাঝে বয়সের জন্য মানসিক ভারসম্যহীনতার মতো কটুকথা শুনতে হয় তাকে। আবার যোগ হয়েছে ঋনের বোঝা, করোনায় বেকারত্ব ইতহাসের রেকর্ড ভেঙ্গে এখন ১৪.৮৮%। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি প্রায় ৬ লাখের কাছাকাছি করোনায় মৃত্যু। সর্বশেষ যোগ হলো ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সংঘাত। উত্তপ্ত হয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, কোন পথে এখন হাটবেন বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট মি. জো বাইডেন?

উত্তপ্ত মধ্রপ্রাচ্য, বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা
ফিলিস্তিনি ইসরাইল যুদ্ধে ১৬ মে চীনের আহব্বানে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বাইডেনের দেশ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি প্রস্তাব আটকিয়ে দেয়। যেখানে বিশ্ব জনমত এবার ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিল।

সন্মানিত পাঠক এই ফলাফল আপাত দৃষ্টিতে ফলাফলের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখাটা সঠিক হবে না কারণ এর প্রভাব সুদূর প্রসারী এবং আমেরিকার নীতিতে পরিবর্তন ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার দ্বার উন্মোচন করবে।

লক্ষন বিবেচনায় প্রতীয়মান হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র এখন একঘরে হয়ে যাচ্ছে। কেননা এবারের যুদ্ধে মুসলিম বিশ্বের তৎপরতা মোটাদাগে চোখে পড়ার মত। ইসরাইলের বিপক্ষে এবার বিশ্ব জনমত জেগে উঠেছিল। বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব হতে শুরু করে মালয়েশিার হিসামুদ্দিন হোসাইন পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান বাখ্যা করেছেন দ্রুত সময়ে। নিজ দেশের জনগন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে ফিলিস্থিনিদের সমর্থনে।

তাবৎ বিশ্বের মোড়লকে দেখা গেল তার মোড়লিপনায় অন্যকে ভাগ দিতে হচ্ছে। অথচ যুদ্ধ বিরতীর ঘোষনা আমেরিকার নিকট হতে আসলেই বাইডনে বেশি লাভবান হতেন। আর নিজ দেশের ভাবমূর্তি আরও বেড়ে যেত। কি সুযোগটাই না মিস করলেন বাইডেন। এই জায়গা নিল চীন, ইরান, তুরস্ক আর মিশর।

গত ২০ মে আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি যখন যুদ্ধ বিরতী ঘোষনা করেন তখন লাখো ফিলিস্তিনি উচ্ছাসে মেতে ওঠে। কি জন্য এই আনন্দ? তা বলার জন্য পাঠকগনের নিকট হতে সময় চেয়ে নিচ্ছি, আপাতত আজকের বিষয় নিয়েই আলেচানা করা যাক। ফিলিস্তিনের এই উচ্ছাসে সত্যিকার অর্থে পরাজয় হলো আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির। আবারও প্রতিয়মান হলো ভুলপথে হাটছেন বাইডেন মহাশয়।

নিজ দেশে চাপের মুখে বাইডেন
বিজনেস টুডে এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২০ সালে মোট ঋণ ২৩.৪ ট্রিলিয়ন। মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৭২ হাজার ৩০৯ ডলার।

গত বছর মে মাসের ২৫ তারিখে জর্জ ফ্লোয়েড এর হত্যা কান্ডের মাঝে আমেরিকা ফুসে ওঠার স্মৃতি এখনও মানুষের মনে দাগকাটে। অথচ দ্যা গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই কৃষ্ণাঙ্গ ভোটের ৮৮% ই বাইডেনের পকেটে গেছে। আর এর জোরেই তিনি ক্ষমতায়।

বেকারত্ব একটি মারাত্বক সমস্যায় ফেলেছে বাইডেনকে। ইতিহাস কাপানো মার্জিন রেটে বেড়ে গেছে বেকারত্ব। কংগ্রেশনাল রিসার্স সার্ভিস (সিআরএস) এর রিপোর্ট অনুযায়ী করোনা মহামারীতে আমেরিকার বেকারত্ব ১৪.৮৮% এ উন্নতি হয়েছে। অথচ ২০২০ সালের শুরুতে বেকারত্বের হার ছিলো ৫.৫%। এখন পর্যন্ত বাইডেন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সঠিক কোন পরিকল্পনা করতে পারেননি অথবা বেকারত্ব সন্তোষ জনক হারে কমাতে পারেননি। যেটা তার ও দেশের জন্য একটি বড় সমস্যা।

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর পর ইসরাইলকে অকাট্য সমর্থন করে নিজ দলের অপেক্ষাকৃত তরুনদের রোষানলের মধ্যে পড়েন বাইডেন। বাইডেনকে তুলোধুনা করেন নিউইইয়র্ক রাজ্যোর নির্বাচিত ডেমোক্রেট সিনেটর ওকাসিও কর্টেজ। এতে উসকানি দেন প্রবীন সিনেটর বার্নি স্যান্ডর্স।

গোটা দল এখন দুই শিবিরে বিভক্ত। বার্নি স্যান্ডর্স (বামপন্থী ডেমোক্রেট) ২০১৬ সাল হতেই নিরবে এই ধারার সূচনা করেছেন। আর এবার প্রকাশ্যে এনেছেন নিউইয়র্ক রাজ্য হতে নির্বাচিত বামপন্থী ডেমোক্রেট সিনেটর ওকাসিও কর্টেজ।

কোরি বুশও জানান দিলেন যে আমেরিকানরাও ইসরাইলের অন্যায়ের বিরোধী। এতোদিন যা হওয়ার হয়েছে এখন থেকে আর নয়। তবে ২০১৬ সালে বার্নি স্যান্ডর্স বলেছিলেন “নেতানিয়াহু একজন বেপরোয়া, বর্ণবাদী এবং একনায়ক।”

এই চাপের ফলাফল দেখেন কি চমৎকার বাইডেন যুদ্ধ বিরতীর ঠিক একদিন আগে তড়িঘড়ি করে ঘোষনা করেন “দুই রাষ্ট্র সমাধানই এই সংঘাতের একমাত্র সমাধান এবং ইসরাইলকে জেরুজালেম নগরে সাম্প্রদায়িক লড়াই বন্ধ করতে হবে”।

মানে কি? মানেটা হলো এটার মাধ্যমে বাইডেন তার ব্যর্থতা ঢাকতে চাচ্ছেন। কংগ্রেসে ডেমোক্রেটদেরও মুখ বন্ধ রাখা হলো, আবার বাকি বিশ্ব (তুরস্ক, ইরান, আর চীনকে) একটি ভাল জবাব দেওয়া গেল। আর আশার বানী বুকে নিয়ে ফিলিস্তিনিরা বুক বাঁধলো।

ইসরালিদের বিপক্ষে যাওয়ার পরিণতি
রাশিদা তালিব, ইলহান ওমর, ওকাসিও কর্টেজ, কোরি বুশ এবং বার্নি স্যান্ডর্স প্রমুখ শুধু বাইডেনের এসব বিবৃতিতে মানবেন বলে মনে হয় না, তারা কাজে প্রমান দেখতে চাইবেন। কেননা মি. প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ শুরুর পরে ইসরাইলের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।

এখন দেখা যাক তিনি কি করেন। ইসরাইলিদের বিপক্ষে যান, নাকি ডেমোক্রেটদের কথা শুনে আমেরিকাকে সঠিক ট্র্যাকে রাখেন। যদি তিনি পরেরটা করেন তাহলে তার জন্য করুন পরিনতি ভোগ করতে হতে পারে। কারন ইসরাইল পারে না এমন কোন কাজ নেই। এর আগে যারাই তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়েছে, তাদেরকে অপমান করেছে, ঠিক মতো জীবন-জাপন করতে দেয়নি তাদের প্রত্যেককে করুন পরিনতি ভোগ করতে হয়েছে।

এই কাতারে আছেন গুন্টার গ্রাস একজন জার্মান লেখক। এই ব্যক্তি ১৯৯৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তিনি ২০১২ সালে ইসরাইলের অন্যায় আচরণ আর ফিলিস্তিনিদের করুন জীবনের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে একখানি কবিতা লিখেছিলেন। তার এই কবিতা লেখার দায়ে ইয়াহুদি সম্প্রদায় তার মুন্ডপাত করে সাথে সাথে সারা বিশ্বে তাকে পরিচিত করে তোলে একজন বিতর্কিত লেখক হিসেবে।

মেরিনা লি পেন একজন ফরাসি নারী রাজনীতিবিদ। ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন। বেচারা এমনিতেই মহিলা মানুষ তারপরে আবার নির্বাচনের আগে হলোকাষ্ট এর মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ইসরাইলের বিপক্ষে মন্তব্য করে ফেঁসে গেলেন। আর যা ফলাফল হওয়ার তাই হলো। অথচ প্রথম রাউন্ডের ভোট শেষে লি পেন ২৭% এবং ম্যাকরন ২৩% ভোট পেয়েছিলেন। নির্বাচিত হয়ে ম্যাকরন দৌড়ে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে নিহত ইয়াহুদিদের মেমোরিয়ালে গেলেন সন্মান জানাতে।

পাঠক এবার বলেন তো ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কেন এতো মুসলিম বিদ্বেষী? কথিত আছে আলবার্ট আইনস্টাইনকে ইসরাইলিরা প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দিতেই তিনি তা প্রত্যাক্ষান করেন। আর বাইডেন যে কড়া কথা বললেন তাতে তার কি অবস্থা হবে সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে ইয়াহুদিদের বিরাগভাজন হওয়াটা বোকামি তা তিনি ভালো করেই জানেন।

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে বিপদ
বাইডেন যাই বলুক না কেন কাজ না দেখে বিশ্বাস করা যায় না। এর আগে প্রেসিডেন্ট বুশ ও তার বাবা বড় বুশ, ক্লিনটন, ওবামা, নিক্সন সহ সবাই ফিলিস্তিনি ইস্যুতে একই কথা বলেছেন। কাজের কাজ কোন কিছুই হয়নি। কারন ইয়াহুদি লবি। চাক শুমার এর মত কঠোর ইসরাইল পন্থী সিনেটর যখন যুদ্ধ বিরতির কথা বললেন তখনও বাইডেন চুপ ছিলেন। যখন কংগ্রেস অধিবেশনে সিনেটররা ইসরাইলি বর্বরতার কথা বলছেন তখনও হোয়াইট হাইজে পরিবর্তনের কোন লক্ষন দেখা যায়নি। কারন ইসরাইলি লবি। (পরবর্তি পর্বের জন‍্য চোখ রাখুন স্বতঃকণ্ঠে )