ঢাকা ১০:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

কাস্মীর সংকট ও পাক-ভারত-দ্বন্দ্ব নিরসন

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ১০:৪৬:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ জুলাই ২০২১
  • / 146

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আমাদের উপমহাদেমের সর্বাপেক্ষা বড় ও দীর্ঘ স্থায়ী সংকট কাস্মীর সমস্যা। অতীতে ভুস্বর্গ বলে পরিচিত, ভারতের (অবিভক্ত) সর্বাধিক আকর্ষণীয় পর্য্যটন এলাকা, পৃথিবী খ্যাত কাস্মীরী খাল এবং উল এই কাস্মীর সংকটের অসহায় শিকার।

হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা, তার ফলে দফায় দফায় সংঘটিত ভয়াবহ দাঙ্গার পটভূমিতে সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের আগষ্টে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়-রাজনৈতিক-প্রশাসনিক অঙ্গন থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয় বৃটিশ সা¤্রাজ্যবাদ দীর্ঘ দু’শ বছর ব্যাপী ভারত শাসন ও শোষণের পর ।

কিন্তু ধূর্ত বৃটিশ শাসকের ভারত পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতের স্থায়ীরূপ দেওয়ার লক্ষে ভারতের কতিপয় অঞ্চল সংক্রান্ত বিষয়কে জটিলতর করে রেখে চলে যায়। অর্থাৎ ভারতের কয়েকটি অঞ্চল ভারত অথবা পাকিস্তান কোন দেশের সঙ্গে যুক্ত হবে সে বিষয়টি অমীমাংসিত রেখে চলে যায়।

অত:পর কাস্মীরের জনসংখ্যার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মুসলিম হওয়া এবং বাসিন্দাদের মতামত জানার চেষ্টা না করেই কাস্মীরের রাজা কাস্মীর ভারতের অংশীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত জানালে কংগ্রেস শাসিত তৎকালীন ভারত সরকার কাস্মীরকে ভারতের অংশীভূত করে নিলে জটিলতা আরও বৃদ্ধি পায়।

পাকিস্তান দাবী করে বসে, যেহেতু কাস্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী মুসলিম সম্প্রদায়ভূক্ত তাই কাস্মীর হবে পাকিস্তানের অংশীভূত। ভারত সরকার পাকিস্তানের এই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিলে সংকট আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

বছরের পর বছর ধরে ভারত ও পাকিস্তান এই দুটি প্রতিবেশী সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক তর্ক-বিতর্ক শেষ পর্য্যন্ত দুই দেশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা করে। আর এই আত্মঘাতি যুদ্ধের পরিণতিতে একদিকে যেমন উভয়পক্ষের হাজার সৈন্য ও নিরপরাধ সিভিলিয়ান পপুলেশন মৃত্যুবরণ করতে থাকে-তেমনি উভয় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও তিক্ততাও বাড়তে থাকে।

পরিণতিতে যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়ায় দুটি দেশের নানা অঞ্চলে সংঘটিত হতে থাকে রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সংঘাত। কাস্মীরের নিরীহ নিরপরাধ অধিবাসীরা এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অসহায় শিকারে পরিণত হন তাঁদেরকেও দফায় দফায় অগণিত প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়।

এই দ্বন্দ্ব সংঘাত ও অসহায় মৃত্যু থামাতে কাস্মীরীরা স্বাধীন কাস্মীরের দাবী উত্থাপন করেন। ইতিমধ্যে পাকিস্তান বিষয়টিকে জাতিসংঘে নিয়ে যায় কিন্তু ভারত বিষয়টি “মীমাংসিত” ও কাস্মীর ভারতের অবিভাজ্য অংশ বলে দাবী করে বহুবার জাতিসংঘের অধিবেশনে পাকিস্তানের তোলা প্রস্তাবের অংশগ্রহণ করতে অসম্মতি প্রকাশ করে।

ফলে আজ পর্য্যন্ত সেখানেও বিষয়টি অমীমাংসিত রয়েছে। তবে তাদের গৃহীত বহু বছর আগের এক প্রস্তাবে সমস্যাটির শান্তিপূর্ণ সমাধান ও কাস্মীর “গণভোট” অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান হয়।

বলা হয় গণভোটের মাধ্যমেই সমস্যাটির সমাধান করা কাস্মীরের পাকিস্তান ভূক্তির দাবী অক্ষুন্নরেখেও জাতিসংঘের প্রস্তাবটির অনুকূলে পাকিস্তান তার অভিমত প্রকাশ করে। যুদ্ধ বিগ্রহের পরিণতি স্বরূপ পাকিস্তান এক পর্য্যায়ে কাস্মীরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে নেয়-আজও সেই অংশ পাকিস্তানের দখলেই রয়েছে।

কাস্মীরের সীমান্তজুড়ে বছরের পর বছর, দশকের পর দশক ধরে উভয় দেশের বিপুল সংখ্যক সৈন্য মোতায়ন রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আজও উত্তেজনাকর হিসেবে থাকায় উভয় অংশের কাস্মীরীদের জীবন সিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে।

মাঝে মধ্যে উভয় সেনা-বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি বর্ষণ এবং তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থারও তৈরী হয়। কিন্তু ভারতের অংশীভূত কাস্মীর ভারতের এবং পাকিস্তানের অংশীভূত কাস্মীর আজও রয়েগেছে।

প্রধানমন্ত্রী প-িত জওয়াহের লাল নেহেরু ভারতের অংশীভূত কাস্মীরের বিশেষ মর্য্যাদার স্বীকৃতি দিয় তাঁদের সংবিধান সংশোধন করে তাতে ৩৭০ নং অনুচ্ছেদ সংযুক্ত করেন। ভারতের অংশীভূত কাস্মীরবাসীরা এতে সন্তুষ্ট হয়ে স্বাগত জানান।

পৃথক রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মত কাস্মীরও নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো এবং ঐ নির্বাচনগুলির মাধ্যমে কাস্মীরীরা নিজেদের পচন্দমত সরকার গঠন করে আসছিলেন।

দীর্ঘকাল পর ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অকস্মাৎ ঐ ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণা করে সেখানকার নির্বাচিত সরকার উচ্ছেদ করে কেন্দ্রী শাসন জারী করেন। প্রচ- বিক্ষোভে ফেটে পড়েন কাস্মীরবাসীরা। নেমে এলো অস্বাভাবিক নির্য্যাতন কাস্মীর বাসীদের উপর।

অঘোষিত সামরিক শাসন চালু করা হলো। বরখাস্তকৃত মন্ত্রীসভার মুখ্যমন্ত্রীসহ বহু এম.পি. সংসদ সদস্য ও অপরাপর বিক্ষোভকারীদেরকে অনির্ধিষ্টকালের জন্য কারারুদ্ধ করা হলো। কাস্মীরের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ শুধু নয়, সমগ্র কাস্মীরে ইন্টারনেট বন্ধ স্বাধীনচেতা সাংবাদিকদের গ্রেফতার প্রভৃতি কারণে অনেক সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেল।

কেউ কারও সাথে যাতে যোগাযোগ না করতে পারে, সেই লক্ষ্যে টেলিফোনের আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলো। কায়েম হলো এক ত্রাসের রাজত্ব। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ পরিচালিত ভারত সরকার পূরোপূরি ব্যর্থ হলেন।

২০১৯ সালের ৫ আগষ্ট ৩৭০ অনুচ্ছে বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে সমগ্র কাস্মীরগামী ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ আন্দোলন অবহিত রাখেন। বিক্ষোভ বিদ্রোহে উত্তাল হয়ে ওঠে কাস্মীর উপত্যকা। কবি সুকান্তের ভাষায় “এত বিদ্রোহ কখনো দেখে নি কেউ দিকে দিকে শুধু অবাধ্যতার ঢেউ” ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, স্বৈরশাসন নয়-জনমতের সঠিক, সুস্পষ্ট ও নিরপেক্ষ প্রতিফলই পারে মানুষের ন্যায্য আন্দোলন থামাতে।

দীর্ঘ দুই বছর পরে হলেও, মনে হয়, কাস্মীরবাসীরা সাফল্যের দিকেই এগুচ্ছেন। সংবাদ মাধ্যমগুলিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায় গত বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন নরেন্দ্র মোদী কাস্মীরের সর্বদলীয় নেতৃত্বের সাথে প্রথমবারের মত বৈঠকে বসেন।

৩৭০ ধারা বিক্ষোপের মাধ্যমে জম্মু ও কাস্মীরকে দুটি পৃথক রাজ্যে পরিণত করার পর এটিই ছিল দিল্লীর নরেন্দ্র মোদি সরকারের সাথে কাস্মীরী দলগুলির নেতৃবৃন্দের প্রথম বৈঠক। এতে যোগ দেন আটটি দলের ১৪ জন শীর্ষস্থানীয় নেতা।

বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কাস্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহাও। সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, জম্মু ও কাস্মীরকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল থেকে আবার রাজ্যের মর্য্যাদা নেওয়া হবে।

তবে সেটা করা হবে উপযুক্ত সময়ে। সেই উপযুক্ত সময়ের কোন ব্যাখ্যা অবশ্য তিনি দেন নি। মোদি জানান, কাস্মীরের সঙ্গে দিন বা মনের দূরত্ব এবং দিল্লীর দূরত্ব ঘোচাতে হবে। তিনি কাস্মীরে নির্বাচনের কথাও বলেন।

অমিত শাহ্ধসঢ়; বলেন, তিনি সংসদেই জানিয়েছিলেন, জম্মু ও কাস্মীরকে রাজ্যের মর্য্যাদা দেওয়া হবে। তার জন্যে ডিলিমিটেশন দরকার নির্বাচনী এলাকাগুলির।

কাস্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্রাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ ডিলিমিটেশন প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, ডিলিমিটেশন কেন শুধু কাস্মীরেই হবে? তিনি জানিয়েছেন, উপস্থিত কাস্মীরী নেতারা বলেছেন জম্মুও কাস্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্য্যাদা দিতে হবে।

দিল্লীর মত কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল রেখে বিধান সভা নির্বাচন করালে হবে না। আর প্রশাসনের কাস্মীরী ক্যাডার আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। ওমর আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, কোন দলই দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকারের ডিলিমিটেশন প্রস্তাবে খুশী নয়।

অন্যান্য রাজ্যে ডিলিমিটেশন হবে ২০২৬ সালে। তবে কাস্মীরে এখন কেন? আগে কেন্দ্রীয় সরকার ও কাস্মীরের মধ্যে আস্থা ফেরানো দরকার। কাস্মীরী নেতাদের দাবী মেনে বৈঠকেঠিক হয়েছে, রাজবন্দীদের মুক্তি দেওয়ার দাবী খতিয়ে দেখতে একটা কমিটি গঠন করবেন মনোজ সিনহা।

কমিটি বন্দীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বৈঠকে যাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাঁদের মধ্যে ছিলেন সাবেক চার মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ, ওমর আবদুল্লাহ, মেহবুবা মুফতি এবং শুলাম নবী আজাদ।

এখানে স্মর্তব্য, ২০১৯ এর ৫ আগষ্ট ৩৭০ ধারা বাতিলের এক সপ্তাহ আগে থেকেই সেনা নামানো হয়েছিল, ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। আজও কাস্মীর নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা আছে বলে নেতৃবৃন্দ জানান।

কংগ্রেস নেতা শুলাম নবী আজাদ পাঁচটি দাবী জোরের সাথে উত্থাপন করেছেন। দাবীগুলি হলো পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্য্যাদা ফেরত দেওয়া, বিধানসভার ভোট গ্রহণ, পুরোগে অবিবাদন নীতির পুনর্বহাল, সমস্ত রাজবন্দীর মুক্তিদান প্রবৃতি।

আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল দেশ হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে খ্যাতি পেয়েছে বাংলাদেশ

কাস্মীর সংকট ও পাক-ভারত-দ্বন্দ্ব নিরসন

প্রকাশিত সময় ১০:৪৬:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ জুলাই ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আমাদের উপমহাদেমের সর্বাপেক্ষা বড় ও দীর্ঘ স্থায়ী সংকট কাস্মীর সমস্যা। অতীতে ভুস্বর্গ বলে পরিচিত, ভারতের (অবিভক্ত) সর্বাধিক আকর্ষণীয় পর্য্যটন এলাকা, পৃথিবী খ্যাত কাস্মীরী খাল এবং উল এই কাস্মীর সংকটের অসহায় শিকার।

হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা, তার ফলে দফায় দফায় সংঘটিত ভয়াবহ দাঙ্গার পটভূমিতে সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের আগষ্টে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়-রাজনৈতিক-প্রশাসনিক অঙ্গন থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয় বৃটিশ সা¤্রাজ্যবাদ দীর্ঘ দু’শ বছর ব্যাপী ভারত শাসন ও শোষণের পর ।

কিন্তু ধূর্ত বৃটিশ শাসকের ভারত পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতের স্থায়ীরূপ দেওয়ার লক্ষে ভারতের কতিপয় অঞ্চল সংক্রান্ত বিষয়কে জটিলতর করে রেখে চলে যায়। অর্থাৎ ভারতের কয়েকটি অঞ্চল ভারত অথবা পাকিস্তান কোন দেশের সঙ্গে যুক্ত হবে সে বিষয়টি অমীমাংসিত রেখে চলে যায়।

অত:পর কাস্মীরের জনসংখ্যার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মুসলিম হওয়া এবং বাসিন্দাদের মতামত জানার চেষ্টা না করেই কাস্মীরের রাজা কাস্মীর ভারতের অংশীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত জানালে কংগ্রেস শাসিত তৎকালীন ভারত সরকার কাস্মীরকে ভারতের অংশীভূত করে নিলে জটিলতা আরও বৃদ্ধি পায়।

পাকিস্তান দাবী করে বসে, যেহেতু কাস্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী মুসলিম সম্প্রদায়ভূক্ত তাই কাস্মীর হবে পাকিস্তানের অংশীভূত। ভারত সরকার পাকিস্তানের এই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিলে সংকট আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

বছরের পর বছর ধরে ভারত ও পাকিস্তান এই দুটি প্রতিবেশী সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক তর্ক-বিতর্ক শেষ পর্য্যন্ত দুই দেশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা করে। আর এই আত্মঘাতি যুদ্ধের পরিণতিতে একদিকে যেমন উভয়পক্ষের হাজার সৈন্য ও নিরপরাধ সিভিলিয়ান পপুলেশন মৃত্যুবরণ করতে থাকে-তেমনি উভয় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও তিক্ততাও বাড়তে থাকে।

পরিণতিতে যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়ায় দুটি দেশের নানা অঞ্চলে সংঘটিত হতে থাকে রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সংঘাত। কাস্মীরের নিরীহ নিরপরাধ অধিবাসীরা এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অসহায় শিকারে পরিণত হন তাঁদেরকেও দফায় দফায় অগণিত প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়।

এই দ্বন্দ্ব সংঘাত ও অসহায় মৃত্যু থামাতে কাস্মীরীরা স্বাধীন কাস্মীরের দাবী উত্থাপন করেন। ইতিমধ্যে পাকিস্তান বিষয়টিকে জাতিসংঘে নিয়ে যায় কিন্তু ভারত বিষয়টি “মীমাংসিত” ও কাস্মীর ভারতের অবিভাজ্য অংশ বলে দাবী করে বহুবার জাতিসংঘের অধিবেশনে পাকিস্তানের তোলা প্রস্তাবের অংশগ্রহণ করতে অসম্মতি প্রকাশ করে।

ফলে আজ পর্য্যন্ত সেখানেও বিষয়টি অমীমাংসিত রয়েছে। তবে তাদের গৃহীত বহু বছর আগের এক প্রস্তাবে সমস্যাটির শান্তিপূর্ণ সমাধান ও কাস্মীর “গণভোট” অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান হয়।

বলা হয় গণভোটের মাধ্যমেই সমস্যাটির সমাধান করা কাস্মীরের পাকিস্তান ভূক্তির দাবী অক্ষুন্নরেখেও জাতিসংঘের প্রস্তাবটির অনুকূলে পাকিস্তান তার অভিমত প্রকাশ করে। যুদ্ধ বিগ্রহের পরিণতি স্বরূপ পাকিস্তান এক পর্য্যায়ে কাস্মীরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে নেয়-আজও সেই অংশ পাকিস্তানের দখলেই রয়েছে।

কাস্মীরের সীমান্তজুড়ে বছরের পর বছর, দশকের পর দশক ধরে উভয় দেশের বিপুল সংখ্যক সৈন্য মোতায়ন রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আজও উত্তেজনাকর হিসেবে থাকায় উভয় অংশের কাস্মীরীদের জীবন সিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে।

মাঝে মধ্যে উভয় সেনা-বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি বর্ষণ এবং তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থারও তৈরী হয়। কিন্তু ভারতের অংশীভূত কাস্মীর ভারতের এবং পাকিস্তানের অংশীভূত কাস্মীর আজও রয়েগেছে।

প্রধানমন্ত্রী প-িত জওয়াহের লাল নেহেরু ভারতের অংশীভূত কাস্মীরের বিশেষ মর্য্যাদার স্বীকৃতি দিয় তাঁদের সংবিধান সংশোধন করে তাতে ৩৭০ নং অনুচ্ছেদ সংযুক্ত করেন। ভারতের অংশীভূত কাস্মীরবাসীরা এতে সন্তুষ্ট হয়ে স্বাগত জানান।

পৃথক রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মত কাস্মীরও নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো এবং ঐ নির্বাচনগুলির মাধ্যমে কাস্মীরীরা নিজেদের পচন্দমত সরকার গঠন করে আসছিলেন।

দীর্ঘকাল পর ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অকস্মাৎ ঐ ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণা করে সেখানকার নির্বাচিত সরকার উচ্ছেদ করে কেন্দ্রী শাসন জারী করেন। প্রচ- বিক্ষোভে ফেটে পড়েন কাস্মীরবাসীরা। নেমে এলো অস্বাভাবিক নির্য্যাতন কাস্মীর বাসীদের উপর।

অঘোষিত সামরিক শাসন চালু করা হলো। বরখাস্তকৃত মন্ত্রীসভার মুখ্যমন্ত্রীসহ বহু এম.পি. সংসদ সদস্য ও অপরাপর বিক্ষোভকারীদেরকে অনির্ধিষ্টকালের জন্য কারারুদ্ধ করা হলো। কাস্মীরের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ শুধু নয়, সমগ্র কাস্মীরে ইন্টারনেট বন্ধ স্বাধীনচেতা সাংবাদিকদের গ্রেফতার প্রভৃতি কারণে অনেক সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেল।

কেউ কারও সাথে যাতে যোগাযোগ না করতে পারে, সেই লক্ষ্যে টেলিফোনের আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলো। কায়েম হলো এক ত্রাসের রাজত্ব। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ পরিচালিত ভারত সরকার পূরোপূরি ব্যর্থ হলেন।

২০১৯ সালের ৫ আগষ্ট ৩৭০ অনুচ্ছে বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে সমগ্র কাস্মীরগামী ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ আন্দোলন অবহিত রাখেন। বিক্ষোভ বিদ্রোহে উত্তাল হয়ে ওঠে কাস্মীর উপত্যকা। কবি সুকান্তের ভাষায় “এত বিদ্রোহ কখনো দেখে নি কেউ দিকে দিকে শুধু অবাধ্যতার ঢেউ” ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, স্বৈরশাসন নয়-জনমতের সঠিক, সুস্পষ্ট ও নিরপেক্ষ প্রতিফলই পারে মানুষের ন্যায্য আন্দোলন থামাতে।

দীর্ঘ দুই বছর পরে হলেও, মনে হয়, কাস্মীরবাসীরা সাফল্যের দিকেই এগুচ্ছেন। সংবাদ মাধ্যমগুলিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায় গত বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন নরেন্দ্র মোদী কাস্মীরের সর্বদলীয় নেতৃত্বের সাথে প্রথমবারের মত বৈঠকে বসেন।

৩৭০ ধারা বিক্ষোপের মাধ্যমে জম্মু ও কাস্মীরকে দুটি পৃথক রাজ্যে পরিণত করার পর এটিই ছিল দিল্লীর নরেন্দ্র মোদি সরকারের সাথে কাস্মীরী দলগুলির নেতৃবৃন্দের প্রথম বৈঠক। এতে যোগ দেন আটটি দলের ১৪ জন শীর্ষস্থানীয় নেতা।

বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কাস্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহাও। সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, জম্মু ও কাস্মীরকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল থেকে আবার রাজ্যের মর্য্যাদা নেওয়া হবে।

তবে সেটা করা হবে উপযুক্ত সময়ে। সেই উপযুক্ত সময়ের কোন ব্যাখ্যা অবশ্য তিনি দেন নি। মোদি জানান, কাস্মীরের সঙ্গে দিন বা মনের দূরত্ব এবং দিল্লীর দূরত্ব ঘোচাতে হবে। তিনি কাস্মীরে নির্বাচনের কথাও বলেন।

অমিত শাহ্ধসঢ়; বলেন, তিনি সংসদেই জানিয়েছিলেন, জম্মু ও কাস্মীরকে রাজ্যের মর্য্যাদা দেওয়া হবে। তার জন্যে ডিলিমিটেশন দরকার নির্বাচনী এলাকাগুলির।

কাস্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্রাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ ডিলিমিটেশন প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, ডিলিমিটেশন কেন শুধু কাস্মীরেই হবে? তিনি জানিয়েছেন, উপস্থিত কাস্মীরী নেতারা বলেছেন জম্মুও কাস্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্য্যাদা দিতে হবে।

দিল্লীর মত কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল রেখে বিধান সভা নির্বাচন করালে হবে না। আর প্রশাসনের কাস্মীরী ক্যাডার আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। ওমর আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, কোন দলই দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকারের ডিলিমিটেশন প্রস্তাবে খুশী নয়।

অন্যান্য রাজ্যে ডিলিমিটেশন হবে ২০২৬ সালে। তবে কাস্মীরে এখন কেন? আগে কেন্দ্রীয় সরকার ও কাস্মীরের মধ্যে আস্থা ফেরানো দরকার। কাস্মীরী নেতাদের দাবী মেনে বৈঠকেঠিক হয়েছে, রাজবন্দীদের মুক্তি দেওয়ার দাবী খতিয়ে দেখতে একটা কমিটি গঠন করবেন মনোজ সিনহা।

কমিটি বন্দীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বৈঠকে যাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাঁদের মধ্যে ছিলেন সাবেক চার মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ, ওমর আবদুল্লাহ, মেহবুবা মুফতি এবং শুলাম নবী আজাদ।

এখানে স্মর্তব্য, ২০১৯ এর ৫ আগষ্ট ৩৭০ ধারা বাতিলের এক সপ্তাহ আগে থেকেই সেনা নামানো হয়েছিল, ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। আজও কাস্মীর নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা আছে বলে নেতৃবৃন্দ জানান।

কংগ্রেস নেতা শুলাম নবী আজাদ পাঁচটি দাবী জোরের সাথে উত্থাপন করেছেন। দাবীগুলি হলো পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্য্যাদা ফেরত দেওয়া, বিধানসভার ভোট গ্রহণ, পুরোগে অবিবাদন নীতির পুনর্বহাল, সমস্ত রাজবন্দীর মুক্তিদান প্রবৃতি।

আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল দেশ হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে খ্যাতি পেয়েছে বাংলাদেশ