ঢাকা ১০:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে এমপির নির্দেশেও বন্ধ হচ্ছে না পুকুর খনন

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ১১:৩৪:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২০
  • / 84

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে এমপির নির্দেশেও বন্ধ হচ্ছে না পুকুর খনন। প্রশাসনের নিরবতার কারণে ২৪ ঘন্টায় চলছে পুকুর কাটার মহোৎসব। এমন অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। অবশ্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ অভিযোগ অস্বীকার করে জনবল সংকট কে দায়ী করেছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের এমন দ্বিচারিতায় একদিকে কমছে ফসলী জমি, অন্যদিকে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। খাল, নদী দখল করে পুকুরের পাড় করায় পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে এ বছর এ উপজেলায় সরিষার আবাদ নেমে এসেছে প্রায় শূণ্যের কোঠায়। সরিষার আবাদ না হওয়ায় কোটি টাকার মধু আহরণও সম্ভব হয়নি। অথচ গত বছর এ উপজেলায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানাচ্ছে, বাড়তি ফসল হিসেবে ৭ হাজার ৭ শত মেট্রিক টন সরিষা পেয়েছিল কৃষক। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ধানের দাম কম হওয়ায়, উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে পুকুর খনেরর দিকে ঝুঁকে পরে কৃষক। নিচু জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ায় গণহারে চলতে থাকে পুকুর খননের প্রতিযোগিতা। সরকারি অনুমতি ছাড়া পুকুর খনন বেআইনি হলেও স্থানীয় প্রশাসন কে ম্যানেজ করে প্রতি বছর শত শত পুকুর খনন অব্যাহত রয়েছে।

কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, গত ১ দশকে এ উপজেলায় পুকুর খননের ফলে প্রায় ৫শ হেক্টর কৃষি জমি কমেছে। যা বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ২০১৩ ইং সাল থেকে ২০১৮ ইং সাল পর্যন্ত তাড়াশ উপজেলায় ৫১৫টি পুকুর খনন করা হয়। এ পুকুর খননের ফলে ৩১৫ হেক্টর আবাদী জমি কমে যায়। চলতি বছরেও এ উপজেলায় ৩ শতাধিক পুকুর খনন চলমান থাকলেও প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার।

সূত্রমতে, উপজেলার পুকুর খননকারী চক্রের মূলহোতা হামকুড়িয়া গ্রামের আলাউদ্দিন, খালখুলার জাহিদ, ভায়াট গ্রামের শাহাদত, কাউরাইলের জাহাঙ্গীর, আব্দুস সাত্তার, আড়ঙ্গাইল গ্রামের জান মাহমুদ, শোলাপাড়া গ্রামের মুরশিদ ও আসাদ, সলঙ্গার নান্নু, তাড়াশ পৌর এলাকার আমিন ও আব্দুল জলিল প্রতিটা পুকুর খননের জন্য জমির মালিকদের কাছ থেকে প্রতি বিঘা জমি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেন। তারাই সাধারণত: প্রশাসন, পুলিশ ও সাংবাদিকদের সাথে অর্থের বিনিময়ে চুক্তি করে পুকুর খনন করে।

সম্প্রতি উপজেলার চকজয়কৃষ্ণপুর গ্রামের অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মো: আজিজল হক ক্ষোভের সাথে বলেন, এরা আমার কাছে টাকা দাবি করেছিল, না দেওয়ায় আমার ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অথচ প্রতিদিন কি করে অসংখ্য পুকুর প্রকাশ্যে খনন করছে, তা উপজেলা প্রশাসনই বলতে পারবে। জানতে চাওয়া হলে তাড়াশ থানার ওসি মো: মাহবুবুল আলম বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো: ওবায়দুল্লাহ বলেন, আমি একাই তিনটি পদের দায়িত্ব পালন করার কারণে অনেক সময় সকল বিষয় দেখা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া আমার জনবলের সংকটও রয়েছে। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বেপরোয়া হারে পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি খনন কাজ বন্ধও করে দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ বলেন, চলনবিল অঞ্চলে পুকুর খননের আলাদা নীতিমালা জরুরি। নিচু জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষক পুকুর খনন করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রশাসন বাধা দিয়েও বিশেষ কিছু করতে পারছে না। সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল আজিজ বলেন, ইতিপূর্বে পুকুর খনন বন্ধে তিনটি সমন্বয় মিটিংয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে এমপির নির্দেশেও বন্ধ হচ্ছে না পুকুর খনন

প্রকাশিত সময় ১১:৩৪:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২০

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে এমপির নির্দেশেও বন্ধ হচ্ছে না পুকুর খনন। প্রশাসনের নিরবতার কারণে ২৪ ঘন্টায় চলছে পুকুর কাটার মহোৎসব। এমন অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। অবশ্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ অভিযোগ অস্বীকার করে জনবল সংকট কে দায়ী করেছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের এমন দ্বিচারিতায় একদিকে কমছে ফসলী জমি, অন্যদিকে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। খাল, নদী দখল করে পুকুরের পাড় করায় পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে এ বছর এ উপজেলায় সরিষার আবাদ নেমে এসেছে প্রায় শূণ্যের কোঠায়। সরিষার আবাদ না হওয়ায় কোটি টাকার মধু আহরণও সম্ভব হয়নি। অথচ গত বছর এ উপজেলায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানাচ্ছে, বাড়তি ফসল হিসেবে ৭ হাজার ৭ শত মেট্রিক টন সরিষা পেয়েছিল কৃষক। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ধানের দাম কম হওয়ায়, উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে পুকুর খনেরর দিকে ঝুঁকে পরে কৃষক। নিচু জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ায় গণহারে চলতে থাকে পুকুর খননের প্রতিযোগিতা। সরকারি অনুমতি ছাড়া পুকুর খনন বেআইনি হলেও স্থানীয় প্রশাসন কে ম্যানেজ করে প্রতি বছর শত শত পুকুর খনন অব্যাহত রয়েছে।

কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, গত ১ দশকে এ উপজেলায় পুকুর খননের ফলে প্রায় ৫শ হেক্টর কৃষি জমি কমেছে। যা বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ২০১৩ ইং সাল থেকে ২০১৮ ইং সাল পর্যন্ত তাড়াশ উপজেলায় ৫১৫টি পুকুর খনন করা হয়। এ পুকুর খননের ফলে ৩১৫ হেক্টর আবাদী জমি কমে যায়। চলতি বছরেও এ উপজেলায় ৩ শতাধিক পুকুর খনন চলমান থাকলেও প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার।

সূত্রমতে, উপজেলার পুকুর খননকারী চক্রের মূলহোতা হামকুড়িয়া গ্রামের আলাউদ্দিন, খালখুলার জাহিদ, ভায়াট গ্রামের শাহাদত, কাউরাইলের জাহাঙ্গীর, আব্দুস সাত্তার, আড়ঙ্গাইল গ্রামের জান মাহমুদ, শোলাপাড়া গ্রামের মুরশিদ ও আসাদ, সলঙ্গার নান্নু, তাড়াশ পৌর এলাকার আমিন ও আব্দুল জলিল প্রতিটা পুকুর খননের জন্য জমির মালিকদের কাছ থেকে প্রতি বিঘা জমি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেন। তারাই সাধারণত: প্রশাসন, পুলিশ ও সাংবাদিকদের সাথে অর্থের বিনিময়ে চুক্তি করে পুকুর খনন করে।

সম্প্রতি উপজেলার চকজয়কৃষ্ণপুর গ্রামের অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মো: আজিজল হক ক্ষোভের সাথে বলেন, এরা আমার কাছে টাকা দাবি করেছিল, না দেওয়ায় আমার ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অথচ প্রতিদিন কি করে অসংখ্য পুকুর প্রকাশ্যে খনন করছে, তা উপজেলা প্রশাসনই বলতে পারবে। জানতে চাওয়া হলে তাড়াশ থানার ওসি মো: মাহবুবুল আলম বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো: ওবায়দুল্লাহ বলেন, আমি একাই তিনটি পদের দায়িত্ব পালন করার কারণে অনেক সময় সকল বিষয় দেখা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া আমার জনবলের সংকটও রয়েছে। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বেপরোয়া হারে পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি খনন কাজ বন্ধও করে দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ বলেন, চলনবিল অঞ্চলে পুকুর খননের আলাদা নীতিমালা জরুরি। নিচু জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষক পুকুর খনন করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রশাসন বাধা দিয়েও বিশেষ কিছু করতে পারছে না। সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল আজিজ বলেন, ইতিপূর্বে পুকুর খনন বন্ধে তিনটি সমন্বয় মিটিংয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।