ঢাকা ০৮:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বন্যায় মানুষের দুর্বিসহ জীবন যাপন

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০১:১৮:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
  • / 93

মহসীন আলী, তাড়াশঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বন্যায় জনগন ভয়াবহ অবস্থায় দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। ভারী বর্ষন ও উজান থেকে ঢলের পানি নেমে আসায় বৃহত্তর চলনবিলসহ তাড়াশে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে।

বন্যার কারণে শতশত ঘরবাড়ি, আশ্রয় কেন্দ্র ও গুচ্ছগ্রাম, ২ হাজার হেক্টর রোপা আমন ধান, বীজতলা, প্রায় ২ শতাধিক পুকুর বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।

মৎস্য চাষীরা নেট জালের ঘের দিয়ে পুকুরে মাছ ভেসে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পরেছে খামারী। দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে পুকুর ঘেরার নেট জাল। পানি বাহিত রোগ দেখা দিয়েছে।

তবে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ আশ্রয়ের জন্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (ফ্লাড সেন্টার) খুলে দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্যামপুর ও আমবাড়িয়া গ্রামের অনেক গুলো পরিবার পানি বন্দি হয়ে পরেছে। ঐ গ্রামের সাইফুল, সাইদার, খাইরুল, আসমানী, মিনা খাতুন, আব্দুল জলির সরদারের ঘরবাড়ী এখন পানির মধ্যে। তারা অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে আছে। এছাড়াও উপজেলার সগুনা, বারুহাস, নওগাঁ ও তাড়াশ সদর ইউনিয়নের গ্রাম গুলো বন্যার পানিতে হাবুডাবু খাচ্ছে।

সব চেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে মৎস্য চাষীরা। বন্যার পানির হাত থেকে পুকুরের মাছ রক্ষা করার জন্য নেট জাল দিয়ে পুকুর ঘের দিয়েছে তবুও রক্ষা করতে পারবে কিনা সন্দেহে ভুগছেন মৎস্য চাষীরা।

এদিকে বন্যায় ঘরবাড়ী ডুবে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে অন্যের বাড়ীতে, রান্না, খাওয়া দাওয়ায় হচ্ছে সমস্যা। পায়খানা ব্যবহার করতে বিপদে পরছে পরিবারের সদস্যরা। একই বাড়ীতে করোনায় ভয় উপেক্ষা করেও বসবাস করছে।

বারুহাস, তাড়াশ সদর, মাধাইনগর ও দেশীগ্রাম ইউনিয়নের অধিকাংশ রোপা আমন ধান ও বীজ তলা পানির মধ্যে তলিয়ে গেছে। বিল অংশে হাবুডাবু খাচ্ছে বোনা আমন ধান।

মৎস্য চাষী শবনব বাবু, রইচ উদ্দিন, আব্দুল মোন্নাফ জানান, হঠাৎ করে বন্যার পানি পুকুরে প্রবেশ করায় মাছ ভেসে গেছে। নেট জাল ও বানা দিয়ে বেড়া দিয়েও রক্ষা করতে পারি নাই। অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে।

দক্ষিন শ্যামপুর গ্রামের জহুরুল ইসলামের স্ত্রী আসমানী খাতুন ও সাইদুলের স্ত্রী মিনা খাতুন বলেন, আমরা অন্যের বাড়ীতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। একই বাড়ীর মধ্যে ঠাসাঠাসি করে বাস করছি। রান্না, খাওয়া দাওয়া,গোসল ও পায়খানা ব্যবহার করতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক কষ্ট করে ১ বেলা করে খাই। চেয়ারম্যান মেম্বর কেউ আমাগো দেখতে আসে না। কেউ কিছু দেয় না।

এ বিষয়ে সগুনা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহেল বাকি বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রায় সব গুলি গ্রামই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সান্দুরিয়া, ধাপতেতুলিয়া, পতিরামপুর, ভেটুয়া, কাটাবাড়ী, লালুয়ামাঝিড়া গ্রাম বেশী প্লাবিত হয়েছে। আমি ত্রানের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট ১ হাজার জনের নামের তালিকা জমা দিয়েছি।

মাগুড়া বিনোদ ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমার ইউনিয়নের ১৩টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আমার কার্যালয় ইউপি ভবন এখন পানির মধ্যে অবস্থান করছে। ইতিমধ্যে আমি গ্রাম গুলিতে গিয়েছি। মানুষের দুর্বি দুদর্শা দেখেছি। তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নিকট যোগাযোগ করছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ বলেন, এখন পর্যন্ত ১১৮টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ সকল তথ্য মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফ্ফাত জাহান বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় (ফ্লাট সেন্টার) খুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে তারা আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। আমি সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছি বানভাসী মানুষদের জন্য। ইতো মধ্যে ৪ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ আসছে। তালিকা অনুযায়ী দেওয়া হবে।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বন্যায় মানুষের দুর্বিসহ জীবন যাপন

প্রকাশিত সময় ০১:১৮:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০

মহসীন আলী, তাড়াশঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বন্যায় জনগন ভয়াবহ অবস্থায় দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। ভারী বর্ষন ও উজান থেকে ঢলের পানি নেমে আসায় বৃহত্তর চলনবিলসহ তাড়াশে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে।

বন্যার কারণে শতশত ঘরবাড়ি, আশ্রয় কেন্দ্র ও গুচ্ছগ্রাম, ২ হাজার হেক্টর রোপা আমন ধান, বীজতলা, প্রায় ২ শতাধিক পুকুর বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।

মৎস্য চাষীরা নেট জালের ঘের দিয়ে পুকুরে মাছ ভেসে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পরেছে খামারী। দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে পুকুর ঘেরার নেট জাল। পানি বাহিত রোগ দেখা দিয়েছে।

তবে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ আশ্রয়ের জন্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (ফ্লাড সেন্টার) খুলে দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্যামপুর ও আমবাড়িয়া গ্রামের অনেক গুলো পরিবার পানি বন্দি হয়ে পরেছে। ঐ গ্রামের সাইফুল, সাইদার, খাইরুল, আসমানী, মিনা খাতুন, আব্দুল জলির সরদারের ঘরবাড়ী এখন পানির মধ্যে। তারা অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে আছে। এছাড়াও উপজেলার সগুনা, বারুহাস, নওগাঁ ও তাড়াশ সদর ইউনিয়নের গ্রাম গুলো বন্যার পানিতে হাবুডাবু খাচ্ছে।

সব চেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে মৎস্য চাষীরা। বন্যার পানির হাত থেকে পুকুরের মাছ রক্ষা করার জন্য নেট জাল দিয়ে পুকুর ঘের দিয়েছে তবুও রক্ষা করতে পারবে কিনা সন্দেহে ভুগছেন মৎস্য চাষীরা।

এদিকে বন্যায় ঘরবাড়ী ডুবে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে অন্যের বাড়ীতে, রান্না, খাওয়া দাওয়ায় হচ্ছে সমস্যা। পায়খানা ব্যবহার করতে বিপদে পরছে পরিবারের সদস্যরা। একই বাড়ীতে করোনায় ভয় উপেক্ষা করেও বসবাস করছে।

বারুহাস, তাড়াশ সদর, মাধাইনগর ও দেশীগ্রাম ইউনিয়নের অধিকাংশ রোপা আমন ধান ও বীজ তলা পানির মধ্যে তলিয়ে গেছে। বিল অংশে হাবুডাবু খাচ্ছে বোনা আমন ধান।

মৎস্য চাষী শবনব বাবু, রইচ উদ্দিন, আব্দুল মোন্নাফ জানান, হঠাৎ করে বন্যার পানি পুকুরে প্রবেশ করায় মাছ ভেসে গেছে। নেট জাল ও বানা দিয়ে বেড়া দিয়েও রক্ষা করতে পারি নাই। অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে।

দক্ষিন শ্যামপুর গ্রামের জহুরুল ইসলামের স্ত্রী আসমানী খাতুন ও সাইদুলের স্ত্রী মিনা খাতুন বলেন, আমরা অন্যের বাড়ীতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। একই বাড়ীর মধ্যে ঠাসাঠাসি করে বাস করছি। রান্না, খাওয়া দাওয়া,গোসল ও পায়খানা ব্যবহার করতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক কষ্ট করে ১ বেলা করে খাই। চেয়ারম্যান মেম্বর কেউ আমাগো দেখতে আসে না। কেউ কিছু দেয় না।

এ বিষয়ে সগুনা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহেল বাকি বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রায় সব গুলি গ্রামই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সান্দুরিয়া, ধাপতেতুলিয়া, পতিরামপুর, ভেটুয়া, কাটাবাড়ী, লালুয়ামাঝিড়া গ্রাম বেশী প্লাবিত হয়েছে। আমি ত্রানের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট ১ হাজার জনের নামের তালিকা জমা দিয়েছি।

মাগুড়া বিনোদ ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমার ইউনিয়নের ১৩টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আমার কার্যালয় ইউপি ভবন এখন পানির মধ্যে অবস্থান করছে। ইতিমধ্যে আমি গ্রাম গুলিতে গিয়েছি। মানুষের দুর্বি দুদর্শা দেখেছি। তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নিকট যোগাযোগ করছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ বলেন, এখন পর্যন্ত ১১৮টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ সকল তথ্য মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফ্ফাত জাহান বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় (ফ্লাট সেন্টার) খুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে তারা আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। আমি সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছি বানভাসী মানুষদের জন্য। ইতো মধ্যে ৪ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ আসছে। তালিকা অনুযায়ী দেওয়া হবে।