ঢাকা ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বালু মহালের বালু উত্তোলনে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৪:৫৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২০
  • / 134

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলাধীন পোতাজিয়া ইউনিয়নের রাউতাঁরা গ্রামের গোহালা নদীর বালু উত্তোলনে প্রায় ১০ একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণের দাবী করেছে।

গত ০৫/১০/২০২০ ইং তারিখে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পক্ষে ৫ জন কৃষক সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর ২ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবী করে এক আবেদনপত্র পেশ করেছে।

সরজমিনে ঘুরে জানা গেছে, গোহালা নদীর ‘রামকান্তপুর বালুমহাল, শাহজাদপুর’ নামের বালু মহালটি সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের এস এ শাখা হতে ১৪২৭ বাংলা সনের জন্য ইজারা প্রদান করে গত ২৩/০৬/২০২০ ইং তারিখে স্মারক নং- ৩১.৫০.৮৮০০.০১৮.৩২.০০১.১৯-৫৮১ মূলে ইজারাদার কে, এম, নাছির উদ্দিনকে জলমহাল বুঝিয়ে দেয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহজাদপুরকে নির্দেশ দেন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, সিরাজগঞ্জ। ওই নির্দেশে উল্লেখ করা হয়, ৬০.৫৯ একর ভূমির মধ্যে বালু উত্তোলনযোগ্য জমির পরিমাণ ১৫ একর।

ইজারাদার বর্ষা মৌসুমে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন শুরু করলে স্থানীয় কৃষকরা অনুমান করতে পারে যে, বালু মহালের বাইরেও রেকর্ডিয় সম্পত্তি থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এবং পানির নিচে ফসলী জমি ভেঙ্গে পরছে। তখন ৫০ জন কৃষক স্বাক্ষর করে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসক, সিরাজগঞ্জ বরাবর গত ২৮/০৬/২০২০ ইং তারিখে একটি আবেদন করেন। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক গত ১৫/০৭/২০২০ ইং তারিখে স্মারক নং- ৩১.৪৩.৮৮০০.০১৮.০১.০০৩.১৯.-৬৮৮ মূলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহজাদপুরকে নির্দেশ দেন।

তার প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার ও কাউনগো সকলেই সরজমিনে গিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেন। তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১. বর্ষা মৌসুমের জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সঠিক মাপ জরিপ সম্ভব হয়নি। শুকনো মৌসুমে মাপ জরিপ করে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। ২. আনুমানিকভাবে দেখা যায়, ইজারাদার নালিশী দাগগুলোর মধ্যে ৫৯২, ৫৯৩, ৫৯৪ ও ৫১১ নং দাগের আংশিক ভূমি হতে বালু উত্তোলন করেছেন।

কিন্তু, বিগত ২৫/০৬/২০২০ ইং তারিখে দখল বুঝে দেয়ার দখল নামায় উক্ত দাগ দেয়া হয়নি। উল্লেখ্য, ইজারাদারকে শুধু আর,এস ৫১৩ নং দাগের ২৩১০ ফুট গুণ ২৭৫ ফুট দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যান্য দাগে ইজারাদার প্রবেশ করেন নি। এতদসত্বেও অতিরিক্ত ৪টি দাগে বালু কাটার অভিযোগে ইজারাদারকে ব্যাখ্যা দিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে চিঠি দেয়া হলে, ইজারাদার কে,এম, নাছির উদ্দিন চিঠির জবাবে উল্লেখ করেন, ‘নালিশী দাগ ভূমি পানিতে নিমজ্জিত। এজন্য পানির মধ্যে বালু কর্তন করা ৪০-৫০ ফুট যা ব্যক্তি মালিকানা ভূমিতে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

তথাপি, যদি বাদী পক্ষের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়, তবে বাদী পক্ষের সাথে বসে দুই পক্ষ ও চরের এবং জমির মালিকদের স্বার্থে নিজ দায়িত্বে মিমাংসা করে নিবো।

এছাড়াও বাদী পক্ষ তাদের দুই পারে দুইজন প্রতিনিধি দিয়ে তাদের সীমানা চিহ্নিত করে দিলে আমার নিয়োজিত লোকজন সেখান থেকেই বালু উত্তোলন করবে এবং দুইজনকে দৈনিক ১ হাজার টাকা মজুরী প্রদান করবো।

অপরদিকে, ক্ষতিপূরণের আবেদনের পর গত ১৩ কার্তিক ১৪২৭ বাংলা এবং ২৯/১০/২০২০ ইং তারিখে স্মারক নং- ৩১.৪৩.৮৮০০.০১৮.৩২.০০৪.১৯-১১৪১ দ্বারা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহজাদপুরকে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, সিরাজগঞ্জ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছেন যা তদন্তাধীন আছে।

বর্তমানে গোহালা নদীর দুইপাড়ই জেগে উঠেছে। অতিসত্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সমস্যাটির দ্রুত সমাধান হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। অন্যদিকে, ভাঙ্গণের কারণে কৃষকদের বোরো চাষ করা হচ্ছে না, ভাঙ্গণের কারণে বর্তমানে মাশকালাইসহ ফসলী জমি ভেঙ্গে পড়ছে, ভবিষ্যতে ইরির আবাদ করা সম্ভব হবে না, ইতোমধ্যেই ভাঙ্গণে নদীর উত্তর পাড়ের ইরিগেশনের পানির ট্যাংক এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে নদী গর্ভে পড়ে গেছে, নদীর উঁচু পাড়ের কারণে বাথানের গরুগুলোকে পানি খাওয়ানো ও গোসল করানো সম্ভব হচ্ছে না, যাতে করে দুগ্ধ সম্পদের দিকেও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ইত্যাদি কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা তাদের ক্ষতিপূরণের টাকার ন্যায্য হকদার বলে সরকার বাহাদুরের কাছে ক্ষতিপূরনের টাকা দাবী করেছেন। তাদের আরেকটি মানবতার উক্তি হলো, ‘সরকার বাহাদুর বালু মহালের ইজারা দিয়েছে এবং বর্ষা মৌসুমের কারণে ইজারাদার তাদের জমি কর্তন করেছে তা ঠিক, তবে সার্বিক বিবেচনায় আমরাও তো ঠিকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবং ক্ষতিপূরণের দাবী করছি।

আরও পড়ুনঃ পাবনার ঈশ্বরদীতে বালুমহলে অভিযান মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বালু মহালের বালু উত্তোলনে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশিত সময় ০৪:৫৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২০

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলাধীন পোতাজিয়া ইউনিয়নের রাউতাঁরা গ্রামের গোহালা নদীর বালু উত্তোলনে প্রায় ১০ একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণের দাবী করেছে।

গত ০৫/১০/২০২০ ইং তারিখে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পক্ষে ৫ জন কৃষক সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর ২ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবী করে এক আবেদনপত্র পেশ করেছে।

সরজমিনে ঘুরে জানা গেছে, গোহালা নদীর ‘রামকান্তপুর বালুমহাল, শাহজাদপুর’ নামের বালু মহালটি সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের এস এ শাখা হতে ১৪২৭ বাংলা সনের জন্য ইজারা প্রদান করে গত ২৩/০৬/২০২০ ইং তারিখে স্মারক নং- ৩১.৫০.৮৮০০.০১৮.৩২.০০১.১৯-৫৮১ মূলে ইজারাদার কে, এম, নাছির উদ্দিনকে জলমহাল বুঝিয়ে দেয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহজাদপুরকে নির্দেশ দেন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, সিরাজগঞ্জ। ওই নির্দেশে উল্লেখ করা হয়, ৬০.৫৯ একর ভূমির মধ্যে বালু উত্তোলনযোগ্য জমির পরিমাণ ১৫ একর।

ইজারাদার বর্ষা মৌসুমে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন শুরু করলে স্থানীয় কৃষকরা অনুমান করতে পারে যে, বালু মহালের বাইরেও রেকর্ডিয় সম্পত্তি থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এবং পানির নিচে ফসলী জমি ভেঙ্গে পরছে। তখন ৫০ জন কৃষক স্বাক্ষর করে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসক, সিরাজগঞ্জ বরাবর গত ২৮/০৬/২০২০ ইং তারিখে একটি আবেদন করেন। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক গত ১৫/০৭/২০২০ ইং তারিখে স্মারক নং- ৩১.৪৩.৮৮০০.০১৮.০১.০০৩.১৯.-৬৮৮ মূলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহজাদপুরকে নির্দেশ দেন।

তার প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার ও কাউনগো সকলেই সরজমিনে গিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেন। তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১. বর্ষা মৌসুমের জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সঠিক মাপ জরিপ সম্ভব হয়নি। শুকনো মৌসুমে মাপ জরিপ করে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। ২. আনুমানিকভাবে দেখা যায়, ইজারাদার নালিশী দাগগুলোর মধ্যে ৫৯২, ৫৯৩, ৫৯৪ ও ৫১১ নং দাগের আংশিক ভূমি হতে বালু উত্তোলন করেছেন।

কিন্তু, বিগত ২৫/০৬/২০২০ ইং তারিখে দখল বুঝে দেয়ার দখল নামায় উক্ত দাগ দেয়া হয়নি। উল্লেখ্য, ইজারাদারকে শুধু আর,এস ৫১৩ নং দাগের ২৩১০ ফুট গুণ ২৭৫ ফুট দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যান্য দাগে ইজারাদার প্রবেশ করেন নি। এতদসত্বেও অতিরিক্ত ৪টি দাগে বালু কাটার অভিযোগে ইজারাদারকে ব্যাখ্যা দিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে চিঠি দেয়া হলে, ইজারাদার কে,এম, নাছির উদ্দিন চিঠির জবাবে উল্লেখ করেন, ‘নালিশী দাগ ভূমি পানিতে নিমজ্জিত। এজন্য পানির মধ্যে বালু কর্তন করা ৪০-৫০ ফুট যা ব্যক্তি মালিকানা ভূমিতে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

তথাপি, যদি বাদী পক্ষের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়, তবে বাদী পক্ষের সাথে বসে দুই পক্ষ ও চরের এবং জমির মালিকদের স্বার্থে নিজ দায়িত্বে মিমাংসা করে নিবো।

এছাড়াও বাদী পক্ষ তাদের দুই পারে দুইজন প্রতিনিধি দিয়ে তাদের সীমানা চিহ্নিত করে দিলে আমার নিয়োজিত লোকজন সেখান থেকেই বালু উত্তোলন করবে এবং দুইজনকে দৈনিক ১ হাজার টাকা মজুরী প্রদান করবো।

অপরদিকে, ক্ষতিপূরণের আবেদনের পর গত ১৩ কার্তিক ১৪২৭ বাংলা এবং ২৯/১০/২০২০ ইং তারিখে স্মারক নং- ৩১.৪৩.৮৮০০.০১৮.৩২.০০৪.১৯-১১৪১ দ্বারা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহজাদপুরকে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, সিরাজগঞ্জ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছেন যা তদন্তাধীন আছে।

বর্তমানে গোহালা নদীর দুইপাড়ই জেগে উঠেছে। অতিসত্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সমস্যাটির দ্রুত সমাধান হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। অন্যদিকে, ভাঙ্গণের কারণে কৃষকদের বোরো চাষ করা হচ্ছে না, ভাঙ্গণের কারণে বর্তমানে মাশকালাইসহ ফসলী জমি ভেঙ্গে পড়ছে, ভবিষ্যতে ইরির আবাদ করা সম্ভব হবে না, ইতোমধ্যেই ভাঙ্গণে নদীর উত্তর পাড়ের ইরিগেশনের পানির ট্যাংক এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে নদী গর্ভে পড়ে গেছে, নদীর উঁচু পাড়ের কারণে বাথানের গরুগুলোকে পানি খাওয়ানো ও গোসল করানো সম্ভব হচ্ছে না, যাতে করে দুগ্ধ সম্পদের দিকেও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ইত্যাদি কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা তাদের ক্ষতিপূরণের টাকার ন্যায্য হকদার বলে সরকার বাহাদুরের কাছে ক্ষতিপূরনের টাকা দাবী করেছেন। তাদের আরেকটি মানবতার উক্তি হলো, ‘সরকার বাহাদুর বালু মহালের ইজারা দিয়েছে এবং বর্ষা মৌসুমের কারণে ইজারাদার তাদের জমি কর্তন করেছে তা ঠিক, তবে সার্বিক বিবেচনায় আমরাও তো ঠিকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবং ক্ষতিপূরণের দাবী করছি।

আরও পড়ুনঃ পাবনার ঈশ্বরদীতে বালুমহলে অভিযান মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে