ঢাকা ০৫:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সংঘাত বন্ধে শান্তি সমাবেশ

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ১১:২০:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২২
  • / 81
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সংঘাত বন্ধে শান্তি সমাবেশ করেছেন গ্রামবাসী

কুমারখালী,কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:২০ অপরাহ্ন, আগষ্ট ১৪, ২০২২


দুই বছর আগে জমির আইল নিয়ে সৃষ্টি হয় পক্ষ-বিপক্ষ। এরপর উভয় পক্ষ গ্রামে আধিপত্য নিয়ে বাড়তে থাকে বিরোধ। শুরু হয় হামলা-পাল্টা হামলা, বাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট, মামলা। একপর্যায়ে খুন, পাল্টা খুন।

হামলা ও মামলার ভয়ে গ্রাম ছেড়েছেন অনেকেই। দুই বছর ধরে এমন উত্তেজনা আর আতঙ্কে দিন কাটছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামে।

অবশেষে এসব বন্ধ করে গ্রামের সবাই মিলে আবার শক্তিতে বসবাসের জন্য গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘শান্তি সমাবেশ’ করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

তাঁরা আর মারামারি, খুনোখুনি, হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট করবেন না। অন্যান্য গ্রামবাসীর ন্যায় শান্তিতে মিলেমিশে বসবাস করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে তাঁদের গ্রামছাড়া করা হবে বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।

শান্তি সমাবেশে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার, পরিদর্শক (তদন্ত) আকিবুল ইসলাম, সদকী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিনহাজুল আবেদীন দ্বীপসহ উভয় পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ৩০ বছর আগে চরপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করেছিলেন তাঁরা। তখন কোনো পক্ষ-বিপক্ষ, আধিপত্য ছিল না।

বর্তমানে গ্রামটিতে শতাধিক পরিবার বাস করছে। সেখানে ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন শ। হঠাৎ ২০২০ সালে গ্রামের শাজাহান আলীর জমির আইল নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে গ্রামটিতে তৈরি হয় পক্ষ-বিপক্ষ। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন গ্রামের দুলাল মিস্ত্রি। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন সাবেক ইউপি সদস্য আনসার আলী।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জমি-সংক্রান্ত ওই বিরোধের জের ধরে ২০২০ সালের ৬ মে দুলাল মিস্ত্রির সমর্থক হুমায়ুন মন্ডলের প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন। তিনি রাতে নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই সাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩৬ জনের নামে একটি মামলা করেন।

সে সময় পাল্টা হামলা ও মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে আনসার আলীর সমর্থকেরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। এ সুযোগে প্রতিপক্ষরা ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে।

হুমায়ুন মন্ডলের হত্যার প্রতিশোধ নিতে গত ১ আগস্ট মামলার ৪ নম্বর আসামি মো. সেলিমকে সড়ক থেকে তুলে বাড়িতে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায়ও মামলা হয়। সেলিমের ভাই শাহীন আলী থানায় ২৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ঘটনা পর থেকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান দুই বছর আগে খুন হওয়া হুমায়ুন মন্ডলের পক্ষের লোকজন। এরপর আসামিদের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটেরও অভিযোগ ওঠে। গ্রামের প্রবেশপথসহ বিভিন্ন স্থানে পাহারা বসায় পুলিশ। সুনসান নীরব হয়ে যায় চরপাড়া গ্রাম।

গত বৃহস্পতিবার চরপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, থমথমে পরিবেশ। বাইরে মানুষের চলাচল নেই বললেই চলে। প্রায় প্রতিটি ঘরবাড়িতেই ভাঙচুরের আলামত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অধিকাংশ বাড়িতেই নেই কোনো মানুষ। কোনো কোনো বাড়িতে নারীরা থাকলেও পুরুষেরা পলাতক রয়েছে। শূন্য ঘরবাড়িতে নেই আসবাবপত্র, দরজা, জানালা। নেই গৃহপালিত পশুপাখিও।

শুধু ঘরবাড়ি ভাঙচুর আর হতাহতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বিরোধ। সর্বশেষ খুনের ঘটনায় আসামিপক্ষের লোকজন বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ায় তাঁদের খেতে নষ্ট হয় পাটসহ নানা সবজি।

এখন উভয় পক্ষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শান্তিতে বসবাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পুলিশ তাঁদের সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনে সহযোগিতা করবে।

 


 আরও পড়ুনঃ

 আরও পড়ুনঃ


কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সংঘাত বন্ধে শান্তি সমাবেশ

প্রকাশিত সময় ১১:২০:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২২
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সংঘাত বন্ধে শান্তি সমাবেশ করেছেন গ্রামবাসী

কুমারখালী,কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:২০ অপরাহ্ন, আগষ্ট ১৪, ২০২২


দুই বছর আগে জমির আইল নিয়ে সৃষ্টি হয় পক্ষ-বিপক্ষ। এরপর উভয় পক্ষ গ্রামে আধিপত্য নিয়ে বাড়তে থাকে বিরোধ। শুরু হয় হামলা-পাল্টা হামলা, বাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট, মামলা। একপর্যায়ে খুন, পাল্টা খুন।

হামলা ও মামলার ভয়ে গ্রাম ছেড়েছেন অনেকেই। দুই বছর ধরে এমন উত্তেজনা আর আতঙ্কে দিন কাটছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামে।

অবশেষে এসব বন্ধ করে গ্রামের সবাই মিলে আবার শক্তিতে বসবাসের জন্য গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘শান্তি সমাবেশ’ করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

তাঁরা আর মারামারি, খুনোখুনি, হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট করবেন না। অন্যান্য গ্রামবাসীর ন্যায় শান্তিতে মিলেমিশে বসবাস করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে তাঁদের গ্রামছাড়া করা হবে বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।

শান্তি সমাবেশে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার, পরিদর্শক (তদন্ত) আকিবুল ইসলাম, সদকী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিনহাজুল আবেদীন দ্বীপসহ উভয় পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ৩০ বছর আগে চরপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করেছিলেন তাঁরা। তখন কোনো পক্ষ-বিপক্ষ, আধিপত্য ছিল না।

বর্তমানে গ্রামটিতে শতাধিক পরিবার বাস করছে। সেখানে ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন শ। হঠাৎ ২০২০ সালে গ্রামের শাজাহান আলীর জমির আইল নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে গ্রামটিতে তৈরি হয় পক্ষ-বিপক্ষ। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন গ্রামের দুলাল মিস্ত্রি। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন সাবেক ইউপি সদস্য আনসার আলী।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জমি-সংক্রান্ত ওই বিরোধের জের ধরে ২০২০ সালের ৬ মে দুলাল মিস্ত্রির সমর্থক হুমায়ুন মন্ডলের প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন। তিনি রাতে নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই সাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩৬ জনের নামে একটি মামলা করেন।

সে সময় পাল্টা হামলা ও মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে আনসার আলীর সমর্থকেরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। এ সুযোগে প্রতিপক্ষরা ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে।

হুমায়ুন মন্ডলের হত্যার প্রতিশোধ নিতে গত ১ আগস্ট মামলার ৪ নম্বর আসামি মো. সেলিমকে সড়ক থেকে তুলে বাড়িতে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায়ও মামলা হয়। সেলিমের ভাই শাহীন আলী থানায় ২৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ঘটনা পর থেকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান দুই বছর আগে খুন হওয়া হুমায়ুন মন্ডলের পক্ষের লোকজন। এরপর আসামিদের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটেরও অভিযোগ ওঠে। গ্রামের প্রবেশপথসহ বিভিন্ন স্থানে পাহারা বসায় পুলিশ। সুনসান নীরব হয়ে যায় চরপাড়া গ্রাম।

গত বৃহস্পতিবার চরপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, থমথমে পরিবেশ। বাইরে মানুষের চলাচল নেই বললেই চলে। প্রায় প্রতিটি ঘরবাড়িতেই ভাঙচুরের আলামত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অধিকাংশ বাড়িতেই নেই কোনো মানুষ। কোনো কোনো বাড়িতে নারীরা থাকলেও পুরুষেরা পলাতক রয়েছে। শূন্য ঘরবাড়িতে নেই আসবাবপত্র, দরজা, জানালা। নেই গৃহপালিত পশুপাখিও।

শুধু ঘরবাড়ি ভাঙচুর আর হতাহতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বিরোধ। সর্বশেষ খুনের ঘটনায় আসামিপক্ষের লোকজন বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ায় তাঁদের খেতে নষ্ট হয় পাটসহ নানা সবজি।

এখন উভয় পক্ষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শান্তিতে বসবাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পুলিশ তাঁদের সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনে সহযোগিতা করবে।

 


 আরও পড়ুনঃ

 আরও পড়ুনঃ