ঢাকা ০২:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

রাণীনগরের ভাটকৈ বাজারে সর্বরোগের চিকিৎসক এখন জজ!

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
  • প্রকাশিত সময় ১১:২০:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২
  • / 83

পল্লী চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম জজ নিজ চেম্বারে রোগী দেখছেন।


রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে সর্ব রোগের চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পল্লী চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম ওরফে জজের বিরুদ্ধে। উপজেলার ভাটকৈ বাজারে ঔষধের দোকান খুলে সর্ব রোগের ওই ভুয়া চিকিৎসক প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ জন বিভিন্ন রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।

এদিকে সর্ব রোগের ভুয়া চিকিৎসক জজের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার পর অনেকেই পঙ্গুত্ব এবং বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জীবন যাপন করছেন বলে বেশ কিছু রোগীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হলেও রহস্যজনক কারনে আইনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তার খুঁটির জোর কোথাই বলছেন এলাকার সচেতন মহলের।

এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, বাত ব্যথা, কিডনি রোগ, ক্যান্সার, প্যারালাইজ, ডাযাবেটিস, হৃদরোগ, নাক—কান গলাসহ ভাটকৈ বাজারের দোকানে সর্ব রোগের চিকিৎসা প্রদান করে আসছেন পল্লী চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম জজ। সর্ব রোগের এই ভুয়া চিকিৎসক শুধু রোগী দেখেই পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়াই রোগীদের চিকিৎসা দেন। অধিকাংশ রোগীকেই উচ্চশক্তির অ্যান্টবায়েটিক ব্যাথার ইনজেকশন প্রয়োগ করেন। শুধু তাই না অনেক রোগীকে ষ্টেরয়েড ইনজেকশনও পুশ করেন। এমনকি তিনি যে ঔষধ রোগীদের লিখেনদেন তার দোকানে ছাড়া অন্য দোকানে ওইসব ঔষধ মিলে না। তার বিরুদ্ধে এলাকার স্বাস্থ্য সচেতন লোকজনের অভিযোগের যেন শেষ নেই।

উপজেলার সিংগাহার গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমি ধরাগুডু খেলতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ওই পল্লী চিকিৎসক জজের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে যাই। প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়ে সরাসরি একটি সাদা শিশি থেকে ঔষধ নিয়ে ইনজেকশন পুশ করেন। এরপরে কয়েকদিন ভালো ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই পা ফুলে ওঠে। এরপর নওগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেলে রেফার্ড করেন। পরে রাজশাহী বিকেডিযামে হাসপাতালে দীর্ঘ ৯ মাস চিকিৎসার পরে ঘরে ফিরতে পেরেছি। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারিনি। পল্লী চিকিৎসক জজের ভুল ইনজেকশনের কারণে আমি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।

শফিকপুর গ্রামের মৃত আজিম সরদারের ছেলে আফজাল সরদার বলেন, আমি অসহায় দরিদ্র মানুষ, কাজ করতে গিয়ে কিছুদিন পূর্বে আমার হাঁটুতে ব্যাথা পাই। এরপর ভাটকৈ বাজারে ডাক্তার জজের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে ৩শ’ টাকা নিয়ে আমাকে হাঁটুর গিড়াতে একটি ইনজেকশন করেন। পর পর আমাকে ৮ মাসে ৮টি ইনজেকশন করেন জজ। এখন আমি আর ভালোভাবে হাঁটা—চলা করতে পারি না। ৮ মাসে পল্লী চিকিৎসক জজকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। ডাক্তার জজের কাছে চিকিৎসা নিয়ে এখন আমি পঙ্গত্বের মতন জীবন যাপন করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি বলেন, জজ একজন পল্লী চিকিৎসক। জানামতে সে শুধুমাত্র ছোট—খাটো রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও দোকানে ঔষধ বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু ভাটকৈ বাজারে দোকান খুলে প্রতিনিয়তই জজ পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়াই সর্ব রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষ জানলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।

এ ব্যাপারে পল্লী চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম ওরফে জজের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খান বলেন, পল্লী চিকিৎসক জজ পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়াই বিভিন্ন রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে আসছে বলে আমরা শুনেছি। এছাড়া বেশকিছু রোগীর তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলতে। দ্রুত তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

রাণীনগরের ভাটকৈ বাজারে সর্বরোগের চিকিৎসক এখন জজ!

প্রকাশিত সময় ১১:২০:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে সর্ব রোগের চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পল্লী চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম ওরফে জজের বিরুদ্ধে। উপজেলার ভাটকৈ বাজারে ঔষধের দোকান খুলে সর্ব রোগের ওই ভুয়া চিকিৎসক প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ জন বিভিন্ন রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।

এদিকে সর্ব রোগের ভুয়া চিকিৎসক জজের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার পর অনেকেই পঙ্গুত্ব এবং বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জীবন যাপন করছেন বলে বেশ কিছু রোগীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হলেও রহস্যজনক কারনে আইনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তার খুঁটির জোর কোথাই বলছেন এলাকার সচেতন মহলের।

এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, বাত ব্যথা, কিডনি রোগ, ক্যান্সার, প্যারালাইজ, ডাযাবেটিস, হৃদরোগ, নাক—কান গলাসহ ভাটকৈ বাজারের দোকানে সর্ব রোগের চিকিৎসা প্রদান করে আসছেন পল্লী চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম জজ। সর্ব রোগের এই ভুয়া চিকিৎসক শুধু রোগী দেখেই পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়াই রোগীদের চিকিৎসা দেন। অধিকাংশ রোগীকেই উচ্চশক্তির অ্যান্টবায়েটিক ব্যাথার ইনজেকশন প্রয়োগ করেন। শুধু তাই না অনেক রোগীকে ষ্টেরয়েড ইনজেকশনও পুশ করেন। এমনকি তিনি যে ঔষধ রোগীদের লিখেনদেন তার দোকানে ছাড়া অন্য দোকানে ওইসব ঔষধ মিলে না। তার বিরুদ্ধে এলাকার স্বাস্থ্য সচেতন লোকজনের অভিযোগের যেন শেষ নেই।

উপজেলার সিংগাহার গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমি ধরাগুডু খেলতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ওই পল্লী চিকিৎসক জজের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে যাই। প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়ে সরাসরি একটি সাদা শিশি থেকে ঔষধ নিয়ে ইনজেকশন পুশ করেন। এরপরে কয়েকদিন ভালো ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই পা ফুলে ওঠে। এরপর নওগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেলে রেফার্ড করেন। পরে রাজশাহী বিকেডিযামে হাসপাতালে দীর্ঘ ৯ মাস চিকিৎসার পরে ঘরে ফিরতে পেরেছি। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারিনি। পল্লী চিকিৎসক জজের ভুল ইনজেকশনের কারণে আমি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।

শফিকপুর গ্রামের মৃত আজিম সরদারের ছেলে আফজাল সরদার বলেন, আমি অসহায় দরিদ্র মানুষ, কাজ করতে গিয়ে কিছুদিন পূর্বে আমার হাঁটুতে ব্যাথা পাই। এরপর ভাটকৈ বাজারে ডাক্তার জজের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে ৩শ’ টাকা নিয়ে আমাকে হাঁটুর গিড়াতে একটি ইনজেকশন করেন। পর পর আমাকে ৮ মাসে ৮টি ইনজেকশন করেন জজ। এখন আমি আর ভালোভাবে হাঁটা—চলা করতে পারি না। ৮ মাসে পল্লী চিকিৎসক জজকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। ডাক্তার জজের কাছে চিকিৎসা নিয়ে এখন আমি পঙ্গত্বের মতন জীবন যাপন করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি বলেন, জজ একজন পল্লী চিকিৎসক। জানামতে সে শুধুমাত্র ছোট—খাটো রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও দোকানে ঔষধ বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু ভাটকৈ বাজারে দোকান খুলে প্রতিনিয়তই জজ পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়াই সর্ব রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষ জানলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।

এ ব্যাপারে পল্লী চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম ওরফে জজের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খান বলেন, পল্লী চিকিৎসক জজ পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়াই বিভিন্ন রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে আসছে বলে আমরা শুনেছি। এছাড়া বেশকিছু রোগীর তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলতে। দ্রুত তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।