ঢাকা ১২:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

হাজার টাকায় খুনি ভাড়া করে পরকীয়া প্রেমিকার স্বামীকে হত্যা করালেন প্রবাসী

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৪:৪৪:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জুন ২০২২
  • / 78
নাটোরের বড়াইগ্রাম থানা পুলিশের হাতে আটক রহিম হত্যায় জড়িত তিন খুনি। ছবি: সংগ্রহীত

স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৭ রাত, ১ জুন ২০২২

১০ হাজার টাকায় খুনি ভাড়া করে পরকীয়া প্রেমিকার স্বামীকে হত্যা করালেন প্রবাসী

মালয়েশিয়া প্রবাসী রায়হান তার নিজের ছেলে, চাচাতো ভাই ও ভাড়াটে খুনির মাধ্যমে জমি বন্ধকের টাকা ফেরত চাওয়ায় পরকীয়া প্রেমিকার স্বামীকে হত্যা করিয়েছেন।

হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার নাজিরপুর নতুনপাড়া গ্রামে।

হত্যাকাণ্ডের শিকার মোঃ সোনা মিয়ার ছেলে আব্দুর রহিম (৪৫)। মৃত রহিম কৃষি কাজের পাশাপাশি ব্যাটারী চালিত ভ্যানগাড়ী চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

হত্যাকান্ডে অভিযুক্তরা হলেন, জোলারকান্দি গ্রামস্থ মালেশিয়া প্রবাসী মো: রায়হানের (৪২), তার ছেলে মোঃ লিটন সরকার (১৭), চাচাতো ভাই মোঃ হান্নান সরকার (৪১) ও ভাড়াটে খুনি মোঃ বিপ্লব (৩৫)।

পুলিশ এই হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন ও অভিযুক্তদের মধ্যে হান্নান, লিটন ও বিপ্লবকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।

নাটোর জেলা পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসকল তথ্য জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নাটোর পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা (বিপিএম, পিপিএম-বার) এর সার্বিক দিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে সিংড়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জনাব মোঃ জামিল আকতারের নেতৃত্বে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মতিন এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই (নিঃ) মোঃ আকরামুজ্জামান এর সমন্বয়ে গঠিত পৃথক ০৩ টি টীম তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঘটনাস্থলের অবস্থান দেখে অপরাধীদের সনাক্ত ও বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২৪ মে সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭ টার সময় মৃত রহিম বাড়ী থেকে ব্যাটারী চালিত ভ্যানগাড়ী নিয়ে ভাড়া মারার উদ্দেশ্যে বের হন। কিন্তু যথাসময়ে আব্দুর রহিম বাড়ীতে ফিরে আসে না এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। রহিমের স্ত্রী-পুত্রসহ তার আত্মীয় স্বজনরা আব্দুর রহিমকে খোঁজাখুজি করতে থাকে। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে নাজিরপুর ডিগ্রী কলেজ মোড়ে জনৈক মনির চায়ের দোকানের সামনে আব্দুর রহিম এর ব্যাটারী চালিত ভ্যানগাড়ীটি পাওয়া পায়।

পরের দিন ২৫ মে রাত আনুমানিক ১ টার দিকে মৃত রহিমের খালাতো ভাই আয়নাল গুরুদাসপুর থানার নাজিরপুর গ্রামের জনৈক হাজী মোঃ আবেদ আলীর ভুট্টার জমিতে আব্দুর রহিমের মৃতদেহ দেখতে পান। আয়নাল এবং রহিমের স্ত্রী আব্দুর রহিমের লাশ দেখতে পেয়ে ডাক-চিৎকার করলে আশে-পাশে থাকা লোকজন রহিমের লাশের সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

উক্ত সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে শুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিছু ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

পরবর্তীতে পিবিআই নাটোর ও ক্রাইমসিন ইউনিট ম্যানেজমেন্ট সিরাজগঞ্জ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃত আব্দুর রহিমের শারিরীক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আলামত জব্দ করেন।

মৃত আব্দুর রহিমের ভাই মোঃ আব্দুর রহমান থানায় অজ্ঞাতানামা আসামী/আসামীদের বিরুদ্ধে তার ভাই আব্দুর রহিমকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে লিখিতভাবে এজাহার দায়ের করেন।

এইরূপ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সূত্রোক্ত মামলাটি (মামলা নং-২৭) রুজু করেন। এবং এস আই (নিঃ) মোঃ আকরামুজ্জামানের উপর তদন্তভার অর্পণ করেন।

তথ্য প্রযুক্তিসহ সোর্সের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩০ মে সকাল সাড়ে ৬টার সময় নাজিরপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর হতে আসামী মোঃ বিপ্লব (৩৫)-কে গ্রেফতার করা হয়।

ধৃত আসামী মোঃ বিপ্লব (৩৫)-কে থানায় আনার পর জিজ্ঞাসাবাদে সে জানা যায় যে, হান্নান সরকার, লিটন সরকার ও বিপ্লব গুরুদাসপুর থানাধীন জোলারকান্দি গ্রামস্থ মালেশিয়া প্রবাসী মোঃ রায়হানের (৪২) নির্দেশে ভ্যানচালক আব্দুর রহিমকে ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

ঘটনার পূর্বাপর
মৃত রহিম এবং প্রবাসী মো: রায়হানের পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, সেই সুবাদে মৃত রহিমের স্ত্রীর সাথে প্রবাসী রায়হানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মালেশিয়া প্রবাসী রায়হান বিদেশ গমনের ৫ বছর পূর্বে গুরুদাসপুর থানার গোপিনাথপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত জজ মোঃ আব্দুল মজিদের নিকট হতে ৭ বিঘা জমি লীজ নেয় এবং লীজকৃত জমি পুনরায় রহিমসহ ৪ জনের নিকট টাকার বিনিময়ে সাবলীজ দেয়। রহিম ২ লাখ টাকার বিনিময়ে রায়হানের নিকট হতে ২ বিঘা জমি সাবলীজ নেয়।

এরপর রায়হান ২০১৭ সালে মালেশিয়া চলে যায়। রায়হান মালেশিয়া চলে গেলে অবসরপ্রাপ্ত জজ মোঃ আব্দুল মজিদ রায়হানকে দেওয়া ৭ বিঘা জমি লীজের টাকা দিতে বিলম্ব হচ্ছে দেখে, রায়হান যাদের নিকট জজ সাহেবের জমি বন্ধক রেখেছে তাদেরকে জমি ফেরত দেওয়ার কথা বলতেন। তাই রায়হান বাধ্য হয়েই অবসরপ্রাপ্ত জজ আব্দুল মজিদকে যথাসময়ে টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়।

অপরদিকে রহিম প্রবাসী রায়হানকে জমি বন্ধক রাখার সময় প্রদানকৃত ২ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বলতো। একদিকে রহিমের স্ত্রীর সাথে প্রবাসী রায়হানের ঘনিষ্ঠতা, অন্যদিকে বারংবার টাকা চাওয়ার জন্য রহিম প্রবাসী রায়হানের প্রধান শত্রুতে পরিণত হয়। রায়হানের ক্ষোভ দিন দিন বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মালেশিয়ায় অবস্থান করেই রহিমকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে।

সেই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে প্রবাসী রায়হান তার চাচাতো ভাই হান্নান সরকারের সাথে অনুমান চার মাস ধরে রহিমকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে থাকে।

প্রবাসী রায়হান এই হত্যা-পরিকল্পনার কথা নিজের ছেলে লিটন সরকার (১৭)-কেও জানায় এবং রহিমকে হত্যার জন্য চাচাতো ভাই হান্নান ও ছেলে লিটনকে নির্দেশ দেয়। প্রয়োজনে রহিমকে হত্যার কাজে ভাড়াটে খুনি জোগাড় করতে বলে।

রায়হানের কথামত হান্নান এবং লিটন দুজনে মিলে ভ্যানচালক রহিমকে হত্যার জন্য ১০ হাজার টাকা ঠিকায় ভাড়াটে খুনি হিসাবে বিপ্লবের সঙ্গে কথা ফাইনাল করে।

কীভাবে হত্যা
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ভ্যান চালক রহিম গুরুদাসপুর থানার নাজিরপুর ডিগ্রী কলেজ মোড়ে মনির চা স্টলের সামনে ভ্যানে তালা দিয়ে চা পানরত থাকাকালীন পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হান্নান, লিটন ও ভাড়াটিয়া খুনি বিপ্লব তিনজনে মিলে ‘নাটোর থেকে একজন সুন্দরী পতিতা মেয়েকে এনেছে’ একথা বলে রহিমকে আবেদ হাজীর ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে যায়।

সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে হান্নান রহিমকে পিছন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় এবং তার পা চেপে ধরে, রহিমের হাত ধরে থাকে বিপ্লব এবং লিটন হোন্ডার ক্লাচের তার রহিমের গলায় পেঁচিয়ে রহিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রবাসী রায়হানকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায় হান্নান। অতঃপর খুনিরা নিজ নিজ বাড়ীতে চলে যায়।

ভ্যানচালক রহিমকে হত্যায় অংশগ্রহণকারী ভাড়াটে খুনি মোঃ বিপ্লব (৩৫)-কে গ্রেফতারপূর্বক ৩০ মে তারিখে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান করে।

 

 আরও পড়ুনঃ

 আরও পড়ুনঃ

হাজার টাকায় খুনি ভাড়া করে পরকীয়া প্রেমিকার স্বামীকে হত্যা করালেন প্রবাসী

প্রকাশিত সময় ০৪:৪৪:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জুন ২০২২
নাটোরের বড়াইগ্রাম থানা পুলিশের হাতে আটক রহিম হত্যায় জড়িত তিন খুনি। ছবি: সংগ্রহীত

স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৭ রাত, ১ জুন ২০২২

১০ হাজার টাকায় খুনি ভাড়া করে পরকীয়া প্রেমিকার স্বামীকে হত্যা করালেন প্রবাসী

মালয়েশিয়া প্রবাসী রায়হান তার নিজের ছেলে, চাচাতো ভাই ও ভাড়াটে খুনির মাধ্যমে জমি বন্ধকের টাকা ফেরত চাওয়ায় পরকীয়া প্রেমিকার স্বামীকে হত্যা করিয়েছেন।

হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার নাজিরপুর নতুনপাড়া গ্রামে।

হত্যাকাণ্ডের শিকার মোঃ সোনা মিয়ার ছেলে আব্দুর রহিম (৪৫)। মৃত রহিম কৃষি কাজের পাশাপাশি ব্যাটারী চালিত ভ্যানগাড়ী চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

হত্যাকান্ডে অভিযুক্তরা হলেন, জোলারকান্দি গ্রামস্থ মালেশিয়া প্রবাসী মো: রায়হানের (৪২), তার ছেলে মোঃ লিটন সরকার (১৭), চাচাতো ভাই মোঃ হান্নান সরকার (৪১) ও ভাড়াটে খুনি মোঃ বিপ্লব (৩৫)।

পুলিশ এই হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন ও অভিযুক্তদের মধ্যে হান্নান, লিটন ও বিপ্লবকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।

নাটোর জেলা পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসকল তথ্য জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নাটোর পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা (বিপিএম, পিপিএম-বার) এর সার্বিক দিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে সিংড়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জনাব মোঃ জামিল আকতারের নেতৃত্বে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মতিন এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই (নিঃ) মোঃ আকরামুজ্জামান এর সমন্বয়ে গঠিত পৃথক ০৩ টি টীম তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঘটনাস্থলের অবস্থান দেখে অপরাধীদের সনাক্ত ও বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২৪ মে সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭ টার সময় মৃত রহিম বাড়ী থেকে ব্যাটারী চালিত ভ্যানগাড়ী নিয়ে ভাড়া মারার উদ্দেশ্যে বের হন। কিন্তু যথাসময়ে আব্দুর রহিম বাড়ীতে ফিরে আসে না এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। রহিমের স্ত্রী-পুত্রসহ তার আত্মীয় স্বজনরা আব্দুর রহিমকে খোঁজাখুজি করতে থাকে। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে নাজিরপুর ডিগ্রী কলেজ মোড়ে জনৈক মনির চায়ের দোকানের সামনে আব্দুর রহিম এর ব্যাটারী চালিত ভ্যানগাড়ীটি পাওয়া পায়।

পরের দিন ২৫ মে রাত আনুমানিক ১ টার দিকে মৃত রহিমের খালাতো ভাই আয়নাল গুরুদাসপুর থানার নাজিরপুর গ্রামের জনৈক হাজী মোঃ আবেদ আলীর ভুট্টার জমিতে আব্দুর রহিমের মৃতদেহ দেখতে পান। আয়নাল এবং রহিমের স্ত্রী আব্দুর রহিমের লাশ দেখতে পেয়ে ডাক-চিৎকার করলে আশে-পাশে থাকা লোকজন রহিমের লাশের সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

উক্ত সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে শুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিছু ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

পরবর্তীতে পিবিআই নাটোর ও ক্রাইমসিন ইউনিট ম্যানেজমেন্ট সিরাজগঞ্জ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃত আব্দুর রহিমের শারিরীক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আলামত জব্দ করেন।

মৃত আব্দুর রহিমের ভাই মোঃ আব্দুর রহমান থানায় অজ্ঞাতানামা আসামী/আসামীদের বিরুদ্ধে তার ভাই আব্দুর রহিমকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে লিখিতভাবে এজাহার দায়ের করেন।

এইরূপ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সূত্রোক্ত মামলাটি (মামলা নং-২৭) রুজু করেন। এবং এস আই (নিঃ) মোঃ আকরামুজ্জামানের উপর তদন্তভার অর্পণ করেন।

তথ্য প্রযুক্তিসহ সোর্সের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩০ মে সকাল সাড়ে ৬টার সময় নাজিরপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর হতে আসামী মোঃ বিপ্লব (৩৫)-কে গ্রেফতার করা হয়।

ধৃত আসামী মোঃ বিপ্লব (৩৫)-কে থানায় আনার পর জিজ্ঞাসাবাদে সে জানা যায় যে, হান্নান সরকার, লিটন সরকার ও বিপ্লব গুরুদাসপুর থানাধীন জোলারকান্দি গ্রামস্থ মালেশিয়া প্রবাসী মোঃ রায়হানের (৪২) নির্দেশে ভ্যানচালক আব্দুর রহিমকে ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

ঘটনার পূর্বাপর
মৃত রহিম এবং প্রবাসী মো: রায়হানের পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, সেই সুবাদে মৃত রহিমের স্ত্রীর সাথে প্রবাসী রায়হানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মালেশিয়া প্রবাসী রায়হান বিদেশ গমনের ৫ বছর পূর্বে গুরুদাসপুর থানার গোপিনাথপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত জজ মোঃ আব্দুল মজিদের নিকট হতে ৭ বিঘা জমি লীজ নেয় এবং লীজকৃত জমি পুনরায় রহিমসহ ৪ জনের নিকট টাকার বিনিময়ে সাবলীজ দেয়। রহিম ২ লাখ টাকার বিনিময়ে রায়হানের নিকট হতে ২ বিঘা জমি সাবলীজ নেয়।

এরপর রায়হান ২০১৭ সালে মালেশিয়া চলে যায়। রায়হান মালেশিয়া চলে গেলে অবসরপ্রাপ্ত জজ মোঃ আব্দুল মজিদ রায়হানকে দেওয়া ৭ বিঘা জমি লীজের টাকা দিতে বিলম্ব হচ্ছে দেখে, রায়হান যাদের নিকট জজ সাহেবের জমি বন্ধক রেখেছে তাদেরকে জমি ফেরত দেওয়ার কথা বলতেন। তাই রায়হান বাধ্য হয়েই অবসরপ্রাপ্ত জজ আব্দুল মজিদকে যথাসময়ে টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়।

অপরদিকে রহিম প্রবাসী রায়হানকে জমি বন্ধক রাখার সময় প্রদানকৃত ২ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বলতো। একদিকে রহিমের স্ত্রীর সাথে প্রবাসী রায়হানের ঘনিষ্ঠতা, অন্যদিকে বারংবার টাকা চাওয়ার জন্য রহিম প্রবাসী রায়হানের প্রধান শত্রুতে পরিণত হয়। রায়হানের ক্ষোভ দিন দিন বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মালেশিয়ায় অবস্থান করেই রহিমকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে।

সেই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে প্রবাসী রায়হান তার চাচাতো ভাই হান্নান সরকারের সাথে অনুমান চার মাস ধরে রহিমকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে থাকে।

প্রবাসী রায়হান এই হত্যা-পরিকল্পনার কথা নিজের ছেলে লিটন সরকার (১৭)-কেও জানায় এবং রহিমকে হত্যার জন্য চাচাতো ভাই হান্নান ও ছেলে লিটনকে নির্দেশ দেয়। প্রয়োজনে রহিমকে হত্যার কাজে ভাড়াটে খুনি জোগাড় করতে বলে।

রায়হানের কথামত হান্নান এবং লিটন দুজনে মিলে ভ্যানচালক রহিমকে হত্যার জন্য ১০ হাজার টাকা ঠিকায় ভাড়াটে খুনি হিসাবে বিপ্লবের সঙ্গে কথা ফাইনাল করে।

কীভাবে হত্যা
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ভ্যান চালক রহিম গুরুদাসপুর থানার নাজিরপুর ডিগ্রী কলেজ মোড়ে মনির চা স্টলের সামনে ভ্যানে তালা দিয়ে চা পানরত থাকাকালীন পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হান্নান, লিটন ও ভাড়াটিয়া খুনি বিপ্লব তিনজনে মিলে ‘নাটোর থেকে একজন সুন্দরী পতিতা মেয়েকে এনেছে’ একথা বলে রহিমকে আবেদ হাজীর ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে যায়।

সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে হান্নান রহিমকে পিছন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় এবং তার পা চেপে ধরে, রহিমের হাত ধরে থাকে বিপ্লব এবং লিটন হোন্ডার ক্লাচের তার রহিমের গলায় পেঁচিয়ে রহিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রবাসী রায়হানকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায় হান্নান। অতঃপর খুনিরা নিজ নিজ বাড়ীতে চলে যায়।

ভ্যানচালক রহিমকে হত্যায় অংশগ্রহণকারী ভাড়াটে খুনি মোঃ বিপ্লব (৩৫)-কে গ্রেফতারপূর্বক ৩০ মে তারিখে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান করে।

 

 আরও পড়ুনঃ

 আরও পড়ুনঃ